Logo

গাজার ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের

রেডক্রস আরও জানায়, অধিকাংশের শরীরে গুলি বা বোমার স্প্লিন্টার বিদ্ধ ছিল। ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সব রোগীই বলেছে তারা একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।

ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ঢাকা: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফায় একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ফিলিস্তিনিদের হত্যার ঘটনায় স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলাকে দায়ী করেছে। তবে ইসরায়েল তা অস্বীকার করেছে।

ওই হামলার প্রতিবেদন নিয়ে মতবিরোধের জেরে সোমবার (২ জুন) এক বিবৃতিতে সঠিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাফার একটি ত্রাণকেন্দ্রে খাবারের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় তারা গুলির মুখে পড়েন। এই কেন্দ্রটি পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)।

বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘আমি গাজায় সাহায্য নেওয়ার চেষ্টাকারী ফিলিস্তিনিদের নিহত ও আহত হওয়ার খবরে স্তম্ভিত। আমি অবিলম্বে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানাই এবং দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানাই।’

রেডক্রস জানিয়েছে, তাদের হাসপাতালে ১৭৯ জন আহত অবস্থায় আসে, যাদের মধ্যে ২১ জন মারা গেছেন। হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা মৃতের সংখ্যা ৩১ বলে জানিয়েছে।

রেডক্রস আরও জানায়, অধিকাংশের শরীরে গুলি বা বোমার স্প্লিন্টার বিদ্ধ ছিল। ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। সব রোগীই বলেছে তারা একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ঘটনাস্থলের কাছে বা ভেতরে কোনও বেসামরিক নাগরিকের দিকে গুলি চালায়নি এবং এ ধরনের প্রতিবেদনগুলো মিথ্যা।

জিএইচএফ জানিয়েছে, এসব প্রতিবেদন ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ এবং তারা এখনও পর্যন্ত কোনও হামলার প্রমাণ দেখেনি।

ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোকে গাজায় প্রবেশ করতে দেয় না। যার ফলে সেখানে কি ঘটছে তা যাচাই করা কঠিন।

ডাক্তারদের আন্তর্জাতিক সংস্থা এমএসএফ জানিয়েছে, খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে তাদের টিম অনেক গুরুতর আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিয়েছে, যাদের কেউ কেউ আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছিল।

তারা আরও জানায়, ‘রোগীরা জানায় তাদের ওপর ইসরায়েলি ড্রোন, হেলিকপ্টার, নৌকা, ট্যাংক ও সেনাদের দিক থেকে চারদিক থেকে গুলি চালানো হয়েছিল।’ এমএসএফের এক কর্মীর ভাইও ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টা করার সময় নিহত হন।’

রাফায় এক সাংবাদিক জানান, জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে আল-আলাম রাউন্ডআবাউটে ফিলিস্তিনিরা জড়ো হয়েছিলেন। তখন ইসরায়েলি ট্যাংক এসে গুলি চালায়।

অনলাইনে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ফিলিস্তিনিরা খোলা বালুময় জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন, আর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে ভিডিওটি যাচাই করতে পারেনি বিবিসি।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) আরেকটি ড্রোন ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যাচ্ছে সশস্ত্র লোকজন ত্রাণ নিতে যাওয়া নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে বলে দাবি করা হয়। তবে ভিডিওটির স্থান বা সময় যাচাই করা যায় নি।

এদিকে সোমবার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রাফার তাল আল-সুলতান এলাকায় একই জিএইচএফ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি গুলিতে আরও তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

রেড ক্রসের এক মুখপাত্র অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, তাদের ফিল্ড হাসপাতালে ৫০ জন আহতকে আনা হয়েছিল, যাদের অধিকাংশের শরীরে গুলি বা স্প্লিন্টার লেগেছিল। এদের মধ্যে দুইজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। খান ইউনুসের নাসের হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা আরও একটি মৃতদেহ পেয়েছে।

এক ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, জিএইচএফ কেন্দ্র খোলার আগে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সেনাদের দিকে এগিয়ে আসা কিছু সন্দেহভাজনকে প্রতিরোধ করতে সতর্কতামূলক গুলি ছোড়া হয়েছিল। এই ঘটনার সাথে আইডিএফের বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা অভিযোগগুলোর কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা ।

 সূত্র: বিবিসি

বাংলাফ্লো/আফি

Leave a Comment

Comments 0