স্পোর্টস ডেস্ক
ঢাকা: আগামী শনিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন আঙ্গিকের ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। ৩২টি ক্লাব নিয়ে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টে সব মহাদেশের প্রতিনিধিত্ব থাকছে। শুরুর আগে এই আসর নিয়ে আলোচনার সঙ্গে সমালোচনাও জুটেছে। তবে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর মতে, এই বিশ্বকাপ একটি 'ঐতিহাসিক নতুন যুগের' সূচনা করছে, যা ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্বকাপের মতোই এক মাইলফলক।
সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইনফান্তিনো সমালোচকদেরও জবাব দিয়েছেন, যারা এই টুর্নামেন্টের প্রয়োজনীয়তা ও টিকিটিং পলিসি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি আশাবাদী, ম্যাচ শুরু হলেই সন্দেহবাদীরা উপলব্ধি করবেন এই আয়োজনের গুরুত্ব।
ইনফান্তিনো বলেন, 'এটা ক্লাব ফুটবলের এক নতুন যুগের শুরু, অনেকটা যেমন ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল। আজ সবাই সেই প্রথম বিশ্বকাপের কথা বলে। এই ক্লাব বিশ্বকাপও তাই একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।'
১৯৩০ সালের বিশ্বকাপে কেবল ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার দল অংশ নিয়েছিল। ইনফান্তিনো মনে করেন, এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে ফুটবলের প্রচলিত সীমার বাইরের ক্লাবগুলোকেও বিশ্বমঞ্চে নিজেদের প্রমাণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
'আমরা সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, সুযোগ দিতে চাই বিশ্বজুড়ে থাকা ক্লাবগুলোকে। ফুটবলকে সত্যিকার অর্থেই বৈশ্বিক করতে চাই। কারণ আমরা বলি এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, কিন্তু বাস্তবে এলিট ফুটবল খুবই সীমিত কিছু ক্লাব ও দেশের মধ্যে কেন্দ্রীভূত,' বলেন ফিফা প্রেসিডেন্ট।
২০১৬ সালে ফিফা সভাপতি হওয়ার আগে ইনফান্তিনো ইউরোপিয়ান ফুটবল সংস্থা উয়েফার মহাসচিব ছিলেন। এই নতুন টুর্নামেন্ট ৮০টির বেশি দেশের খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে জানিয়ে বলেন, 'অনেক দেশ আছে যারা কখনোই বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় না, তারা এবার অন্তত তাদের ক্লাব ও খেলোয়াড়দের মাধ্যমে এই আসরের অংশ হচ্ছে। এটা শুধু ক্লাবের জন্য নয়, দেশের জন্যও গর্বের বিষয়।'
জর্জ উইয়াহর উদাহরণ দিয়ে আরও বলেন, 'আমার খুব ভালো বন্ধু, সাবেক তারকা ফুটবলার, একমাত্র আফ্রিকান যিনি ব্যালন ডি'অর জিতেছেন। তিনি কখনো বিশ্বকাপে খেলেননি। কিন্তু এমন একটি ক্লাব বিশ্বকাপে খেলতে পারলে তার ক্লাব এবং দেশ উভয়ের জন্যই গর্বের হতো।'
টুর্নামেন্টের ব্যস্ত সূচি নিয়ে কিছু ক্লাব ও সমর্থক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইনফান্তিনো বলেন, 'আমি নিশ্চিত, খেলা শুরু হলে সবাই বুঝতে পারবে এখানে কিছু বিশেষ কিছু ঘটছে।'
টিকিট বিক্রি নিয়ে কিছুটা সমালোচনা উঠেছে। বিশেষ করে 'ডাইনামিক প্রাইসিং' পদ্ধতির কারণে দামের ওঠানামা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ বিষয়। অনেক টিকিটের দাম বেশি হওয়ায় স্টেডিয়াম ফাঁকা থাকার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
তবে ইনফান্তিনো বিষয়টি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, 'মানুষ বলে দাম বেশি—তারা সমালোচনা করে। আবার আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় দিলে তখনো সমালোচনা করে। আমি তো ছাত্রাবস্থায় এমন সুযোগ পেলে খুব খুশি হতাম! আমরা খালি গ্যালারি দেখতে চাই না। আমার বিশ্বাস, স্টেডিয়াম ভরেই খেলা হবে।'
এই টুর্নামেন্টের সম্প্রচার স্বত্ব পাওয়া গেছে ডিএজেডএনের মাধ্যমে, যা প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি বলে জানা গেছে। ইনফান্তিনোর দাবি, এই আয় পুরোপুরি ফুটবলের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
এই টুর্নামেন্টকে সফল মনে করার মাপকাঠি কী হবে—এমন প্রশ্নে ইনফান্তিনো বলেন, 'আমার হৃদয়ে আমি তা অনুভব করব। তবে ইতোমধ্যেই আমি আত্মবিশ্বাসী—টিকিট বিক্রি ও টিভি সম্প্রচার যেভাবে এগোচ্ছে তাতে আমি আশাবাদী।'
ডিএজেডএন প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যে ম্যাচ দেখানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আজকের দিনে কোন বড় প্রতিযোগিতা ফ্রি-তে দেখা যায়?'
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ইস্যু ঘিরে যে উত্তেজনা চলছে, বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেসে, সেখানে সহিংসতা দেখা দেওয়ায় নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে ইনফান্তিনো বলেন, 'নিরাপত্তা আমাদের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। লস অ্যাঞ্জেলেসের পরিস্থিতি আমরা নজরে রাখছি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, সমর্থকরা যেন নিরাপদ পরিবেশে খেলা দেখতে পারে।'
বাংলাফ্লো/এসও
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0