বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশ্বকাপের আগে নিজ দেশের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ

সবশেষ ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপে নিরাপত্তা কিংবা চোখ ধাঁধানো আয়োজন দিয়ে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়েছে কাতার। এবার যুক্তরাষ্ট্রের দরজায় কড়া নাড়ছে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ।

ছবি: সংগৃহীত

স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের আর মাত্র এক বছর বাকি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ফুটবল আসর আয়োজন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো। তবে আয়োজনের মূল দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি শহরে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ম্যাচ। আয়োজক শহরগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬২৫ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সংক্রান্ত সাম্প্রতিক এক বৈঠকে উঠে এসেছে, এখনো কোনো শহরই পায়নি প্রয়োজনীয় সেই অর্থ, এমনকি নেই কোনো সুস্পষ্ট নিরাপত্তা পরিকল্পনাও।

সবশেষ ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপে নিরাপত্তা কিংবা চোখ ধাঁধানো আয়োজন দিয়ে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়েছে কাতার। এবার যুক্তরাষ্ট্রের দরজায় কড়া নাড়ছে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। ২০২৮ সালের অলিম্পিকও হবে সে দেশে। তবে এই উৎসবে আগে লুকিয়ে আছে বড় প্রশ্ন, কতটা প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র? নিরাপত্তাও বা কেমন হবে?

গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে কানসাসে সুপার বোল রাগবি টুর্নামেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ জন ,আহত হয়েছিলেন ২৪ জন। বোস্টনে ২০১৩ সালে এক ম্যারাথনেও হয়েছিলো বোমা হামলা। তাই বিশ্বকাপ সামনে রেখে অনেক আগ থেকেই নিরাপত্তা নিয়ে প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, এখনো বরাদ্দ না পাওয়ায় ক্ষোভ তাদের।

কানসাস রাজ্যের পুলিশ প্রধান গ্রেভস জানান, ‘‘আমাদের শহরে ৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। প্রস্তুতির সময় দিন দিন কমে আসছে। ২০২৪ সালের রাগবি টুর্নামেন্টে আমাদের শহরে সন্ত্রাসী হামলায় একজন নিহত এবং ২৪ জন আহত হন। এমন ঘটনা যদি বিশ্বকাপে ঘটে, তাহলে দায় কে নেবে?’’

বোস্টন রাজ্যের সাবেক পুলিশ কমিশনার এডওয়ার্ড ডেভিস বলেছেন, ‘২০১৩ সালের ম্যারাথনে সেই বোমা হামলা আমাদের শেখায় আমরা সব সময় ঝুঁকির মধ্যেই আছি। বিশেষ করে বিশ্বকাপের মতো বড় আয়োজন মানেই নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া। এই মুহূর্তে প্রস্তুতির অভাব আমাদের উদ্বিগ্ন করছে।’

তবে নিরাপত্তা হুমকি শুধু স্থলপথেই সীমাবদ্ধ নয়, আকাশপথেও দেখা দিয়েছে বড় উদ্বেগ। বিশেষ করে ড্রোন অনুপ্রবেশ এখন সবচেয়ে বড় আশঙ্কার নাম। তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের রাগবি টুর্নামেন্টে ২৮০০ ড্রোন অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু রাজ্য পুলিশ তা প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়।

এই পরিস্থিতিতে ড্রোন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ও নিরাপত্তা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ‘ডিফেন্স অ্যাক্ট’ চালুর পরিকল্পনা করছে। আইনটি পাস হলে পুলিশ ড্রোন প্রতিরোধী প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ পাবে। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হতে আর এক বছরেরও কম সময় বাকি, এখনো পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে বিশাল ফাঁক রয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বকাপ শুধু একটি ক্রীড়া উৎসব নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা সক্ষমতার আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ বিশ্বজুড়ে লাখো ভক্ত বিশ্বকাপ দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটে আসবেন। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থেকে মুক্তি দিতে হলে এখনই বরাদ্দ ছাড় ও প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে—এমনটাই বলছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

বাংলাফ্লো/এসও

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0