Logo

সন্তানের প্রলোভন দেখিয়ে স্বর্ণালঙ্কার-অর্থ আত্মসাৎ

‘দোয়া কবুলের অলৌকিক গল্প’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে তার চোখ আটকে যায়। সেখানে তিনি যোগাযোগ করলে তাকে বলা হয় ‍‘রুকাইয়ার মাধ্যমে কাজ হাসিল করা হয়।’

ছবি সংগৃহীত

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: আফরোজা বেগমের দীর্ঘদিন বিয়ে হলেও কোনো সন্তান ধারণ করতে পারছিলেন না। সম্প্রতি ‘দোয়া কবুলের অলৌকিক গল্প’ নামে একটি ফেসবুক পেইজে তার চোখ আটকে যায়। সেখানে তিনি যোগাযোগ করলে তাকে বলা হয় ‍‘রুকাইয়ার মাধ্যমে কাজ হাসিল করা হয়।’

ওই পেইজ থেকে আফরোজাকে আরেকটি পেইজে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এবার তাকে সন্তান লাভের প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু শর্ত, তাকে কিছু স্বর্ণালঙ্কার ও অর্থ পাঠাতে হবে। সেগুলোতে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে আবার তাকে ফেরত পাঠানো হবে। সেই স্বর্ণালঙ্কার ব্যবহার করলেই সন্তান ধারণ করা যাবে।

এমন কথা সরল মনে বিশ্বাসও করেন আফরোজা। তবে তার পাঠানো স্বর্ণালঙ্কার এবং অর্থ আর তাকে ফেরত পাঠানো হয়নি। পরে আফরোজা বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছেন। তারপরই অভিযোগ করেন নিউমার্কেট থানায়। গ্রেফতার হয় তিন প্রতারক।

শনিবার (১৭ মে) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতারণার এই অভিনব ঘটনার কথা জানান রমনা বিভাগের পুলিশের ডিসি মাসুদ আলম।

এর আগে শুক্রবার (১৬ মে) সাভার ও মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তিন প্রতারককে গ্রেফতার করে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। তারা হলেন- আসিফুর রহমান (২০), আল আমিন (২৫) ও অনামিকা (২৪)।

এসময় প্রতারকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার, নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম জানান, নিউমার্কেট থানা এলাকার আফরোজা হোসেন নামে এক নারী গত ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তার ফেসবুক আইডি ব্যবহার করার সময় ‘দোয়া কবুলের অলৌকিক গল্প’ নামে একটি গ্রুপ দেখতে পান। সেই গ্রুপে একটি পোস্টে ‘তদবীর রুকাইয়া’ লেখা দেখতে পেয়ে তিনি পোস্টদাতার মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন।

এ সময় আইডি ব্যবহারকারী অজ্ঞাত মহিলা তাকে জানায়, তিনি তাকিয়ার মাধ্যমে অনেক কাজ হাসিল করেছেন। পরে সেই মহিলা তাকে তাহকিয়া নামে আরেকটি ফেসবুক আইডির লিংক দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। আফরোজা হোসেন তার কথামতো সেই ফেসবুক আইডির মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন। তখন তাকে জানানো হয়, তিনি সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

এক পর্যায়ে আফরোজা হোসেন তার বাচ্চা না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই প্রতারক তার কথামতো কাজ করতে বলেন। গত ১৮ জানুয়ারি সেই অজ্ঞাত মহিলা মেসেঞ্জারে একটি নাম্বার দিয়ে সেই নাম্বারে ছয় হাজার একশত টাকা বিকাশ করতে বলেন। তার কথামতো আফরোজা সরল বিশ্বাসে সেই নাম্বারে টাকা পাঠান। পরদিন সেই মহিলা আফরোজার ব্যবহৃত জামা কাপড়, শ্যাম্পু, সাবান, তেল ও স্বর্ণের গহনা কুরিয়ার করে তার কাছে পাঠিয়ে দিতে বলেন। আরও জানায়, সব কিছু ঝাড়ফুঁক দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফেরত দেওয়া হবে। সেগুলো ব্যবহার করলে তার বাচ্চা হবে এবং সব সমস্যা কেটে যাবে।

এরপর আফরোজা তার ব্যবহৃত ২৫ ভরি স্বর্ণ ও ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী এস এ পরিবহনের মাধ্যমে পাঠান। কিন্তু সেগুলো হাতে পাওয়ার পর তাকে ম্যাসেঞ্জার থেকে ব্লক করে দেওয়া হয়। পরে আফরোজা বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপরই আফরোজা বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি নিয়মিত মামলা করেন।

ডিসি মাসুদ আলম জানান, শুক্রবার বিকেলে সাভারের নিজ বাসা থেকে প্রথমে আসিফুরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে পৃথক অভিযানে শনিবার সকালে মোহাম্মদপুর থানার ৪০ ফিট বছিলা ফিউচার হাউজিংয়ের একটি বাসা থেকে আল আমিন ও অনামিকাকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিসি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ অনলাইন প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা মানুষের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে বাচ্চা না হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার নামে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও অর্থ সংগ্রহ করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

বাংলাফ্লো/এসকে

Related Posts বাংলাদেশ

Leave a Comment

Comments 0