বাংলাফ্লো প্রতিনিধি,
ঢাকা: বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৫’ এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস’ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ দেশ, যেখানে মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ৫৩টি খাদ্যসংকটপীড়িত দেশ ও অঞ্চলে প্রায় ২৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চরম খাদ্য অনিরাপত্তার মুখোমুখি। এদের মধ্যে সংখ্যার ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হলো নাইজেরিয়া, সুদান, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়া। আর জনসংখ্যার অনুপাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজা উপত্যকা, দক্ষিণ সুদান, সুদান, ইয়েমেন ও হাইতি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, গাজা উপত্যকার শতভাগ মানুষ বর্তমানে চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে। দক্ষিণ সুদান ও সুদানের অর্ধেকের বেশি এবং ইয়েমেন ও হাইতির প্রায় অর্ধেক জনগণও একই সংকটে দিন পার করছে।
বাংলাদেশের চিত্র:
বাংলাদেশে প্রায় ৪৪ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ ৭ কোটি ৭১ লাখ, এখনো স্বাস্থ্যসম্মত বা সুষম খাবার পায় না। যদিও ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬৫.৭ শতাংশ, অর্থাৎ সাত বছরে উন্নয়ন ঘটেছে প্রায় ১৯ শতাংশ পয়েন্ট, তবুও সংখ্যা এখনও উদ্বেগজনকভাবে বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সুষম খাবার না পাওয়ার হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় (পাকিস্তানের পর) এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।
অপুষ্টির দিক থেকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি মানুষ এখনও অপুষ্টির শিকার। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ১০ শতাংশের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম, আর ২৫ শতাংশ শিশু খর্বকায়, যা দীর্ঘমেয়াদী পুষ্টিহীনতার ইঙ্গিত দেয়। তুলনায় ভারতে এ হার যথাক্রমে ১৮ ও ৩৩ শতাংশ, এবং পাকিস্তানে ৭ ও প্রায় ৩৭ শতাংশ।
অর্থনীতি ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই প্রতিবেদনগুলো বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতির বাস্তব রূপ তুলে ধরেছে এবং তা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে খাদ্য মজুত যথেষ্ট রয়েছে, তবু এই তথ্যগুলো ভাবনার জায়গা তৈরি করছে।
প্রতিবেদনে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, ব্যক্তি বা পরিবারের পর্যায়ে অর্থ বা অন্যান্য সম্পদের অভাবে খাদ্যপ্রাপ্তির সীমিত সুযোগ।
বিশ্লেষকদের মতে, খাদ্য নিরাপত্তার উন্নয়নে শুধু উৎপাদন বাড়ানো নয়, বরং মানুষের আয়, খাদ্যের পুষ্টিমান এবং বিতরণব্যবস্থার উপরও নজর দিতে হবে।
বাংলাফ্লো/সিএস
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0