স্পোর্টস ডেস্ক
ঢাকা: রাইট উইং পজিশনে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। বড় ম্যাচে খেলোয়াড়রা মানসিক চাপ নিতে না পারায় একের পর এক গোলের সহজ সুযোগ হারাচ্ছে লাল-সবুজের দল। সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে শিলংয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে দেখা গেছে একই দৃশ্য—হামজা চৌধুরীর পাসে অন্তত তিনটি নিশ্চিত সুযোগ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু উইঙ্গাররা তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন।
এমনকি তার আগেও কুয়েত ও লেবাননের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচগুলোতেও রাইট উইংয়ে খেলা খেলোয়াড়রা সেভাবে গোলের সুযোগ সৃষ্টি বা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এই ধারাবাহিক ব্যর্থতায় রাইট উইং এখন জাতীয় দলের একদম ‘আনপ্রোডাক্টিভ’ (অফলপ্রসূ) পজিশনে পরিণত হয়েছে। তাই আগামী ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচে ইতালিপ্রবাসী তরুণ ফাহমেদুল ইসলামের অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় দলে রাইট উইং পজিশনে মূলত খেলছেন সৈয়দ মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এবং মাঝে মাঝে শেখ মোরসালিন। ইলিয়াস একজন গতি নির্ভর খেলোয়াড় হলেও, আন্তর্জাতিক ম্যাচে তার কার্যকারিতা খুবই সীমিত। ২০২৩-২৪ মৌসুমে জাতীয় দলের হয়ে ইলিয়াস খেলেছেন ৮টি ম্যাচ, কিন্তু গোল করতে পারেননি একটিতেও। মাত্র ১টি অ্যাসিস্ট রয়েছে তার নামের পাশে। বড় দলের বিপক্ষে তার পারফরম্যান্স ছিল নিষ্প্রভ। অন্যদিকে শেখ মোরসালিনের প্রকৃত পজিশন অ্যাটাকিং মিডফিল্ড। উইংয়ে খেললে তার স্বাভাবিক সৃষ্টিশীলতা হারিয়ে যায়। গোল করার সুযোগও কমে যায় তার জন্য।
এই পরিসংখ্যানগুলো স্পষ্ট করে দেয়, রাইট উইং পজিশনে গোল বা অ্যাসিস্ট— কোনও ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারছেন না বর্তমান খেলোয়াড়রা। সেই শূন্যতা পূরণেই প্রয়োজন একজন নতুন ও কার্যকর উইঙ্গার।
এই পজিশনে আলোচনায় উঠে এসেছেন ইতালিপ্রবাসী তরুণ ফুটবলার ফাহমেদুল ইসলাম। তিনি ইতালির সিরি ডি ক্লাব ওলবিয়া ক্যালসিও ১৯০৫-এর হয়ে নিয়মিত খেলছেন এবং ভালোই পারফর্ম করছেন। ২০২৩-২৪ মৌসুমে ওলবিয়ার হয়ে তিনি খেলেছেন ১২টি ম্যাচ, করেছেন ১টি গোল এবং করেছেন ৩টি অ্যাসিস্ট। তার গড় রেটিং ৬.৮৪ — যা দলের গড় স্কোরের চেয়ে বেশি।
ইতালির স্পেজিয়া ও সাম্পদোরিয়া ক্লাবের যুব দলে খেলেছেন তিনি। সাম্পদোরিয়ার অনূর্ধ্ব-১৮ দলে ২০২৩-২৪ মৌসুমে তিনি ২৫টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন এবং ৪টি গোল করেছেন। এই অভিজ্ঞতা তার পেশাদার ক্যারিয়ারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এই অভিজ্ঞতা ও পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে, ফাহমেদুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় দলের রাইট উইং পজিশনে একটি সম্ভাবনাময় সংযোজন হতে পারেন।
এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, তিনি কেবল পজিশনে খেলেন বলেই নয়, সুযোগ তৈরি ও বাস্তবায়ন—দুই ক্ষেত্রেই কার্যকর। তাই তাকে শুধু বিকল্প নয়, রাইট উইংয়ের ‘প্রথম পছন্দ’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতেই পারে।
ফাহমেদুলের অন্যতম শক্তি হলো বক্সে ঢোকার সময় নিখুঁত টাইমিং এবং ওভারল্যাপিং ফুলব্যাকদের সঙ্গে বোঝাপড়ার দারুণ দক্ষতা। তিনি কেবল স্কিলফুল উইঙ্গার নন, একজন ফিনিশারও। ইউরোপিয়ান কোচিংয়ের কারণে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় কম, এবং বল পায়ে কিংবা অফ দ্য বল মুভমেন্ট — দুই দিকেই তিনি সচল ও কার্যকর। এই কাজগুলোকে সহজ করে তুলতে পারে দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ মিডফিল্ডার—হামজা চৌধুরী ও শমিত সোম।
হামজা ডিপ পজিশন থেকে কাটিং পাস দিতে পারেন, আর শমিত বল স্ক্রিন করে আক্রমণের ধারা তৈরি করতে পারেন। এই দুজন যদি বল ঠিকভাবে ফাহমেদুলের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন, তাহলে তিনি সেই সুযোগকে গোলে রূপ দিতে প্রস্তুত।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক মানেই একধরনের মানসিক চাপ। কিন্তু ফাহমেদুল খেলছেন ইতালির চতুর্থ স্তরের লিগ—সিরি ডি-তে, যেখানে প্রতিটি ম্যাচেই প্রচণ্ড ফিজিক্যাল ফুটবল ও কৌশলগত চাপের মুখে পড়তে হয়। তার অভিজ্ঞতা বলছে, সে এই চাপে মানিয়ে নিতে সক্ষম। আর প্রতিপক্ষ সিঙ্গাপুর বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের খুব কাছাকাছি; অতএব প্রতিপক্ষ নিয়েও আলাদা ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
জাতীয় দলে হয়তো কিছুটা ভিন্ন চাপ থাকবে, কিন্তু ইতালিতে খেলা একজন তরুণ ফুটবলারের কাছে সেটা একেবারেই নতুন নয়। বরং সেই চাপেই নিজেকে প্রমাণ করার মতো মানসিক দৃঢ়তা তার মধ্যে দেখা গেছে আগেও।
বাংলাফ্লো/এসও
Comments 0