আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ঢাকা: ঈদের প্রাক্কালে লেবাননে একাধিক বিমান হামলা চালালো ইসরায়েল। তাদের দাবি, হিজবুল্লাহর ড্রোন উৎপাদন সক্ষমতা ধ্বংস করতে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলিতে ড্রোন উৎপাদন অবকাঠামো শনাক্ত করা হয়েছে। ইরানি সন্ত্রাসীদের অর্থায়নে হিজবুল্লাহর একটি দল ভূগর্ভে হাজার হাজার ড্রোন নির্মাণ করছে।
হামলার এক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি সতর্ক বার্তা প্রেরণ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত নির্দিষ্ট কিছু ভবন চিহ্নিত করা একটি মানচিত্র সংযুক্ত করে তিনি বলেন, হাদাথ, হারেৎ হ্রেইক, বর্জ্য এল-বারজানেহ এলাকার বাসিন্দারা হিজবুল্লাহর অবকাঠামোর কাছে আছেন। এলাকা খালি করে সবাইকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হলো।
হামলা শুরুর পর পলায়নরত মানুষের ভিড়ে রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। শহরতলির বিভিন্ন স্থান থেকে বিস্ফোরণ পরবর্তী কালো ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।
হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম বলেছেন, ছুটি ও পর্যটন মৌসুমের প্রাক্কালে আমাদের দেশ, জাতীয় নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনীতির ওপর রীতিমতো ইচ্ছাকৃত আঘাত হানা হয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় উৎসবের প্রাক্কালে পরিচালিত এই হামলা আন্তর্জাতিক চুক্তির মারাত্মক লঙ্ঘন।
এদিকে, হিজবুল্লাহর ড্রোন উৎপাদনের বিষয় উল্লেখ করে ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, হিজবুল্লার কর্মকাণ্ডই বরং দুদেশের বোঝাপড়ায় মারাত্মক লঙ্ঘন ঘটায় এবং এসব ড্রোন দিয়েই গোষ্ঠীটি মূলত ইসরায়েলে হামলা পরিচালনা করে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
২০২৩ সালে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পরদিনই ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় হিজবুল্লাহ। হামাস ও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানাতে এই পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানায় তারা। এরপর থেকে হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
পরবর্তীতে নিজ নাগরিকদের ঘরে ফেরা নিশ্চিত করার অজুহাতে হিজবুল্লাহকে পঙ্গু করার মিশন হাতে নেয় তেল আবিব। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে তাদের ব্যাপক বিমান হামলায় প্রায় চার হাজার মানুষ নিহত এবং ১২ লাখের বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হন। ওই অভিযানে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়।
গত নভেম্বরে লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে শর্ত থাকে যে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার চর্চা করতে কোনও পক্ষকেই বিরত রাখা যাবে না।
যুদ্ধবিরতির প্রায় ছ’মাস চলছে এবং এরমধ্যে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। প্রতিটি হামলাতেই হিজবুল্লাহ সম্পৃক্ততার দাবি করে আসছে তারা।
গত এপ্রিলে ‘হিজবুল্লাহ পরিচালিত এক দোকানে’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেল আবিব। একই মাসে পৃথক এক হামলায় এক হিজবুল্লাহ কর্মকর্তা এবং তিন নাগরিক প্রাণ হারান।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও এসব হামলা চালানোকে চুক্তির মারাত্মক লঙ্ঘন বলে বারবার অভিযোগ করে আসছে লেবানন।
বাংলাফ্লো/এসকে
Comments 0