বাংলাফ্লো প্রতিনিধি,
ঢাকা: সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য জনগণ এত বেশি উদ্গ্রীব ও উম্মুখ হয়ে আছে যে, এবার জাতীয় নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে জনগণ বলে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, নির্বাচনে অনিয়মের চেষ্টা করা হলে তা রুখতে পাহারাদার হিসেবে কাজ করবে তারা।
সোমবার (৬ অক্টোবর) ‘আগামী নির্বাচন গুণমানসম্পন্ন ও সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নাগরিক যুব ঐক্যের আয়োজনে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান সকাল ১০টায় শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা ১টায়।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গুণগত মানসম্মত নির্বাচন পেতে হলে এর সাবজেক্ট বা অবজেক্ট হবে জনগণ, ভোটার, নির্বাচন কমিশন, পলিটিক্যাল পার্টিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বর্তমান পুলিশের যে অবস্থা, সবাই সন্দেহ করে তাদের দিয়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করা সম্ভব হবে কি না। কারণ, পুলিশ বাহিনীর সেই মডেলটা আগের জায়গায় ফিরে আসেনি। কিন্তু পুলিশের সহায়তার জন্য এক লক্ষাধিক সেনাবাহিনী কাজ করবে, তা ইতিমধ্যে সরকার প্রকাশ করেছে, তাদের প্রশিক্ষণ চলছে।
তিনি বলেন, এর বাইরে সহযোগী বাহিনী হিসেবে আনসার-ভিডিপিসহ অন্যান্য বাহিনীকে সরকার থেকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এবার নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হবে গৌণ, মুখ্য ভূমিকা পালন করবে জনগণ। সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য জনগণ এবার এত বেশি উদ্গ্রীব ও উম্মুখ হয়ে আছে যে, তারাই মূল ভূমিকা পালন করবে। এখানে (নির্বাচনে) কেউ অনিয়ম করার চেষ্টা করলে জনগণ বাধা বা পাহারা দেবে।
গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই সময়ে হওয়া নিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও গণতান্ত্রিক বিজয়ে জাতীয় নির্বাচন একই সময়ে হওয়ার বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে এসেছে। জনগণের কাছে যদি সম্মতি নেওয়া যায় যে আমরা রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছি, অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি—জনগণ তার পক্ষে আছে কি না, তখনই হবে জনগণের পক্ষ থেকে এই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটা চূড়ান্ত অভিমত। এ ছাড়া যদি একই ব্যালট বাক্সে, একই পোলিং ও প্রিসাইডিং অফিসারে, একই সময় জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে, তাহলে নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার যেকোনো প্রয়াসকে আমরা অ্যাভয়েড (এড়ানো) করতে পারব।’
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কেউ কেউ আগের জায়গায় ফিরে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজনের কথা বলছে। আবার যারা পিআর পিআর করে জনগণকে বা দেশকে অস্থিতিশীলের দিকে নিয়ে যায়, এটাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ। বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি, রাস্তায় আন্দোলনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি ও বিভিন্ন কায়দা-কানুনের মধ্য দিয়ে যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, এটাই চ্যালেঞ্জ। এগুলো আমাদের পরিহার করা দরকার, তাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীল সরকার পেতে পারি।’
ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে না হয়, সে জন্য ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে না হয়, সে জন্য ষড়যন্ত্র তো করবেই। আমরা যদি ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির বিপক্ষে ঐক্য থাকি বা সমুন্নত রাখি এবং গণতন্ত্রের শক্তিকে সম্মান করি, ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদ উৎপাট বা উৎপত্তি হবে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ এলে সমস্ত জাতি একসঙ্গে মোকাবিলা করবে।’ এ সময় ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর রাজনৈতিক দলের বিচারিক ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
নির্বাহী বিভাগের আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নিয়ে সমালোচনা করেন বিএনপির এ নেতা। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রথা ভবিষ্যতের জন্য হবে ভয়ংকর। জামায়াতে ইসলামীকে একইভাবে নিষিদ্ধ করেছিল। বিএনপি সর্বপ্রথম তার প্রতিবাদ করেছে। এখন যারা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার কথা বলছেন, আমরা এখনো বলছি, এই চর্চা আমরা কখনোই মেনে নেব না।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ অথবা গণহত্যার মতো অপরাধে জড়িত থাকলে সংশোধিত আইনে অভিযোগ গ্রহণ করে বিচার করা যায়, সেটা আদালত নির্ধারণ করবেন। জনগণ তো ৫ আগস্টে জানিয়েই দিয়েছে—এ দেশে ফ্যাসিবাদের স্থান নেই। সেদিন ফ্যাসিবাদের অপসারণ হয়েছে ও মৃত্যু হয়েছে।’
নাগরিক যুব ঐক্যের সমন্বয়কারী ফারুক হোসেন খানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়ছার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সদস্য দেলোয়ার হোসেন রাজা, জেএসডির সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0