জেলা প্রতিনিধি
রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাতীয় নীতি প্রতিযোগিতা-২০২৫’-এর রাজশাহী পর্যায়ের চূড়ান্ত পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি গত এক বছরের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, গত এক বছরে বাংলাদেশের মাটিতে একজন মানুষও গুমের শিকার হননি। গত এক বছরে বাংলাদেশের মাটিতে পুলিশ একটাও মিথ্যা-গায়েবি মামলা করেনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য। মিথ্যা মামলা হয়নি, সেটা আমরা বলছি না। ভিকটিমের পরিবার মামলা করেছে। সেটার প্রতিকার দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ এর (ক) ধারা সংশোধন করেছি। আমরা বলেছি, মামলার দীর্ঘমেয়াদী তদন্ত চলাকালে যদি কেউ পুলিশ কমিশনার বা এসপির কাছে দরখাস্ত দিয়ে বলে, ‘আমাকে এই মামলায় গায়েবিভাবে আসামি করা হয়েছে’, তাহলে পুলিশ কমিশনার বা এসপি নিজস্ব তদন্ত সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে সেটার প্রতিকার দিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে সাংবিধানিক আইনের যে সংকট এখন তৈরি হয়েছে, তার বড় প্রশ্ন হলো আপনি নাগরিক হিসেবে আপনার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য আপনার ভোটের অধিকার কীভাবে নিশ্চিত করবেন। এটাই এখন সবচেয়ে মুখ্য প্রশ্ন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিগত ১৭ বছরে দেশের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের পরিস্থিতি নাজুক ছিল, যেখানে গুম, হত্যাকাণ্ড ও গায়েবি মামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি যোগ করেন, জুলাই বিপ্লবে আমরা দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-তরুণকে জীবন দিতে দেখেছি। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। একবার চিন্তা করেনতো তাদের পরিবারের কথা, যারা গুম হয়েছে। যাদের মা এখনও তাহাজ্জুদের নামাজে পাটিতে বসে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন, তার সন্তান যাতে ফিরে আসে, তার লাশটা অন্তত দেখতে পারবেন। এমন একটি রক্তের স্বীকৃতিতে আমরা যে বাংলাদেশ পেয়েছি, সেই বাংলাদেশে স্বপ্ন অনেক থাকবে- সেটাই স্বাভাবিক। তবে স্বপ্নের ডালপালা যেন এমনভাবে তৈরি না হয়, যেই ডালপালা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে।
তিনি বলেন, অপরাধের বিচার ব্যক্তির নয়, অপরাধের প্রতি হওয়া উচিত এবং যাদের সঙ্গে অপরাধ সম্পৃক্ত তারা বিচারের মুখোমুখি হবেন। নাগরিক অধিকার ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, সংবিধান নাগরিকদের ইচ্ছার প্রতিফলন। নাগরিক হিসেবে আমি চাই নিঃশঙ্ক চিত্তে বাংলাদেশে বসবাস করতে। আমি চাই ন্যায়বিচার, জীবনের অধিকার, কথা বলার অধিকার, লিখতে পারার অধিকারসহ বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। পক্ষপাতিত্ব নয়, সঠিক সময়ে সঠিক সেবা পেতে চাই যেখানে কোনও স্বেচ্ছাচারিতা থাকবে না। সেজন্য সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রশ্ন আসে।
তিনি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই, যেখানে জুলাই শহিদের রক্তের সঙ্গে কেউ বেইমানি করতে পারবে না। সাংবিধানিকভাবে আমরা এমন একটা যৌক্তিক জায়গায় পৌঁছাতে চাই যেখানে প্রতিটি শহিদের রক্তের মর্যাদা রক্ষিত হবে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী পাঁচটি দলের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ‘টর্চলাইট’, প্রথম রানারআপ হয়েছে ‘দীপশিখা’ এবং দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে ‘চেঞ্জমেকার’ দল। প্রধান অতিথি বিজয়ীদের হাতে পদক, ক্রেস্ট ও পুরস্কারের চেক তুলে দেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ একরামুল হক, উপ-উপাচার্য ড. মো. ফরিদ উদ্দিন খান এবং যুগ্ম সচিব ড. শেখ মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন।
বাংলাফ্লো/সিএস
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0