বাংলাফ্লো প্রতিনিধি,
ঢাকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, সুস্পষ্ট ঐকমত্যের একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা আজ রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আজকের মধ্যে আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে, তার একটি তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেব। আশা করছি, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য খসড়া সনদ সব দলের কাছে তুলে দিতে পারব।’
বুধবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের ২২তম দিনের আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
তিনি জানান, কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘমেয়াদি আলোচনার ফলে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয়গুলোতে সুস্পষ্টভাবে ঐকমত্য হয়েছে সেই বিষয়গুলোর একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা আজ বিকালের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সেই সঙ্গে আজকের আলোচনাটি দ্রুতগতিতে অগ্রসর করতে হবে, যেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ঐকমত্যের বিষয়গুলো চিহ্নিত করে আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে একটি সনদ আমরা সবার হাতে তুলে দিতে পারি।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, আমরা আশা করছি আজকে এবং আগামীকালই এই প্রক্রিয়ার আলোচনা শেষ করতে পারব। আমাদের লক্ষ্য এটাই। অনেকগুলো বিষয় ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলো মতামত দিয়েছে যা নিয়ে কমিশন আজ সকালে আলোচনা করেছে। কমিশনের নিজস্ব আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং আশা করি আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে কমিশন আপনাদের এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে পারবে।
ইতোমধ্যেই বেশ কিছু বিষয় কমিশনের আলোচনা শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। গতকালের (মঙ্গলবার) অধিবেশনে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও তা শেষ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব বিষয়ক আলোচনা এখনো হয়নি। কারণ, এ বিষয়টি এখনো উপস্থাপিত হয়নি। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব আপনাদেরকে (রাজনৈতিক দলগুলোকে) আলাদাভাবে দেওয়া হয়েছে এবং আমরা বলেছিলাম যে এর খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আপনাদের মন্তব্য আমাদেরকে জানাতে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক আলোচনাকালে প্রত্যেকটি দলই নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের জন্য সংবিধানের দ্বিতীয় ও প্রধানত তৃতীয় বিভাগে প্রয়োজনীয় সংযোজন বিয়োজন ও পরিমার্জনের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছিলেন। সেই সময় কমিশনের পক্ষ থেকে যে পাঁচটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সে পাঁচটি ব্যাপারে ঐকমত্য হয়নি, পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনে যা ছিল তার কোন কোন বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একমত হয়েছে এবং কোন বিষয়গুলোতে একমত হয়নি- তা জানিয়েছেন।
বিষয়টির জন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, লিখে রাখার কাজটি আমাদের পরবর্তীতে সাহায্য করেছে এবং সে বিষয়গুলোকে তৃতীয় ভাগে কিভাবে সন্নিবেশিত করা যায় সেটি নিয়ে আমরা বিবেচনা করেছি।
এ সময় কমিশনের সহ-সভাপতি আরও বলেন, অনুচ্ছেদ ধরে আলোচনা করার সময় এবং সুযোগ কোনোটাই আমাদের কাছে নেই। কিন্তু আপনাদের কাছে সংশোধনী ও সংযোজনীগুলো দেওয়া হয়েছে।এগুলো পড়ার পর যদি কোনো আপত্তি বা পরিবর্তন করার প্রয়োজন মনে করে থাকেন, তাহলে সেই মতামতটি আগাম কমিশনকে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকালের মধ্যে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজকের আলোচ্য সূচিতে রয়েছে- সংসদের নারী প্রতিনিধিত্ব, সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সম্পর্কিত বিষয়গুলো, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব অর্থাৎ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৩), রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ইলেক্টোরাল কলেজ, উচ্চকক্ষের গঠন সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি, নাগরিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি।
যেহেতু রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ক্ষমতার বিষয়টি আজ প্রথমবারই কমিশনের আলোচনায় তোলা হয়েছে- তাই এই বিষয়টি বাদে অন্যান্য অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজ এ আলোচনায় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত রয়েছেন।
সূত্র: বাসস
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0