বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫

ফেব্রুয়ারিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে, যাতে ক্ষমতা জনগণের হাতে হস্তান্তর করা যায়।

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকেএম) থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সরকার ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে, যাতে ক্ষমতা জনগণের হাতে হস্তান্তর করা যায়। তিনি আশ্বাস দেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা এবং প্রকৃত মালিক জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া তার সরকারের অঙ্গীকার।

বুধবার (১৩ আগস্ট) ইউকেএম বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে এক আনন্দঘন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও নেগেরি সেমবিলান দারুল খুসুস রাজ্যের সুলতান তুংকু মুহরিজ ইবনি আলমারহুম তুংকু মুনাওয়িরর কাছ থেকে ড. ইউনূস সামাজিক ব্যবসায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানসূচক ডিগ্রি গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি তরুণ প্রজন্মের সাহস, আত্মত্যাগ ও ভবিষ্যৎ গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘এই স্বীকৃতি আমাকে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে আমার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গত বছর বাংলাদেশের বহু তরুণ সাহসিকতার সঙ্গে একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। শত শত ছাত্র-যুবক একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, যেখানে প্রত্যেকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারবে এবং ভয়, বৈষম্য ও অবিচার থেকে মুক্ত থাকবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থান বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় ও ভবিষ্যতের আশাকে নতুন অর্থ দিয়েছে। তার সরকার ন্যায়সংগত শাসনব্যবস্থা, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি ও সমান সুযোগের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজে মনোযোগী।

অর্থনৈতিক সংস্কারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট লক্ষ্য বিস্তৃত পরিকল্পনা এবং এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। একটি শক্তিশালী ও সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে উদ্যোক্তাদের সহায়তা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ড. ইউনূস আহ্বান জানান, বড় স্বপ্ন দেখতে, সাহসীভাবে চিন্তা করতে এবং ব্যর্থতাকে সাফল্যের পথে একটি ধাপ হিসেবে গ্রহণ করতে। তার মতে, প্রকৃত সাফল্য কেবল নিজের জন্য অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং অন্যদেরও সঙ্গে নিয়ে উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়াই শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকার।

তিনি আরও বলেন, ‘আজকের অন্যতম বড় বিপদ হলো– সম্পদ ক্রমশ কয়েকজন মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এর ফলে বৈষম্য ও অবিচার সৃষ্টি হয়। আমাদের যা দরকার, তা হলো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি– যেখানে সম্পদ ন্যায্যভাবে ভাগ হবে এবং প্রত্যেক মানুষ মর্যাদা ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাঁচার সুযোগ পাবে।’

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ টেনে তিনি পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প, হালাল অর্থনীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও উদ্যোক্তা উন্নয়নের মতো সম্ভাবনাময় খাতে সহযোগিতা জোরদারের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী জাম্ব্রি আব্দ কাদির ও ইউকেএম ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সুফিয়ান জুসোহ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাফ্লো/সিএস

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0