স্পোর্টস ডেস্ক
ঢাকা: দেশে ও বিশ্ব ফুটবলে ওয়াকওভারের ঘটনা ঘটে প্রায়ই। নানা কারণে প্রতিবাদ বা সমস্যার কারণে একটি দল মাঠে অনুপস্থিত থাকে। আবার কখনো খেলার ঘটনার প্রেক্ষিতে মাঠ ত্যাগের ঘটনাও ঘটে। তবে মাঠে খেলার জন্য প্রস্তুত থাকার পরও খেলতে না পেরে ওয়াকওভারের ঘটনা একেবারেই কদাচিৎ। বাংলাদেশে অ-১৪ জেএফএ নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে এমন ঘটনাই ঘটেছে।
গত ২২ আগস্ট রংপুর ভেন্যুতে পঞ্চগড় ও গাইবান্ধা অ-১৪ দলের ম্যাচ ছিল। নির্ধারিত সময়ে গাইবান্ধা দল মাঠে ওয়ার্ম আপ করেছিল। এরপরও তারা খেলতে পারেনি। অন্যদিকে বাফুফে ঐ ম্যাচে গাইবান্ধাকে মাঠে শূন্য বিবেচনা করে পঞ্চগড়কে ২-০ গোলে ওয়াকওভার হিসেবে জয়ী ঘোষণা করেছে। গ্রুপের পরবর্তী ম্যাচগুলোতেও বাফুফে এভাবে ফলাফল দেখিয়েছে।
মাঠে পুরো দল থাকার পরও কেন খেলতে না পারার ঘটনা ঘটল এই প্রসঙ্গে বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘এবার ফিফা কানেক্টে রেজিস্ট্রেশনকৃত ফুটবলাররা এই টুর্নামেন্টে খেলছে। যে ফুটবলাররা সেদিন উপস্থিত ছিল তাদের রেজিস্ট্রেশন ছিল না। যিনি দল নিয়ে গিয়েছিলেন তিনিও অথরাইজড নয়। গাইবান্ধার অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্যই এ রকম পরিস্থিতি হয়েছে।’
সাবেক ফুটবলার ও কোচ শরিফা অদিতি গাইবান্ধা ফুটবল দল নিয়ে মাঠে গিয়েছিলেন। তিনি বাফুফের সর্বশেষ নির্বাচনে গাইবান্ধা ফুটবল এসোসিয়েশনের কাউন্সিলর ও সদস্য পদপ্রার্থীও ছিলেন। গাইবান্ধা নারী ফুটবল দল না খেলতে পারার পেছনে তিনি বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণকে দায়ী করেছেন।
এ প্রসঙ্গে অদিতি বলেন, ‘ফুটবলারদের ফিফা কানেক্টে রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব ফেডারেশনের, বিশেষ করে নারী উইংয়ের। এটা সেদিনও করা যেত। মাঠে যখন এ নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল তখন সাধারণ সম্পাদক খেলতে বললেও নারী উইংয়ের চেয়ারম্যানের নির্দেশনাতেই শেষ পর্যন্ত গাইবান্ধার ক্ষুদে নারী ফুটবলাররা খেলতে পারেনি। মেয়েরা খেলতে না পেরে কান্নাকাটি করেছে। এর দায় ফেডারেশনের নারী উইংয়ের।’
বাফুফে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনগুলোতে সংগঠনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রদান করে। গাইবান্ধা জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের প্যাডে অদিতি সাধারণ সম্পাদক বরাবর এক আবেদনে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা প্রদানের অনুরোধ জানান। সংগঠনের পরিবর্তে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বাফুফে টাকা প্রদান করেছে কিনা এবং গাইবান্ধা ডিএফএ সাংগঠনিক বিষয় জানতে বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হলেও গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যম থেকে নিজেকে নিভৃতেই রাখেন।
চলতি বছরই বাফুফে দেশ ব্যাপী অ-১৫ পুরুষ ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে। সেই টুর্নামেন্টে গাইবান্ধা জেলা অংশগ্রহণ করেছে। আঞ্চলিক পর্বে ফাইনালে হেরেছে। সেই সময় গাইবান্ধার দল নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হলেও সেটার সমাধান করেছিলেন বাফুফে নির্বাহী সদস্য ও অ-১৫ ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল করিম, ‘অ-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্টের সময় গাইবান্ধায় অদিতি এবং অন্য একটি পক্ষের উপস্থিতি আমি দেখেছি। আমি চেয়েছিলাম জেলার আগ্রহী ফুটবলাররা যেন খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না থাকে। এজন্য আমি দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে একটি সমন্বয়ের মাধ্যমে খেলানোর চেষ্টা করেছি। পরবর্তীতে গাইবান্ধা বেশ ভালো খেলে ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল।’
নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ সংকট সমাধান বা ক্ষুদে ফুটবলারদের খেলানোর দিকে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেননি। এজন্য তাকে দায়ী করে অদিতি বলেন, ‘মেয়েদের অন্তত খেলতে দিত সেদিন। এরপর আমার বা গাইবান্ধার ভুল বা অপরাধের শাস্তি দিত আপত্তি ছিল না। সেটা না করে কিরণ আপা খেলতেই দেননি। বাফুফে নির্বাচনে আমি তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম। এজন্য বোধহয় গাইবান্ধা ক্ষুদে ফুটবলারদের এমন পরিণত হলো। তিনি একাই নারী ফুটবল পরিচালনা করছেন।’
জাপান ফুটবল ফেডারেশনের অর্থায়নে বাফুফে প্রতি বছর অ-১৪ নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট করে। এই টুর্নামেন্টের প্রাথমিক পর্যায় শেষ। আট দল নিয়ে চূড়ান্ত পর্ব শুরু হওয়ার অপেক্ষায়।
বাংলাফ্লো/এসও
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0