বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভিকটিম-সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তাদের হুমকি, বিচার বাধাগ্রস্ত করার শামিল

শনিবার (৯ আগস্ট) রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি প্রসিকিউশন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ রায়ের অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সমকালকে নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।

ফাইল ছবি

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি,

ঢাকা: আদালত অবমাননায় দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছয় মাসের সাজার পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যবেক্ষণ এসেছে। এতে ভিকটিম, সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া বিচার বাধাগ্রস্ত করার শামিল বলে রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

শনিবার (৯ আগস্ট) রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি প্রসিকিউশন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ রায়ের অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সমকালকে নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম। তিনি বলেন, স্বল্প পৃষ্ঠার রায়টি গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে।

এর আগে আদালত অবমাননার দায়ে গত ২ জুলাই শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুলকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন।

ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা, মামলার বাদী, সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দেওয়ায় ট্রাইব্যুনাল আইনে এ সাজা দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণের পর বা তারা যে দিন গ্রেপ্তার হবেন সেদিন থেকে এ সাজা কার্যকর হবে। এই প্রথম কোনো মামলায় শেখ হাসিনাকে সাজা দিলেন আদালত।

গত বছর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ট্রাইব্যুনালে এটাই প্রথম সাজার রায়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আসামি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়েছি’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বক্তব্যে প্রকাশের পর তিনি অস্বীকার করেন নাই বা তার দলের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বক্তব্যে বা বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তার ওই বক্তব্যে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, তার ওই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিচারকাজে যারা জড়িত তাদের চরম পরিণতির হুমকি দেওয়া হয়েছে। এতে করে মামলার বাদী, বিবাদি, সাক্ষী, তদন্ত কর্মকর্তাদের মনে ভীতি সঞ্চার হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, পুরো বিচার ব্যবস্থাকে একটা হুমকির মুখে রাখা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও শাকিলের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। অ্যামিক্যাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর তানভীর জোহা।

ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সঙ্গে গাইবান্ধার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলের কথিত ফোনালাপ গত বছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়। অডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে গোবিন্দগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই আমি ২২৭ জনকে হত্যা করার লাইসেন্স পেয়েছি।’ আলাপের একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে মামলা করেন চিফ প্রসিকিউটর। পরে সিআইডি পুলিশ তদন্ত করে ওই কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা জানায়।

বাংলাফ্লো/এনআর

Leave a Comment

Comments 0