বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: দলীয় বিভাজন ও অস্থিরতা কাটিয়ে ঐক্যের বার্তা নিয়ে জাতীয় পার্টি শনিবার দশম জাতীয় কাউন্সিলের আয়োজন করতে যাচ্ছে। দলের নেতারা বলছেন, এটি হবে একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন, যেখানে গণতন্ত্র ও যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নবযাত্রা শুরু করবে জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, শনিবার জাতীয় পার্টির সম্মেলন হবে ঐতিহাসিক। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের বিভেদ মিটিয়ে বৃহত্তর ঐক্য করে দলের নবযাত্রা শুরু হবে। কাউন্সিলে সারা দেশ থেকে জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটস অংশ নেবেন। শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অনেকে বলছেন, এই দল আলাদা হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আগামীকাল (শনিবার) সম্মেলন হবে। পল্লীবন্ধু এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টির এটি দশম জাতীয় কাউন্সিল, যার নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নম্বর ১২। আদালতের আদেশ ও গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই কাউন্সিল আয়োজন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অবহিত করেছি। কাউন্সিলে তাদের প্রতিনিধি আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
আনিসুল ইসলাম আরও বলেন, এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই। কাউন্সিলের পরে গঠনতন্ত্রের বিতর্কিত ধারা বাতিল করে দেব। কোনো একক নেতৃত্বে নয়, জাতীয় পার্টি চলবে যৌথ নেতৃত্বে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, শনিবার গুলশান-১ এর ইমানুয়েল পার্টি সেন্টারে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ জুলাই ঢাকার একটি নিম্ন আদালতের আদেশে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। আদালতের এই আদেশের ফলে পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম অনিশ্চয়তা ও স্থবিরতার মুখে পড়ে।
এই প্রেক্ষাপটে— দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সময়সীমার বিধিবিধান এবং জাতীয় পার্টির মতো একটি বৃহৎ ও জনগণ নির্ভর রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বশূন্য বা স্থবির থাকা কোনোভাবেই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পক্ষে সহায়ক নয়— এই বিবেচনায় দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০ (২) (খ) ধারা অনুযায়ী যথাযথ সাংগঠনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এই ধারার ক্ষমতাবলে, ৫ আগস্ট জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম— প্রেসিডিয়াম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে, দলকে সাংগঠনিক স্থবিরতা থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্র, গঠনতন্ত্র এবং নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অতিদ্রুত জাতীয় কাউন্সিল আহ্বান করা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। এছাড়া, দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে আশাবাদ, উদ্দীপনা এবং পরিবর্তনের আকাঙ্খা জন্ম নিয়েছে— তা বাস্তবায়নে এটি সময়োচিত পদক্ষেপ।
তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি আবারও প্রমাণ করেছে এই দল কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়; এটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি, একটি আদর্শভিত্তিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যখন হতাশা, বিভ্রান্তি ও দিশেহারা ভাব বিরাজ করছে— তখন জাতীয় পার্টি দায়িত্বশীলতা, শৃঙ্খলা ও ঐক্যের বার্তা নিয়ে দেশবাসীর সামনে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করছে।
তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়সীমা ছিল ৩০ জুন। আমরা সেই নির্দেশনার আলোকে ২৮ জুন কাউন্সিল অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম, কিন্তু উপযুক্ত ভেন্যু না পাওয়ায় তা স্থগিত করতে হয়। পরে নির্বাচন কমিশনের কাছে দুই মাসের সময় বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করা হয়, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন। এই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, সময়ের স্বল্পতা এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় দ্রুততার সঙ্গে কাউন্সিল আয়োজন করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন দেশের মানুষ ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে সাহস, যে সংগ্রাম, যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা দেখেছিল— সেই আশাকেই বাস্তবতায় রূপ দিতে জাতীয় পার্টি নতুন অভিযাত্রায় নেমেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রতনা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভুইয়া, আরিফুর রহমান খান, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, অ্যাডভোকেট জিয়া উল হক মৃধা, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, খান মো. ইসরাফিল খোকন, ইয়াকুব হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন আজাদ, শফিকুল ইসলাম শফিক, জামাল রানা, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রহমান ,সমাজ কল্যাণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা এবং অন্যান্যরা।
বাংলাফ্লো/সিএস
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0