মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশে অপরাধের তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবেদনে ২০২০ সাল থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত অপরাধের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমে একটি তুলনামূলক প্রতিবেদন পাঠান। গণমাধ্যমে পাঠানো সেই প্রতিবেদনে ২০২০ সাল থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত অপরাধের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।

হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের গত ১৩ মাসে হত্যাকাণ্ডের হার বেশি বলে মনে হয়েছে। এটি আংশিকভাবে মনে হচ্ছে এই কারণে যে, হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে কমপক্ষে ১ হাজার ১৩০টি হত্যাকাণ্ডের মামলা কেবল বিপ্লবের পরে (২০২৪ সালের ৬ আগস্ট থেকে এই বছরের আগস্টের পর্যন্ত) দায়ের করা হয়েছিল। অনেক হত্যার মামলা এর আগে ক্ষমতাসীন দলের গুন্ডাদের দ্বারা দায়ের করতে বাঁধা দেওয়া হয়েছে এবং পুলিশকে মামলা নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল এবং সেসব মামলা কেবল সরকার পরিবর্তনের পরে প্রকাশিত এবং রেকর্ড করা হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের বছরগুলোর তুলনায় ২০২৫ সালে অপরাধের অনেক ক্যাটাগরিও বেড়েছে। এটি সহিংসতার নতুন ঢেউ সম্পর্কে কম এবং বিলম্বিত বিচারের কারণে বেশি হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে সুরক্ষিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে নাগরিকদের আর বাধা দেওয়া হচ্ছে না।

ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা এর আগে ভুক্তভোগীদের মামলা দায়ের থেকে বিরত রেখেছিল, বিশেষ করে যখন অপরাধীরা তাদের দলের কর্মী ছিল, তখন শেখ হাসিনার আমলে অপরাধের তথ্য নিম্নমুখী হয়েছিল। ক্ষমতাসীন দলের লোকদের বিরুদ্ধে মামলা করতেও নারাজ ছিল পুলিশ।

অপরাধের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে প্রেস উইং জানায়, ডাকাতি ১ হাজার ৪০৫ (২০২৪ সালে) থেকে ১ হাজার ৩১৪ (২০২৫ সালে) এ নেমে এসেছে, তবে ২০২৩ সালের আগের স্তরের তুলনায় এখনও বেশি আছে। এর কারণ হচ্ছে—প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই এখন থানায় ডাকাতির সমস্ত মামলা রেকর্ড করা হচ্ছে। উপরন্তু, থানাগুলোর মধ্যে একটি সহায়ক পরিবেশ স্থাপন করা হয়েছে, নাগরিকদের ভয় বা দ্বিধা ছাড়াই অপরাধের অভিযোগ দায়ের করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

আইন ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত (দ্রুত বিচার) আইনের অধীনে অপরাধগুলো ১ হাজার ২২৬ (২০২৪ সালে) থেকে ৬৫১ (২০২৫) এ কমেছে। সহিংস সংঘর্ষ ১২৫ (২০২৪ সাল) থেকে ৫৯ (২০২৫ সাল) এ নেমে এসেছে।

চুরির মামলা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪ সালে ৮ হাজার ৬৫২টি মামলা দায়ের হলেও ২০২৫ সালে ৬ হাজার ৩৫৪টি মামলা দায়ের হয়েছে।

প্রেস উইং বলছে, সহিংস অপরাধ (হত্যার ঘটনা) বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে, তবে সাধারণ অপরাধগুলোর নিম্নমুখী প্রবণতা রয়েছে, যা আরও ভালো আইনের প্রয়োগ এবং আরও সঠিক মামলা দায়ের—উভয়ের দিকে ইঙ্গিত করে।

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে হত্যা এবং নির্দিষ্ট অপরাধের বৃদ্ধি সম্পূর্ণরূপে সহিংসতার বৃদ্ধি নয়—এটি দীর্ঘ-অবদমিত মামলাগুলো অবশেষে দায়ের করাকে প্রতিফলিত করে। এমনকি গত ১৩ মাসে রেকর্ড করা কিছু হত্যা মামলার ঘটনাগুলো ২০০৯-২০১৩ সালেও সংঘটিত হয়েছে।

প্রেস উইং বলছে, ফৌজদারি জবাবদিহিতা উন্নত হয়েছে। ভুক্তভোগীরা এখন রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের ভয় ছাড়াই অভিযোগ করতে পারবেন। পুলিশ কর্মকর্তারা এখন আর মানুষকে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে নিরুৎসাহিত বা বাধা দিচ্ছেন না। কিছু ক্যাটাগরি বিশেষ করে চুরি, নতুন পরিস্থিতিতে হ্রাস পাচ্ছে, যা নির্ভয়ে অভিযোগের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি উন্নত আইন-শৃঙ্খলার ইঙ্গিত দিতে পারে।

বাংলাফ্লো/সিএস


Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0