আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ঢাকা: যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীর উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) পরিচালিত ত্রাণবাহী জাহাজ ‘ম্যাডলিন’ আটক করেছে ইসরায়েল।
ইতালি থেকে যাত্রা শুরু করা জাহাজটি গাজার উপকূলে পৌঁছানোর আগেই আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে জোরপূর্বক ইসরায়েলের আশদাদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জাহাজটিতে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীসহ ১৩ জন ছিলেন।
আটকদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বব্যাপী জলবায়ু আন্দোলনের নেতা ২২ বছর বয়সী সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, ফরাসি চিকিৎসক ও কর্মী বাপতিস্ত আন্দ্রে, আল জাজিরার সাংবাদিক ওমর ফায়াদ, ব্রাজিলিয়ান কর্মী ও ফ্রিডম ফ্লোটিলা ব্রাজিলের সমন্বয়ক থিয়াগো অ্যাভিলা, ফরাসি-ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের গ্রিন পার্টির সদস্য রিমা হাসান, তুর্কি মানবাধিকারকর্মী সুয়াইব ওর্দু। এছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসের আরও কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং সমুদ্র সংরক্ষণকর্মীও রয়েছেন।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এক্সে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, সেলিব্রেটিদের বহনকারী তথাকথিত ‘সেলফি জাহাজ’কে রোববার মধ্যরাতে ইসরায়েলের উপকূলে আনা হয়েছে। জাহাজের সব ক্রু নিরাপদে আমাদের হেফাজতে রয়েছেন। তাদের খাবার ও পানি-স্যান্ডউইচ সরবরাহ করা হয়েছে। নাটক এখানেই শেষ।
আটককৃত কর্মীদের একটি ভিডিও প্রকাশ করে জাহাজটিকে ‘সেলফি ইয়ট’ বলে উপহাস করে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই ভিডিও প্রকাশের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাটগার্স ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক আদিল হক। তিনি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) বলেন, এই ধরনের অপমানজনক আচরণ আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম অধিকার সংগঠন ‘সিএআইআর’ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ম্যাডলিন জাহাজে ইসরায়েলের অভিযান একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং আন্তর্জাতিক জলদস্যুতার শামিল।
সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেছেন, এই মানবিক মিশনে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার এবং যাত্রীদের অপহরণ আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন।
এদিকে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রানচেসকা আলবানিজে বলেছেন, ইসরায়েলের গাজা নিয়ন্ত্রণের বৈধতা নেই। অবরোধ তুলে নেওয়া উচিত এবং গাজাবাসীদের সহায়তা দিতে হবে।
তিনি আরও জানান, অভিযান চলাকালে ম্যাডলিন জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়, যখন ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আরেকটি নৌকা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।’ এরপরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এদিকে ঈদুল আজহায় থেমে নেই ইসরায়েলি আগ্রাসন। একের পর এক গাজার শহরে দখলদারদের বোমা পড়ছে। এতে গাজার হাসপাতালগুলোতে নতুন করে লাশের স্তূপ হয়ে গেছে। আহতদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস। আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদের তৃতীয় দিন রোববারও (৮ জুন) গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে বিভিন্ন স্থান থেকে নিহতের খবর আসছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৮টি মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। একই সময়ে ৩৯৩ আহতকে হাসপাতালে আনা হয়। কিন্তু তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষমতা হাসপাতালগুলোর নেই।
সূত্র: আলজাজিরা।
Comments 0