বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকাঃ চাঁদাবাজির দায়ে রাজধানীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ সমন্বয়ক আটকের সংবাদ পড়ে ‘বেদনায় নীল হয়ে’ গিয়েছিলেন বলে নিজের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেন আজ সোমবার রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে।
আজ দুপুরে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ে যুবদলের মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল।
পাঁচ সমন্বয়ক আটকের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন পত্রিকা খুললাম, বেদনায় একেবারে নীল হয়ে গেছি। দেখলাম, পাঁচজন সমন্বয়কারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা জোর করে একটি বাড়ি থেকে একজন সাবেক সংসদ সদস্যের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা আদায় করেছে।’
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘এই কি পরিণতি, এটিই কি আমরা চেয়েছিলাম? দেশের মানুষ কি কেউ এটা চেয়েছিল? এত তাড়াতাড়ি যদি এই ঘটনা ঘটে, এক বছরও হয়নি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী?’
গুলশান থানার পুলিশের মাধ্যমে জানা যায় , ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক কমিটির নেতা আবদুর রাজ্জাক (রিয়াদ) ও কাজী গৌরব অপু সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বলতে থাকেন, টাকা না দিলে গ্রেপ্তার করাবেন। তখন শাম্মী আহমেদের স্বামী তাঁদের ১০ লাখ টাকা চাঁদা দেন। আবার গত শনিবার আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজি করতে যান। খবর পেয়ে পুলিশ আবদুর রাজ্জাকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। ওই দিন রাতে রাজ্জাকের সাথে আরও গ্রেপ্তার হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন (মুন্না) এবং সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আজ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ টেলিভিশনে, পত্রপত্রিকায় বারবার করে ডিবি অফিসের ছবি দেখানো হয়। আমাদের নেতা-কর্মীরা যাদের রগ তুলে নেওয়া হয়েছিল, হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, ঝুলিয়ে-পিটিয়ে মারা হয়েছিল, এমনকি আমাদের জুনিয়র লিডার টুকু সাহেবকে পর্যন্ত সেদিন ছাড় দেওয়া হয়নি। কই, আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা তো তাদের ছবি ছাপে না। আমি অনুরোধ করব, প্লিজ, কালোকে কালো বলবেন, সাদাকে সাদা বলবেন। এবং যার যে অবদান আছে, সেটাকে স্বীকার করবেন।’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন , ‘অন্তর্বর্তী সরকার পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপের চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার, যাঁরা প্রতিমুহূর্তে সংস্কারের কথা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছেন ইনডিরেক্টলি (পরোক্ষভাবে) যে আমরা কো-অপারেট (সহযোগিতা) করছি না, কথাগুলো সঠিক নয়। আমরা সারাক্ষণ তাদের এই সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সহযোগিতা করছি। সারাক্ষণ সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা এমন কিছু বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছি, এমন কতগুলো বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দলে লিপ্ত হয়েছি, যা বাংলাদেশকে আরও পেছনে ঠেলে দিতে পারে। এটি ফ্যাসিস্টদের শক্তি জোগাতে পারে, সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে নতুন করে বাংলাদেশে চেপে বসার।’
এছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার কেন শুরু হয়নি সেই প্রশ্ন তোলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এক বছর হয়ে গেল, হাসিনার বিচারকাজ পুরো শুরু হলো না কেন? এখন পর্যন্ত তো সেই সমস্ত হত্যাকারীদের, যারা প্রকাশ্যে হত্যা করেছে, বিবিসি তার অডিওতে দেখাচ্ছে, হাসিনা নির্দেশ দিয়েছে গুলি করো, লেথাল উইপন ইউজ কর। বিষয়টি এখন পর্যন্ত আসেনি।’
‘কিন্তু কেউই একবারের জন্য আত্মসমর্পণ করেননি। কথাটাকে জোর দিয়ে বলছি। কথাটা এ জন্য বলছি, আমাদের কোনো নেতাই কিন্তু সেদিন কোনো মুচলেকা দেননি।’
নিজেদের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অমানবিক নির্যাতন এর কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
বাংলাফ্লো/সিএস
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0