Logo

দুর্বল আরব আমিরাতকে 'শক্তিশালী' বানিয়ে এবার হেরেই গেল বাংলাদেশ

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণে আরেকটি ‘ছোট দল’ খ্যাত দেশের বিপক্ষের হার মেনে নিল বাংলাদেশের টাইগাররা।

আরব আমিরাতের খেলোয়াড়দের উল্লাস

স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: নিয়মিত টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিপক্ষে আরব আমিরাতের খেলার ফলাফল একতরফা হওয়ার সম্ভাবনাই দেখছিলেন ক্রিকেট ভক্তরা। কিন্তু ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-২০ ম্যাচে যখন সেই আরব আমিরাত প্রথম ম্যাচে হারে লড়াই করে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে তারা বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছে দুই উইকেটে।

র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা আরব আমিরাতকে ম্যাচ জিতিয়ে বাংলাদেশ মাঠ ছেড়েছে পরাজিত দল হিসেবে। আর এর সঙ্গে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণে আরেকটি ‘ছোট দল’ খ্যাত দেশের বিপক্ষের হার মেনে নিল বাংলাদেশের টাইগাররা।

সোমবার (১৯ মে) শারজাহয় সিরিজের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তানজিম তামিম ও লিটন দাস।

প্রথম ওভারেই ১৭ রান তুলে দলকে ভালো কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা।

মাত্র ৪.৫ ওভারেই বাংলাদেশ দলের স্কোর ৫০ অতিক্রম করে। পাওয়ার প্লে'র ছয় ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৬৬ রান।

ওপেনার তানজিদ হাসান যখন প্রথম ব্যাটার হিসেবে সাজঘরে ফিরেন তখন বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ ৯০ রান। তানজিদ হাসান তামিম ৩ ছক্কা ও আটটি চারের সাহায্যে ৩৩ বলে ৫৯ রান করে আউট হন।

এরপরে ৩৫ রানের জুটি গড়ে তোলেন অধিনায়ক লিটন দাস ও সাবেক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।

মাত্র ১০ ওভার এক বলে বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ ১০০ রান অতিক্রম করে যায়।

তবে দলীয় ১২৫ রানে দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে সাজঘরে ফিরেন লিটন দাস। ৩২ বলে এক ছক্কা ও তিন চারের সাহায্যে তিনি ৪০ রান করেন।

ইনিংসের ১২.৩ ওভারে ২ উইকেটে ১২৫ রান যখন দলীয় স্কোর তখন নাজমুল হোসেন শান্ত'র সঙ্গে জুটি বাধেন তাওহিদ হৃদয়।

১৫.৩ ওভারে বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ ছাড়ায় ১৫০ রান।

বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ যখন ১৬৩ রান তখন নাজমুল হোসেন শান্ত সাজঘরে ফিরেন ১৯ বলে ২৭ রান করে।

বাংলাদেশের রানসংখ্যা দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৬৩। এরপরে তাওহিদ হৃদয়ের সঙ্গে জুটি বেধে এগুচ্ছিলেন জাকের আলী।

তবে দলীয় সংগ্রহ যখন ১৯৭ তখন সাজঘরে ফিরেন জাকের আলী।

১৮. ৪ ওভারে বাংলাদেশ দলের চতুর্থ ব্যাটার যখন সাজঘরে ফিরেন তখনও মাঠে ছিলেন তাওহিদ হৃদয়।

আর তার উপরেই স্কোর বাড়ানোর জন্য ভরসা করা হচ্ছিল সেট ব্যাটার হিসেবে।

১৮.৫ ওভারে বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ ছাড়ায় ২০০ রান। ২০২৪ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই শ করেছিল বাংলাদেশ। টি–টোয়েন্টিতে আবার তা করতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হলো ২৪ ম্যাচ। আজ দারুণ শুরুর পর দুই শত রানের ল্যান্ডমার্ক স্পর্শ করে বাংলাদেশ।

ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরেন তাওহিদ হৃদয়।

২৪ বলে তিনটি বাউন্ডারি ও দুইটা ওভার বাউন্ডারিতে এই ব্যাটার করেন ৪৫ রান।

এরপরে আর উইকেট না হারালে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ২০৫। অর্থাৎ শেষ ওভারে বাংলাদেশ দল সংগ্রহ করে মাত্র চার রান।

আমিরাতের হয়ে ৪৫ রানে ৩ উইকেট নেন পেসার জাওয়াদউল্লাহ। ৩৬ রানে ২ উইকেট অভিষিক্ত সগীর খানের।

জয়ের জন্য ২০৬ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় আরব আমিরাতের ব্যাটাররাও।

উদ্বোধনী জুটিতে মাত্র ৪.৩ ওভারে ৫০ রান করে ফেলে আরব আমিরাতের দুই ওপেনার।

৫ ওভার শেষে আমিরাতের রানসংখ্যা হয়ে যায় কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৬।

অবশ্য এখানেই শেষ না।

মাত্র ৯.২ ওভারে দলীয় সংগ্রহ ১০০ ছুঁয়ে ফেলে কোনো উইকেট না হারিয়েই। এর মাঝে দলটির ওপেনার মুহাম্মদ ওয়াসিম ২৯ বলে ৬২ রানে এবং মুহাম্মদ জুহাইব ৩২ বলে ৩৭ রান করে।

তবে ইনিংসের দশম ওভারের প্রথম বলে উইকেট হারায় আরব আমিরাত।  

দ্বিতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়ে বাঁহাতি স্পিনার তানভীর আহম্মেদ সাজঘরে ফেরান মোহাম্মদ জোহাইবকে।

৩৪ বলে ৩৮ রান করে শামীম হোসেনের বলে ক্যাচ দিয়ে দিয়ে সাজঘরে মোহাম্মদ জোহাইব।

ঠিক তার পরের ওভারের প্রথম বলে অর্থাৎ ১১ তম ওভারেই দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে আরব আমিরাতের। লেগ স্পিনার রিশান হোসেনের ভেলকিতে ৪ বলে ২ রান করে সাজঘরে ফিরেন রাহুল চোপড়া।

খুব দ্রুত শেট হয়ে যাওয়ার ব্যাটার ও আরব আমিরাতের অধিনায়ক মুহাম্মদ ওয়াসিমকে সাজঘরে পাঠানোর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু রিশাদ হোসেনের বলে মুহাম্মদ ওয়াসিমের ক্যাচ ছাড়েন তাওহিদ হৃদয়।

ফলে ৩৩ বলে ৬৫ রানে করে জীবন পেয়ে ক্রিজে টিকে থাকে ওয়াসিম।

আর সেখান থেকে দলকে নিয়ে যান এক অবিস্মরণীয় মুহূর্তের দিকে।

উদ্বোধনী জুটিতে এক শ পেরিয়েছিলেন মুহাম্মদ জুহাইবকে সঙ্গে নিয়ে। তাঁর বিদায়ের পরও দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন জয়ের দিকে। মাঝে তাওহীদ হৃদয় ক্যাচ ফেলে দেওয়ার পর মনে হচ্ছিল, সেঞ্চুরিটা বুঝি আজ পেয়েই যাবেন। তবে তা থেকে ১৮ রান দূরে থাকতে জাকের আলীর দুর্দান্ত ক্যাচ হয়ে ফিরতে হয়েছে ওয়াসিমকে।

শরীফুলের বলে উইকেটের পেছনে বল তালুবন্দী করেন জাকের।

১৫ তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ১৪৯ রানের সময় আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন ওয়াসিম। ছয় ছক্কা ও ৯ বাউন্ডারির সাহায্যে ৮২ রান তুলে সাজঘরে ফিরেন এই ব্যাটার।

অর্থাৎ জীবন পাওয়ার পরে তিনি দলীয় সংগ্রহের যোগ করেন আরও ১৭ রান।

আগের ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে থাকা আসিফ খানকে সাজঘরে ফেরান অভিষিক্ত নাহিদ রানা। ১৫ তম ওভারের পঞ্চম বলে নাহিদ রানার হাতেই বল জমা দিয়ে সাজঘরে ফিরেন আসিফ খান। তবে তার আগে ১২ বলে দুই ছক্কার সাহায্যে যোগ করেন আরও ১৯ রান।

১৭তম ওভারে বোলিংয়ে এসে ছক্কা হজম করলেও পঞ্চম বলে আউট হব আরব আমিরাতের সগীর। একইরকমভাবে আবার তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন হৃদয়ের হাতে।

শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য আমিরাতের প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা অবশ্য বড় দল হিসেবে জয়ের ঘ্রাণ নেওয়াও শুরু করছিল। তবে বিধিবাম! কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে নবাগত সব দেশের জন্য প্রিয় প্রতিপক্ষ তা তখন অনেকেই ভুলে যেতে বসেছিলেন।

১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলে ছক্কার মার হজম করলেও তৃতীয় বলে নাহিদ রানা তুলে নেন আরিয়ান শর্মার উইকেট। আরব আমিরাতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮ ওভার শেষে ১৭৭। অর্থাৎ জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারের আরব আমিরাতের প্রয়োজন ছিল ২৯ রান।

১৯ তম ওভারের প্রথম বলেই শারফুকে সাজঘরে ফেরান শরিফুল ইসলাম। অবশ্য এবার আর ক্যাচ মিস করেন নি তাওহিদ হৃদয়।

৯ বলে ১৩ রান করা আলিশান শারফু আরব আমিরাতের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরত যান শরিফুল ইসলামের বলে।

তবে এরপরে এই ওভারের পঞ্চম বলে হায়দার আলী ছক্কা হাঁকান। এর পাশাপাশি এই ওভারেরই শেষ বলে আরও পাঁচ রান অতিরিক্ত দেন বেকাপ ফিল্ডার না রেখে স্ট্যাম্পে বল ছুড়ে মারতে গিয়ে।

শেষ ওভারে আরব আমিরাতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১২ রান।

এমন অবস্থায় তানজিম হাসান সাকিবের প্রথম ডেলিভারিটা হয় ওয়াইড।

ফলের জয়ের জন্য আরব আমিরাতের প্রয়োজন হয় ৬ বলে ১১ রান।

পরের বলে সিঙ্গেল রান নেওয়ার কারণে আরব আমিরাতের ৫ বলে ১০ রান দরকার ছিল জয়ের জন্য।

এমন অবস্থায় ওভার বাউন্ডারি হাঁকান পরাশর।

শেষ চার বলে যখন চার রান দরকার তখন পরাশরকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান তানজিম।

আরব আমিরাতের জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন তিন বলে চার রান।

এমন অবস্থায় ওভারের চতুর্থ বলে এক রান নেন মতিউল্লাহ।

আরব আমিরাতের যখন দুই বলে তিন রানের প্রয়োজন ঠিক তখনই নো বল করেন তানজিম।

এরপরের বলেই হায়দার আলী অবশ্য সেই দুই রান তুলে নেন।

ফলে এক বল হাতে রেখেই দুই উইকেটে ম্যাচ জিতে আরব আমিরাত।

আর নবাগত আরেকটি দলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জয় উপহার দিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। এর আগে হংকং, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দলগুলোও তো বাংলাদেশের বিপক্ষেই জিতেছে ম্যাচ।

অবশ্য ম্যাচ হারলেও সিরিজ হারে নি এখনো বাংলাদেশ। কারণ দুই ম্যাচের সিরিজ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দেশের বোর্ড আলোচনা করে একটি ম্যাচ বাড়ায়। আগামী পরশু শারাজায়ই হবে সিরিজ নির্ধারণী সেই ম্যাচ।

আর তাই আমিরাত আজকের ম্যাচটি জেতায় সিরিজে এখন ১–১–এ সমতা।

বাংলাফ্লো/এসবি

Related Posts খেলা

Leave a Comment

Comments 0