Logo

ম্যারাডোনার মৃত্যু নিয়ে মামলা, কাঠগড়ায় খোদ বিচারক

বিবাদীপক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগ, ওই বিচারক এই মামলা নিয়ে বানানো একটি তথ্যচিত্রের সঙ্গে জড়িত, যেটা তাঁর নিরপেক্ষ থাকার দায়িত্বকে লঙ্ঘন করে।

ডিয়েগো ম্যারাডোনা

স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে তাঁর চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত আটজন পেশাদার চিকিৎসাকর্মীর মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগে মামলার পর বিচার কার্যক্রমও শুরু হয় গত মার্চে। একজন বিচারকের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় গতকাল এই মামলার বিচার কার্যক্রম এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়।

বিবাদীপক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগ, ওই বিচারক এই মামলা নিয়ে বানানো একটি তথ্যচিত্রের সঙ্গে জড়িত, যেটা তাঁর নিরপেক্ষ থাকার দায়িত্বকে লঙ্ঘন করে। এ ছাড়া ঘুষ ও অবৈধ মাদক কেনাবেচায়ও এই বিচারকের সম্ভাব্য প্রভাব রাখার অভিযোগ তোলা হয়। এরপর আদালত বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিত করার নির্দেশ দেন। কৌঁসুলি প্যাট্রিসিও ফেরারি জানিয়েছেন, ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক ইস্যু সমাধানে’ বিচারকার্যে এই বিরতি।

বিবাদীপক্ষের দুই আইনজীবী বিচারক হুলিয়েতা মাকিনটাচের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলে দুই মাসব্যাপী এই বিচারকার্য থেকে তাঁকে নিষ্কৃতি দেওয়ার দাবি তুলেছেন। মাকিনটাচের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, আদালতকক্ষে ক্যামেরা ঢুকিয়েছেন এবং বিচারকার্যের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে, যা আর্জেন্টিনায় নিষিদ্ধ।

মাকিনটাচ আইন লঙ্ঘন করেছেন কি না এবং করলেও কোন কোন বিষয়ে, সেসব এখন তদন্ত করে দেখবে কৌঁসুলিদের অফিস।

গতকাল আদালতকে মাকিনটাচ বলেছেন, তিনি ‘সবার ভাবনার কারণ বুঝতে পারছেন’। তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে মাকিনটাচ বলেছেন, ‘নিজের নিরপেক্ষতা নিয়ে আমি নিশ্চিত।’ যদিও তিনি এটাও বলেছেন, সন্দেহ তৈরি হলে বিচারকার্য থেকে সরে দাঁড়াবেন।

প্রধান বিচারক ম্যাক্সিমিলিয়ানো সাভারিনো জানিয়েছেন, আগামী ২৭ মে বিচারকার্য আবার শুরু হবে।

’৮৬ বিশ্বকাপ কিংবদন্তি ম্যারাডোনা ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর ৬০ বছর বয়সে মারা যান। মস্তিস্কে অস্ত্রোপচারের পর বুয়েনস এইরেসে একটি ভাড়া করা বাড়িতে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। অস্ত্রোপচারের সপ্তাহ দুয়েক পরই মারা যান ম্যারাডোনা। দিনের বেলায় যে সেবিকা ম্যারাডোনার সেবাযত্নে নিয়োজিত ছিলেন, তিনি কিংবদন্তিকে তাঁর বিছানায় মৃত হিসেবে পান। দীর্ঘদিন ধরে কোকেন ও মদ্যপানে আসক্ত ছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ফুটবলার।

ম্যারাডোনার শেষ দিনগুলোতে তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন যে আটজন চিকিৎসক, তাঁদের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলাজনিত অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হয় গত ১১ মার্চ। বাদীপক্ষের আইনজীবীদের অভিযোগ, শেষ দিনগুলোতে ম্যারাডোনার চিকিৎসায় ভীষণ অবহেলা করা হয়েছে। প্রমাণিত হলে তাঁদের ৮ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।

মামলার বিচারপ্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত ম্যারাডোনার চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত এগিয়েছে, যেখানে কিংবদন্তিকে বাসায় রেখে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সেবার অভাব ছিল সেখানে।

গত সপ্তাহে আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ম্যারাডোনার মেয়ে জিয়ান্নিনা অভিযোগ করেন, চিকিৎসায় যাঁরা নিয়োজিত ছিলেন, তাঁরা সবাই মিলে তাঁর বাবাকে ‘অন্ধকার, কুৎসিত ও একাকী’ একটি জায়গায় রেখেছেন এবং সেবাযত্নের চেয়ে অর্থের প্রতিই তাঁদের মনোযোগ ছিল বেশি। অভিযুক্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত শুধু ম্যারাডোনার মনোবিদকেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে।

এই মামলায় অভিযুক্তদের একজন নিউরোসার্জন, একজন মনোরোগবিশেষজ্ঞ, একজন মনোবিজ্ঞানী, একজন মেডিকেল কো–অর্ডিনেটর, একজন নার্স কো–অর্ডিনেটর, একজন চিকিৎসক এবং রাতের পালার নার্স। দিনের বেলায় ম্যারাডোনাকে দেখভাল করতেন যে নার্স, তিনি আলাদাভাবে বিচারের সম্মুখীন হবেন।

বাংলাফ্লো/এসও

Related Posts খেলা

Leave a Comment

Comments 0