Logo

৫ আগস্ট কয়লা ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, বন্ধের পথে বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র

রবিবার (২৭ জুলাই) বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এসএস পাওয়ার-১ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ট্যান ঝেলিং বকেয়া বিলের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান বরাবরে দুই দফায় লিখিত চিঠি দিয়েছেন।

ফাইল ছবি

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি,

ঢাকা: বাঁশখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মজুদ কয়লা ফুরিয়ে যাবে ৫ আগস্টের মধ্যেই। এমতাবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কে কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, বিল না পাওয়ায় কয়লা আমদানি করতে পারছে না কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

রবিবার (২৭ জুলাই) বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এসএস পাওয়ার-১ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ট্যান ঝেলিং বকেয়া বিলের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান বরাবরে দুই দফায় লিখিত চিঠি দিয়েছেন।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, জুন ২০২৫ পর‌্যন্ত বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৩ হাজার ১৬৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। অবিলম্বে কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা না হলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যহত হতে পারে।

২৭ জুলাই তারিখে দেওয়া ওই পত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে কয়লা মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ৫ আগস্ট পর‌্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া যাবে। আপনার দপ্তর নিশ্চয়ই অবগত রয়েছে বিদেশ থেকে কোন মাদার ভেসেল নিশ্চিত করতে হলে কমপক্ষে ১ মাস পুর্বে এলসি নিশ্চিত করতে হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এলসি ইস্যুর জন্য ১০০ শতাংশ এলসি মার্জিন জমা রাখতে হয়। বারংবার অর্থ প্রাপ্তির জন্য তাগাদা প্রদান করা সত্ত্বেও অর্থের অভাবে কয়লার কোন বুকিং দিতে পারি নাই।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী ৫ আগস্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি অব্যাহত রাখা দরকার। চিঠিতে চুক্তির কথা মনে করে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ১০ লাখ মার্কিন ডলার বা সমতুল্য ১২ কোটি ২০ লাখ (ডলার ১২২ টাকা) টাকা পাওনা থাকলে বিপিডিবি কর্তৃক কোম্পানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণের অধিকার রহিত হয়ে যাবে। কোম্পানি বিপিডিবিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত থাকবে। তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকাকালীন সময়ে ক্যাপাসিটি প্রেমেন্ট প্রাপ্য হবে।

এর আগে ৭ জুলাই বিল প্রেমেন্ট দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ট্যান ঝেলিং। সেই চিঠির পর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করার হতাশা ব্যক্ত করেছেন পরের চিঠিতে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কোল পাওয়ার জেনারেশন পরিদপ্তরের পরিচালক মাকসুদুর রহমান বলেন, বকেয়ার কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা না। বিষয়টি ফাইন্যান্স বিভাগের তারা ভালো বলতে পারবে। তবে আমরাতো চাই তারা নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত রাখুক।

কোন কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প হাত রয়েছে কি-না। এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন তিনি।

দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন প্রতিদিনেই কমে যাচ্ছে। যার প্রভাবে গ্যাস ভিত্তিক অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেকার বসে থাকছে। সেই ঘাটতি সামাল দিতে সাশ্রয়ী কয়লার দিকে ঝুঁকে রয়েছে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় বাঁশখালীর মতো বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোদমে উৎপাদনে থাকা অবস্থায় সারা দেশে লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে গেলে কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখন পর‌্যন্ত সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিবেচনা করা হয় গ্যাসকে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস খরচ হয় ৪ টাকার মতো, আর কয়লা দিয়ে উৎপাদনে খরচ হয় ৭ টাকার মতো। আবার কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সাশ্রয়ী হিসেবে পরিচিত বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে বাঁশখালীর (চট্টগ্রাম) গন্ডামারা এলাকায় অবস্থিত বাঁশখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। যে কারনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের লিস্টকস্ট জেনারেশনের তালিকায় সবার আগে থাকে বাঁশখালীর নাম। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে জ্বালানি খরচ হয় প্রায় ৭ টাকার মতো। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ফার্নেস অয়েল দিয়ে সরবরাহ দিতে গেলে পড়বে প্রায় ১৮ থেকে ২০ টাকার মতো।

১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোমাত্রায় উৎপাদনে করলে মাসে প্রায় ৯৫ কোটি বিদ্যুৎ ইউনিট বিদ্যুৎ দিতে পারে। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ কয়লার পরিবর্তে ফার্নেস অয়েল থেকে পেতে হলে সরকারকে বাড়তি ৯৫০ কোটি টাকা গুণতে হবে। যা অন্তবর্তীকালীন সরকারের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হড়ে দাঁড়াতে পারে। শুধু আর্থিক দিক থেকে নয় কারিগরিভাবেও ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া বেশ জটিল।

বাংলাফ্লো/এনআর

Leave a Comment

Comments 0