বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: আজ ২০ আগস্ট, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান দখল করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পথে তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দেওয়া এই মহানায়ককে আজও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে জাতি।
১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার আগা সাদেক রোডের ‘মোবারক লজ’-এ জন্মগ্রহণ করেন মতিউর রহমান। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল নরসিংদীর রায়পুরার রামনগর গ্রামে, যা বর্তমানে মতিনগর নামে পরিচিত। নয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ সন্তান। শৈশব থেকেই পড়াশোনায় ছিলেন মেধাবী।
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষে তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সারগোদা পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে জেনারেল ডিউটি পাইলট, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ও ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সালে রিসালপুর পিএএফ কলেজ থেকে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন পান।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকবাহিনীর কর্মকর্তা হয়েও তিনি ভৈরবে মুক্তিকামী যুবকদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তোলেন। সেখান থেকে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রতিরোধ সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তবে স্বাধীনতার জন্য আরও বড় ভূমিকা রাখার অঙ্গীকারে করাচিতে কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে যুদ্ধবিমান দখলের পরিকল্পনা করেন।
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট তিনি এক প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের সুযোগে বিমানটি দখল করে বাংলাদেশের আকাশপথে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর ধাওয়া ও বিমানের সহ-পাইলটের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি বিমানের বাইরে ছিটকে পড়ে শাহাদাৎ বরণ করেন। ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে শেষ হয় তাঁর অভিযাত্রা।
প্রথমে পাকিস্তান সরকার তাঁকে করাচির একটি কবরস্থানে দাফন করলেও ২০০৬ সালের ২৪ জুন তাঁর মরদেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। পরদিন পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনঃসমাহিত করা হয়।
দেশের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীরত্বের সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁর আত্মত্যাগ আজও মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।
বাংলাফ্লো/সিএস
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0