শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে জামায়াত-এনসিপিসহ কয়েকটি দলের বৈঠক

সনদে স্বাক্ষরের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দুই ব্যক্তির নাম পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দলগুলোর কাছ থেকে কমিশন কোনো নাম পায়নি বলে জানা গেছে।

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি,

ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকালীন জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি চেয়েছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি দল। বিষয়টি সুরাহা না হলে সনদে স্বাক্ষর করে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করে দলগুলো।

দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে যে তারা সনদে শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর করবে কি না। তবে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপিসহ কয়েকটি দল।

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার মধ্যে সনদে স্বাক্ষরের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দুই ব্যক্তির নাম পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দলগুলোর কাছ থেকে কমিশন কোনো নাম পায়নি বলে জানা গেছে।

এর আগে জুলাই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এতে সবার মতের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে।

বিএনপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে গতকাল দলীয় ফোরামের বৈঠকে নাম পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল বলে দলটির একটি সূত্র জানায়। তবে রাত ৯টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৈঠক শেষ হয়নি।

জুলাই জাতীয় সনদের বিষয়ে মূল্যায়ন করতে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা গতকাল বৈঠকে বসেন। দলটি জুলাই সনদের বিষয়ে ভাবছে বলে জানিয়েছেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি বলেন, ‘সনদের বিষয়ে আমাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। সেটি এখনো শেষ হয়নি।’ স্বাক্ষরের জন্য কমিশনে নাম পাঠানো হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখি আমরা পরামর্শ করি। তারপর সিদ্ধান্ত জানাব।’

অন্যদিকে এনসিপিও চূড়ান্ত জুলাই সনদের বিষয়ে মূল্যায়ন করতে গতকাল রাতে বৈঠকে বসে। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, বাস্তবায়ন পদ্ধতি কমিশন যদি সরকারের দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে তো সেটি পরের সংসদ বা অনিশ্চয়তায় ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। এ অবস্থায় স্বাক্ষর করা হবে কি না, তা দলীয় ফোরামে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চেয়েছে ইসলামী আন্দোলন। সে নিশ্চয়তা পেলে দলটি সনদে স্বাক্ষর করবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন। তিনি বলেন, ‘দলগুলোতে কমিশনকে একটি পরামর্শ দিয়েছে। সেটি যদি মানে, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব, স্বাক্ষর করব কি করব না।’

জুলাই সনদে ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের বিষয়ে স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছিল গণঅধিকার পরিষদ। কিন্তু চূড়ান্ত সনদে কোটা আন্দোলন থাকলেও ২০১৮ সালের কথা নির্দিষ্ট না থাকায় সনদে স্বাক্ষর নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে দলটি। দলটির দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদে ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলাম। চূড়ান্ত সনদে সেটি দেখা যায়নি। এ ক্ষেত্রে আমরা সনদে স্বাক্ষর করব কি না, তা দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেব।’

জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বসহ বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তি রয়েছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী)। এসব বিষয়ে সমাধান না হলে দলটি সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে সূত্রে জানা গেছে। সব দলের ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো শুধু জাতীয় সনদে রাখার পক্ষে সিপিবি। অন্যদিকে স্বাক্ষরকারীদলগুলো সনদের বিষয়ে আদালতে প্রশ্ন তুলতে পারবে না—এমন বিষয়ে আপত্তি দলটির। এ বিষয় থাকলে সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। বিষয়গুলোর সমাধান হলেই কমিশনে নাম পাঠাবে দলটি।

এদিকে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটির পক্ষ থেকে মহাসচিব শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সহসভাপতি তানিয়া রবের নাম পাঠানো হবে। শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুজনের নাম আমরা কমিশনে পাঠাব।’

এদিকে জুলাই জাতীয় সনদের বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের সদস্যরা। দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারিতেঅনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন শুধু একটি সাধারণ নির্বাচনই নয়, এর মাধ্যমে নির্ধারিত হবে আগামীর বাংলাদেশের পথরেখা। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের অবশ্যই মৌলিক সংস্কারগুলো চূড়ান্ত করে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের কোনো বিকল্প আমাদের হাতে নেই।’

সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকবৈঠক, বিশেষজ্ঞদের মতামতসহ সব বিষয় প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়। সেখানে সনদ বাস্তবায়নে দলগুলোর প্রস্তাবের সুবিধা-অসুবিধাগুলো বলা হয়। একই সঙ্গে আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। সাংবিধানিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে দলগুলোর অবস্থানও প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়।

বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, নির্বাচনের ডামাডোলে যাতে সংস্কারের প্রশ্ন পিছিয়ে না পড়ে, সে জায়গায় গুরুত্ব দিতে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া জরুরি বিষয়। তা আগামী নির্বাচনকে যথাযথ ও সুষ্ঠু করার জন্য প্রয়োজনীয়। সেটিতে প্রধান উপদেষ্টা সমর্থনও জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার জোর দিচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

আগামীকাল রোববার সকালে কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবে। বিকেলে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসবে কমিশন। সেটি সোমবারেও গড়াতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু সুপারিশ সরকার বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে। কিছু বিষয়ে অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট সমর্থন পেয়েছে কমিশনের বৈঠকের মাধ্যমে। তাই সরকার সনদ বাস্তবায়নে দ্রুততার সঙ্গে অগ্রসর হতে পারবে।

বাংলাফ্লো/এনআর

Leave a Comment

Comments 0