বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার আগ পর্যন্ত আগের মতোই এনবিআরের সব কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আজ বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১২ মে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ জারির পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সঙ্গে ২০ মে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ, সড়ক বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির ৫ জন সদস্য এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ জন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দুইজন প্রতিনিধি, রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বিস্তারিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা জানান, ‘রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটিসহ সকল অংশীজনের সাথে বিশদ আলোচনাক্রমে জারীকৃত অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার পর উক্ত অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা হবে।’

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এমন ফলপ্রসু আলোচনার পর যে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে তা মেনে না নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ পুনরায় অসহযোগ আন্দোলনের যে কর্মসূচী ঘোষণা করেছে তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।

অধ্যাদেশটি জারি করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ যেমন, দুইটি বিভাগের নতুন করে সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন করা। পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, সচিব কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন ইত্যাদি সম্পাদন করতে হবে-যা যথেষ্ঠ সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাছাড়া, দুইটি নতুন বিভাগের জন্য দায়িত্ব বন্টন এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এসকল আইনের সাথে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। একাজগুলোও সময়সাপেক্ষ কাজ।

যেহেতু এই কাজগুলো শেষ না করে কোনভাবে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনি বিলুপ্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

আজ রাজস্ব বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত দুইজন সদস্যের মধ্যস্ততায় সারাদিনব্যাপী দফায় দফায় আলোচনার একপর্যায়ে তাদের পাঠানো সমঝোতা প্রস্তাব সম্পূর্ণ মেনে নেওয়ার পরও শেষ মূহুর্তে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, যেহেতু অধ্যাদেশটি প্রয়োজনীয় সংশোধন করে বাস্তবায়ন করার কাজটি অনেক সময়সাপেক্ষ, সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে এবং কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ বিদ্যমান ব্যবস্থায় সকল কার্যক্রম সম্পাদন করবেন।

বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডারের স্বার্থ অক্ষূন্ন রেখে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কিভাবে প্রণীত হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও গুরুত্বপূর্ণ সকল অংশীজনদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে।

কাস্টমস ও কর ক্যাডারের সদস্যগণের কোন পদ-পদবি কমানোর কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই বরং সংস্কার কাজ সম্পাদন হলে তাদের পদসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সচিব পদে নিয়োগসহ পদোন্নতির সুযোগ আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থবছরের শেষ সময়ে জাতীয় বাজেট কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত এনবিআরের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিকে অফিস সময়ে দপ্তরে উপস্থিত থেকে তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালু রেখে এবং করাদাতাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান করার জন্য অনুরোধ করা হল।

গত ১২ মে মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে আপত্তি জানিয়ে প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি তোলেন আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের সদস্যরা।

পরদিন এনবিআরের আওতাধীন সব কার্যালয়ে কলম বিরতি কর্মসূচির পালনের সিদ্ধান্ত নেয় রাজস্ব কর্মকর্তারা। এরপর থেকে অসহযোগসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে এনবিআরের কর্মকর্তারা। তবে, এ সময় আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি এবং এনবিআরের জাতীয় বাজেট প্রণয়ন কার্যক্রম এই কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়।

বাংলাফ্লো/এসও