Logo

জলবায়ু পরিবর্তনে অতিরিক্ত ১ মাস গরমে ভুগেছে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ: গবেষণা

নতুন এক গবেষণায় দাবি করাহচ্ছে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত এক বছরে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষকে অতিরিক্ত এক মাস তীব্র গরম সইতে হয়েছে।

ছবি সংগৃহীত

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: নতুন এক গবেষণায় দাবি করাহচ্ছে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত এক বছরে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষকে অতিরিক্ত এক মাস তীব্র গরম সইতে হয়েছে।

বিশ্ব আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থা, ক্লাইমেট সেন্ট্রাল এবং রেড ক্রস শুক্রবার যৌথভাবে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তীব্র গরমের প্রভাবে মৃত্যু ও অসুস্থতা বেড়েছে, কৃষি পণ্যের ক্ষতি হয়েছে এবং বিদ্যুৎ ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে।

তীব্র গরমের বিপজ্জনক দিকগুলো তুলে ধরতে নির্দিষ্ট এলাকার ২০২৪ সালের ১ মে থেকে ২০২৫ সালের ১ মে পর্যন্ত আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা।

১৯৯১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে এসব এলাকার উষ্ণতম ১০ শতাংশ তাপমাত্রাকে ‘তীব্র গরম’ হিসেবে বিবেচনা করেছেন গবেষকরা।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত এক বছরে প্রায় ৪০০ কোটি বা ৪৯ শতাংশ মানুষ অন্তত ৩০ দিন তীব্র গরম সহ্য করেছেন। এ সময়ে তীব্র তাপপ্রবাহের ঘটনা ছিল ৬৭টি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “যদিও বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় বেশি মনোযোগ পায়, তবে তাপপ্রবাহ সম্ভবত সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রভাব।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র গরমের কারণে যেসব মৃত্যু হয়, সেগুলোর অনেক ঘটনাই খবরের বাইরে থেকে যায় কিংবা ভুলভাবে তুলে ধরা হয়।

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং গবেষকদলের সদস্য ফ্রিডরিক অটোর ভাষায়, তাপপ্রবাহ হল ‘নীরব ঘাতক’।

“তাপপ্রবাহে মানুষ রাস্তায় পড়ে মারা যায় না। তারা মারা যায় হাসপাতালে; কিংবা এমন ঘরে, যেখানে তাপমাত্রা ঠিক নেই। ফলে এসব মৃত্যু অদৃশ্যই থেকে যায়।”

তিনি বলেন, “প্রতি ব্যারেল তেল পোড়ানোর সঙ্গে, প্রতিটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের সঙ্গে এবং প্রতি ডিগ্রি উষ্ণতার বৃদ্ধির সঙ্গে আরও বেশি বেশি মানুষ তাপপ্রবাহের শিকার হবে।”

গবেষণায় বলা হয়েছে, বাড়তি দাবদাহে সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন ক্যারিবীয় অঞ্চলের মানুষ।

সেখানকার আরুবা দ্বীপে ১৮৭দিন তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল। জলবায়ু পরিবর্তন না হলে তা হতো ৪৫ দিনের মতো।

নিম্ন আয় ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, যেমন বয়স্ক মানুষ এবং যারা নানা অসুখে ভুগছেন, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের মার্চে মধ্য এশিয়া, ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ সুদান এবং গত জুলাইয়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে যে চরম তাপপ্রবাহ দেখা গেছে, তা জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া সম্ভব হতো না।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে মরক্কোতে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গেলে অন্তত ২১ জনের মৃত্যু হয়।

রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট ক্লাইমেট সেন্টারের কর্মকর্তা রূপ সিং বলেন, “তাপমাত্রা যে বাড়ছে, তা মানুষ বুঝতে পারছে ঠিকই, কিন্তু সেটাকে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন না।

“আমাদের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যেমন— উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা, তাপপ্রবাহের কর্মপরিকল্পনা এবং নগর অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।”

গবেষকরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন আসবে এবং তীব্রতাও বাড়বে।

বাংলাফ্লো/এসকে

Related Posts বাংলাদেশ

Leave a Comment

Comments 0