জেলা প্রতিনিধি,
চট্টগ্রাম: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নির্দেশে প্রত্যাহার হওয়া কক্সবাজারের চকরিয়া থানার পুলিশ কর্মকর্তা মনজুর কাদের ভূঁইয়াকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় পদায়ন করা হয়েছে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম সানতুর আদেশে তাকে পদায়ন করা হয়।
এর আগে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) মনজুর কাদের ভূঁইয়া চট্টগ্রাম রেঞ্জ কার্যালয় থেকে এসপি অফিসে যোগদান করার পরদিনই তাকে হাটহাজারী থানায় পদায়ন করা হয়।
এর আগে কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নানা অভিযোগের মুখে পড়েন মনজুর কাদের। গত ১ মার্চ কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় স্থানীয় এক সংবাদকর্মী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে মনজুর কাদেরের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল– থানায় আটকে রেখে নির্যাতন ও নারীকে শ্লীলতাহানির ঘটনা। ওই সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সরাসরি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশকে ফোন করে ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন।
নির্দেশনার পরদিন রাতেই চকরিয়া থানার ওসি মনজুর কাদেরকে উখিয়া থানায় বদলির আদেশ জারি করা হয়। একইসঙ্গে উখিয়ার ওসিকে চকরিয়ায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে এই বদলি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে পরে উখিয়া থানায় যোগদানের আগেই তাকে কক্সবাজার থেকে প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। সবশেষ নতুন নির্দেশনায় তাকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় দায়িত্ব দেওয়া হলো।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাটহাজারী থানার ওসির দায়িত্বে থাকা আবু মাহমুদ কাওসার হোসেনকে জেলা পুলিশে বদলি করা হয়েছে। তাকে জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই পদে মনজুর কাদের ভূঁইয়াকে পদায়ন করা হয়েছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামের (হাটহাজারী মাদ্রাসা) সামনে আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি করে ফেসবুকে পোস্ট দেন আরিয়ান ইব্রাহিম নামে এক যুবক। এ ঘটনায় কওমি মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফটিকছড়ি থানা পুলিশ পৌর সদর থেকে আরিয়ান ইব্রাহিম নামে ওই যুবককে আটক করে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিকেল থেকে হাটহাজারী পৌর এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র ও স্থানীয়রা। পৌরসভার গোল চত্বরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। সেখানে একটি বাস ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। এতে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরপর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও সুন্নি মতাদর্শের ব্যক্তিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক লোক আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এদিন হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা হাটহাজারী থানার ওসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে শনিবার রাতে হাটহাজারীতে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন।
এ ঘটনার পর রোববার উপজেলায় শান্তি ফেরাতে সমঝোতা বৈঠক করে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত বৈঠকে সংঘাতে জড়ানো হাটহাজারী মাদ্রাসা ও সুন্নিদের পক্ষের ১০ জন করে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শনিবারের সংঘাতে হতাহতের চিকিৎসা ও ভবনসহ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেয় প্রশাসন। এ ছাড়া হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকা অর্থাৎ চারিয়া থেকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শব্দদূষণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর পুলিশ কর্মকর্তা মনজুরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এসব মামলা তদন্ত করছে পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা।
ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের বোয়ালখালী গ্রামের বাসিন্দা আকতার হোছাইন জানান, ২০১৩ সালে কক্সবাজারের ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ছিলেন মনজুর কাদের ভূঁইয়া। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়ের প্রতিবাদে ঈদগাঁও বাজারে স্থানীয়রা মিছিল বের করলে গুলি করেছিলেন মনজুর কাদের। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তার ভাই রশিদ আহমদ। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মনজুর কাদের।
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0