বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঘোষণা দিয়ে আবু সাঈদ দিবস বাতিল করায় পরিবারের ক্ষোভ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি শুরুর আগে রংপুরের পীরগঞ্জে পরিবারের পক্ষ থেকে এই আক্ষেপের কথা জানান আবু হোসেন।

ছবি: সংগৃহীত

জেলা প্রতিনিধি 

রংপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ আবু সাঈদের নামে কোনো দিবস পালিত হচ্ছে না। এ নিয়ে আক্ষেপ জানিয়েছেন তার বড় ভাই আবু হোসেন।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচি শুরুর আগে রংপুরের পীরগঞ্জে পরিবারের পক্ষ থেকে এই আক্ষেপের কথা জানান আবু হোসেন।

আবু হোসেন বলেছেন, ১৬ জুলাই নিয়ে নাটক করা হয়েছে। তারা যদি আগেই ঘোষণা দিতেন, ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ দিবস’ তাহলে আমাদের আপত্তির জায়গাটা কম থাকতো। কিন্তু ঘোষণা দিয়ে একজন আইকনিক শহীদের এই ধরনের অপমান আমরা পরিবারে পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানাই।

তিনি বলেন, যার অনুপ্রেরণা যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, তার জন্য একটা দিন রাখা হলো না। আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি অনেক দিবস পালন করা হয়েছে অনেক মানুষের নামে। যাদের জাতির জন্য এক পয়সারও উপকার ছিল না। কিন্তু শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর দিনটা ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণাতে সমস্যাটা কোথায় ছিল? আমরা যুগে যুগে তো দেখে আসছি। বিভিন্ন বিপ্লবের শহীদের বিভিন্নভাবে স্মরণ করা হয়।

১৬ জুলাই ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ রাখার দাবি জানিয়ে আবু হোসেন বলেন, আমাদের দাবি, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস ছিল আমরা এটা শহীদ আবু সাঈদ দিবসই চাই।

জুলাই শহীদ দিবস যেটা আছে, জুলাইয়ের যেকোনো দিন সেটা সরকার পালন করতে পারে। ১৬ জুলাই যার আত্মত্যাগে এত বড় বিপ্লব সংঘটিত হলো তাকে এভাবে অবহেলা করা আমরা পরিবারে পক্ষ থেকে মেনে নিতে পারছি না।

আবু হোসেন আরও বলেন, ১৬ জুলাই আবু সাঈদের শাহাদাতের মধ্য দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন একটা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। লোকজন আর ঘরে বসে থাকেনি, রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, জীবনের মায়া ত্যাগ করে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে মানুষের রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়া-এটার যে অনুপ্রেরণা, সেটা হচ্ছে আবু সাঈদ।

তিনি বলেন, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে সেটা শহীদ জুলাই দিবস করা হলো। তারা জুলাই শহীদ দিবস পালন করার আরও দিন পেতেন। এই রকম একজন বৈপ্লবিক শহীদ, যার আত্মত্যাগ যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। তার জন্য কি ৩৬৫ দিন থেকে ১৬ জুলাই তার স্মরণে নির্ধারণ করা যেত না? তাকে স্মরণ করলে কি অন্য শহীদদের অপমান করা হতো। তার আত্মত্যাগ তো তাদের অনুপ্রাণিত করছে রাজ পথে নামার জন্য।

আবু হোসেন বলেন, বৈষম্যর জন্য সবাই লড়াই করলো, আদৌ রাষ্ট্রে কতটুকু বৈষম্য দূর হলো আমরা জানি না। আমাদের কাছে বোধগম্য নয় এখনো। বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য রয়ে গেছে। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে শুধু নির্দিষ্ট একটা অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নেওয়া হয়েছে। রংপুর অঞ্চল থেকে আবু সাঈদ শহীদ হয়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় অথচ রংপুর বিভাগ থেকে একজনও উপদেষ্টা নেই। এখানে কি কোনো যোগ্য লোক ছিলেন না? শুধু কি দক্ষিণ অঞ্চলের লোক যোগ্য?

আবু সাঈদের ভাই আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা আন্দোলনকারী ছিলেন, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারাই উপদেষ্টা হলেন। কিন্তু শহীদ পরিবার থেকে কোনো প্রতিনিধি নেওয়া হলো না। শহীদ পরিবার সাড়ে ৮০০। তাদের মধ্যে কি কোনো যোগ্য লোক ছিল না? মনে হচ্ছে যে, এখনো বৈষম্য পুরোপুরি দূর হচ্ছে না। আমরা চাই, এই দেশ বৈষম্যমুক্ত হয়ে গড়ে উঠুক।

গত বছরের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এরপর দেশব্যাপী আন্দোলন বেগবান হয়। একপর্যায়ে সেই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।

বাংলাফ্লো/এনআর

Leave a Comment

Comments 0