বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আরাকান আর্মি জেলেদের জিম্মি রাখার যে কারণ জানা যাচ্ছে

জিম্মিদের খবর জানতে চাওয়া হলে, টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন বলেছে ৫৮ জন এবং স্থানীয় ট্রলার মালিক সমিতি ৫৭ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও বিজিবির পক্ষ থেকে অপহৃতদের সংখ্যা ৫১ বলা হচ্ছে জন।

ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রতিনিধি,

কক্সবাজার: কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর মোহনায় মাছ ধরতে গিয়ে ফেরার পথে ট্রলারসহ অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি জেলেদের আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে জিম্মি রাখার ঘটনা বেড়েই চলছে।

এখনও পর্যন্ত মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির কাছে কতজন বাংলাদেশি মাঝিমাল্লা জিম্মি আছেন, সেই সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

জিম্মিদের বিষয়ে খবর জানতে চাওয়া হলে, টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন বলেন ৫৮ জন এবং স্থানীয় ট্রলার মালিক সমিতি ৫৭ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা বললেও বিজিবির পক্ষ থেকে অপহৃতদের সংখ্যা ৫১ বলা হচ্ছে জন।

এদিকে ধরে নিয়ে যাওয়া মাঝি-মাল্লাদের ফেরত আনার বিষয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে ‘অনানুষ্ঠানিক’ যোগাযোগও চলছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।

বিজিবির রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন পর্যন্ত ৫১ জন জেলে জিম্মি থাকার তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। সেখানে বাংলাদেশিদের সঙ্গে রোহিঙ্গাও আছেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “আমাদের কাছে ৫৮ জন মাঝি-মাল্লা জিম্মি থাকার তথ্য রয়েছে। এটি চলতি বছরের ৫ অগাস্ট থেকে এখন পর্যন্ত জিম্মি থাকার তথ্য। যাদের কেউ ফিরে এসেছেন বা ছেড়ে দিয়েছে এমন তথ্য নেই।”

আর শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট বোট মালিক সমিতির সভাপতি গফুর আলম বলেন, ৫৭ জন মাঝিমাল্লা এখনো আরাকান আর্মির হাতে ‘বন্দি’ আছেন। যেখানে তার মালিকানাধীন একটি ট্রলারের ১২ জন মাঝি-মাল্লাও আছেন।

এর মধ্যে ২৩ অগাস্ট থেকে ২৬ অগাস্ট টানা চার দিনে আরাকান আর্মি ছয়টি ট্রলারসহ ৪৪ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া ঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম।

তবে অপহরণের এই ঘটনায় রয়েছে দুই ধরনের বক্তব্য-

স্থানীয় মাঝিমাল্লারা ‘অপহৃত’ হননি দাবি করে বিজিবির মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “মূলত জেলেরা শূন্য রেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে পড়ায় আরাকান আর্মি তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।”

তবে বোট মালিকদের দাবি, আরাকান আর্মির সদস্যরা স্পিডবোটে করে এসে বাংলাদেশের সীমানা থেকে জেলেদের নিয়ে যাচ্ছে। লুট করা হচ্ছে লাখ টাকার মাছ জালসহ ট্রলার।

বোট মালিক মো. সুলতান বলেন, “২০ অগাস্ট সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিল আমার ‘এফ-বি ওসমান’ ট্রলার। ২৩ তারিখ মাছ নিয়ে ফেরার পথে আরাকান আর্মির স্পিডবোট তাড়া করে সবাইকে নিয়ে গেছে।”

এতে জেলেরা ছাড়াও তার প্রায় ৩০ লাখ টাকার মত সম্পদ আরাকান আর্মির হাতে জিম্মি রয়েছে বলে দাবি সুলতানের।

বোট মালিক সমিতির সভাপতি গফুর আলম বলেন, “নাফ নদীর যে অংশটা থেকে বারবার জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেখানে চাইলে কোস্ট গার্ডের অবস্থান বাড়ানো যায়। ওই জায়গায় একটা ডুবোচর রয়েছে, যার কারণে একটু মিয়ানমার ঘেঁষে আসতে হয়, না হয় ট্রলার চরে আটকে যায়। কিন্তু চর থাকলেও আগে এতো বিপত্তি ছিল না।”

মঙ্গলবার দুপুরে আরাকান আর্মি গফুর আলমের ট্রলারও নিয়ে গেছে। সেখানে ১২ জন মাঝি-মাল্লা থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি।

গফুর আলম বলেন, “মাছ ধরে ফেরার সময় আমার বোটে প্রায় চার লাখ টাকার মাছ থাকার কথা জানিয়েছিল জেলেরা। ওরা (আরাকান আর্মি) মূলত লুট করার জন্যই এসব করছে।”

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নাফ নদীর মোহনাসংলগ্ন কয়েকটি এলাকায় ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে কোনো কোনো সময় জলসীমার মিয়ানমার অভ্যন্তর দিয়ে চলাচল করতে হয়।

“এ ছাড়া জেলেরা অনেক সময় ভুলবশত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েন। এতে আরাকান আর্মির হাতে বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।”

বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা মিয়ানমারের পুরো সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে আরাকান আর্মির হাতে জানিয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ ও সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

“এ কারণে সীমান্তে আরাকান আর্মির তৎপরতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নাফ নদী ও সাগর মোহনায় জলসীমার শূন্য রেখা অতিক্রম করা জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।”

ধরে নিয়ে যাওয়া মাঝি-মাল্লাদের ফেরত আনার বিষয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে ‘আনঅফিসিয়ালি’ যোগাযোগ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সীমান্তে নন-ফ্যাক্টর গোষ্ঠী হলেও তাদের সঙ্গে বিজিবির আনঅফিসিয়াল যোগাযোগ রয়েছে।

“জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আলাপ হচ্ছে। আমরা তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছি, যেন আর কোনো জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া না হয়।”

জেলেদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন।

বাংলাফ্লো/এনআর

Leave a Comment

Comments 0