বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শোকের দিনে জয় নিয়ে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ

‘গতকাল কী হয়েছে আমরা সবাই জানি। এটা মেনে নেওয়া সহজ নয়। আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমরা খেলছি। আমিও একজন বাবা: অনুভূতিটা জানি। তাদের জন্য এক কঠিন ও আবেগের মুহূর্ত এটা। আমরা এখন কেবল দোয়া করতে পারি।’

ছবি: সংগৃহীত

স্পোর্টস ডেস্ক

ঢাকা: মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তে বহু হতাহতের ঘটনায় পুরো দেশই এখন শোকে কাতর। এমন শোকাবহ পরিবেশে আজ মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে মাঠে নেমেছে লিটন দাসদের। সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে মাঠে গড়ায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।

আজকের ম্যাচে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় আজ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। সন্তান হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত পিতামাতা আর দগ্ধদের আহাজারি সারাদেশে শোকের ছায়া ফেলেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার মাঝে ক্রিকেটাররা মাঠে নামলেও নিশ্চিতভাবেই তাসকিন-লিটনদের মন ব্যথায় ভারাক্রান্ত।

বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের ম্যাচ ঘিরে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়, খেলোয়াড় ও অফিসিয়ালরা পরেছেন কালো আর্মব্যান্ড। আজকের দিনটি রাষ্ট্রীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হওয়ায় স্টেডিয়ামেও বাজেনি কোনও সঙ্গীত।

বাংলাদেশের একাদশে দুটি পরিবর্তন। ওপেনিংয়ে ফিরেছেন নাঈম শেখ। তাকে জায়গা দিতে বাদ পড়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। তাসকিন আহমেদের বদলে এসেছেন শরিফুল ইসলাম।

পাকিস্তান দলে আবরার আহমেদের বদলে আহমেদ দানিয়ালের অভিষেক হচ্ছে।

মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শোকাবহ পরিবেশে টস হেরেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান আগে বোলিং নিয়েছে। ১-০ তে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করবে।

গতকাল সোমবার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান ট্র্যাজেডির ঘটনায় পাকিস্তানের একাধিক ক্রিকেটার সহমর্মিতা জানান। মঙ্গলবার মিরপুরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির আগে টসের পর সফররত দলের অধিনায়ক সালমান আগাও মর্মাহত। তিনি বললেন, ‘গতকালকের বিয়োগান্তক ঘটনা, এটা খুবই দুঃখজনক। তাদের জন্য আমি মর্মাহত এবং দোয়া রইলো। একটি জাতি ও পিসিবির প্রতিনিধি হিসেবে আমরা তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই।’

বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস ব্যথিত হৃদয় নিয়ে বললেন, ‘গতকাল কী হয়েছে আমরা সবাই জানি। এটা মেনে নেওয়া সহজ নয়। আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমরা খেলছি। আমিও একজন বাবা: অনুভূতিটা জানি। তাদের জন্য এক কঠিন ও আবেগের মুহূর্ত এটা। আমরা এখন কেবল দোয়া করতে পারি।’

শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমে মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে হয়েছিল নাঈম শেখকে। অপ্রস্তুত অবস্থায় ওই পজিশনে নেমে ভালো ব্যাটিংই করেছিলেন তিনি। ৭ উইকেট হারের ম্যাচে অপরাজিত ৩১ রান করে পরের ম্যাচে বাদ পড়েন নাঈম। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে তাকে পছন্দের পজিশন ওপেনিংয়ে খেলানো হলো। কিন্তু তিন ম্যাচ পর একাদশে ফিরে হতাশ করলেন বাংলাদেশের ব্যাটার। ৭ বল খেলে ৩ রান করে আউট তিনি।

১.৩ ওভারে ফাহিম আশরাফের বলে কিপারের মাথার ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে সহজ ক্যাচ হন নাঈম। ৫ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙলো। ৭ বল খেলে বিদায় নিলেন নাঈম।

টি-টোয়েন্টিতে চার-ছক্কা দেখার উদ্দীপনা থাকে প্রবল। মঙ্গলবার পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে সেই বাউন্ডারির দেখা মিললো ১৬তম বলে। লিটন দাস ২.৪ ওভারে সালমান মির্জাকে পয়েন্ট দিয়ে চার মারেন।

পরের ওভারে পারভেজ হোসেন ইমন একই পথে হেঁটে টানা ছয়-চার মারেন। বাংলাদেশ আগ্রাসী রূপ ধারণ করতেই আরেকটি উইকেট হারালো। পঞ্চম ওভারে ২০ রানে ভেঙে গেলো এই জুটি।

লিটন ৯ বলে ৮ রান করে মির্জার শিকার হন। ডিপ মিড উইকেটে জোরালো শট খেলে হাসান নওয়াজকে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আগের ম্যাচেও ১ রানে তাকে ফেরান মির্জা। ৪.১ ওভারে দলীয় ২৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারালো বাংলাদেশ।

তিন বল খেলে কোনও রান না করে তাওহীদ হৃদয় মাঠ ছাড়লেন। আগের ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করা বাংলাদেশের ব্যাটার রান আউট হয়েছেন। ৪.৪ ওভারে সালমান মির্জাকে মিড অফে মেরে দৌড় দেন তিনি। সালমান আগা ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বল নিয়ে সরাসরি থ্রোতে তাকে বোলারের প্রান্তে রান আউট করেন। ২৫ রানে ৩ উইকেট হারালো বাংলাদেশ।

পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে আহমেদ দানিয়েল প্রথম উইকেট পেলেন নিজের পঞ্চম বলেই। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বল হাতে নিয়ে বাংলাদেশের ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনকে আউট করলেন তিনি। ১৩ রান করে মিড অনে ফাহিম আশরাফকে সহজ ক্যাচ দেন ইমন। ৫.৫ ওভারে ২৮ রানে চতুর্থ উইকেট পড়লো। পাওয়ার প্লেতে তাদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৯ রান।

দশম ওভারে আক্রমণাত্মক মেহেদী হাসান। খুশদিল শাহকে প্রথম বলে চার মারেন। এক বল বাদ দিয়ে ছয় হাঁকান তিনি। তাতে ৯.৩ ওভারে বাংলাদেশ চার উইকেট হারিয়ে পঞ্চাশ পার করেছে।

মেহেদী হাসান ছক্কা মেরে বাংলাদেশের স্কোর পঞ্চাশ পার করেন। ২৮ রানে চার উইকেট হারানোর পর জাকের আলীর সঙ্গে তার জুটি জমে যায়। তার আরেক ছক্কাতে এই জুটি পঞ্চাশ ছাড়ায়। ১৩.৫ ওভারে দুজনে মিলে পঞ্চাশ পার করেন। পরের বলে মেহেদী লম্বা শট খেলতে গিয়ে লং অফ ফিল্ডার হাসান নওয়াজের ক্যাচ হন। ২৫ বলে দুটি করে চার ও ছয়ে ৩৩ রান করেন তিনি। ৪৯ বলে ৫৩ রানের জুটি ভেঙে যায়। ১৪ ওভারে ৮১ রানে পাঁচ উইকেট হারালো বাংলাদেশ।

শামীম হোসেন হতাশ করলেন দ্বিতীয় ম্যাচে। পাকিস্তানের অভিষিক্ত পেসার আহমেদ দানিয়েলের বল তার ব্যাটের নিচে লেগে স্টাম্পে আঘাত করে। ৪ বলে মাত্র ১ রান করে বোল্ড হলেন বাংলাদেশের ব্যাটার। ১৫.৩ ওভারে ৯৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারালো স্বাগতিকরা।

১৬.২ ওভারে বাংলাদেশ একশ ছোঁয়। তানজিম হাসান সাকিব চার মেরে এই মাইলফলকে নেন। পরের বলে তিনি বিদায় নিলেন। এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে উঁচু শট খেলেন তানজিম। ফখর জামান দারুণ ক্যাচে তাকে থামান। ৪ বলে ১ চারে ৭ রান করেন তানজিম। ১৬.৩ ওভারে ১০০ রানে সাত উইকেট হারালো বাংলাদেশ।

নিজের তৃতীয় বলেই ছক্কা মারেন রিশাদ হোসেন। কিন্তু পরের বলে তাকে থামতে হলো। ৪ বলে ৮ রান করে ১৮তম ওভারে আব্বাস আফ্রিদির শেষ ডেলিভারিতে বোল্ড হন তিনি। দলীয় ১১১ রানে বাংলাদেশ ৮ উইকেট হারালো।

শেষ ওভারের তৃতীয় বলে জাকের আলী ডাবলস নিতে গিয়ে শরিফুল ইসলাম বোলিং প্রান্তে রান আউট হন। আব্বাস আফ্রিদির পরের বলে ছক্কা মেরে ৪৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। শেষ বলে উঁচু শট খেলতে গিয়ে আউট হন জাকের। ৪৮ বলে ১ চার ও পাঁচ ছয়ে ৫৫ রান করেন তিনি।

পাওয়ার প্লেতে বড় বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। ৪ উইকেট হারিয়ে ২৯ রান করে তারা। সেখান থেকে জাকের আলী ও মেহেদী হাসানের ৫৩ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। মেহেদী ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩৩ রান করে আউট হওয়ার পর জাকের ৪৬ বলে তৃতীয় ফিফটি করে দলকে টেনে তোলেন। তার ৫৫ রানের ইনিংস সেরা পারফরম্যান্সে পাকিস্তানকে ১৩৪ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। শেষ বলে ১৩৩ রানে অলআউট হয় তারা।

পাকিস্তানের পক্ষে আহমেদ দানিয়াল, সালমান মির্জা ও আব্বাস আফ্রিদি দুটি করে উইকেট নেন।

মেহেদী হাসানের প্রথম পাঁচ বলে সুবিধা করতে পারেনি পাকিস্তান। শেষ বলে ৪ রানে উদ্বোধনী জুটি ভেঙে গেছে। ডিপ পয়েন্টে রিশাদ হোসেন দুর্দান্ত ডাইভে বল লুফে নিয়ে থ্রো করেন লিট্ন দাসের কাছে। সাইম আইয়ুব সিঙ্গেল নিতে বেরিয়ে গেলে ফিরতে পারেননি। লিটন স্টাম্প ভেঙে দেন। ৪ বলে ১ রান করেন সাইম।

সাইম আইয়ুব আউট হওয়ার পর নতুন ব্যাটার মোহাম্মদ হারিস তার প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ হলেন। শরিফুল ইসলামের বলে তিনি গোল্ডেন ডাক মারলেন। পাকিস্তানি ব্যাটার রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। ১.৩ ওভারে দলীয় ৯ রানে পাকিস্তান হারালো দুই উইকেট।

চতুর্থ ওভারে বাংলাদেশ পেলো পাকিস্তানের ৩ উইকেট। আগের ম্যাচের দারুণ পারফর্মার ফখর জামানকে ফেরালেন শরিফুল ইসলাম। নিজের দ্বিতীয় ওভারে তাকে লিট্ন দাসের ক্যাচ বানান বাংলাদেশি পেসার। কট বিহাইন্ডের আবেদনে আম্পায়ার প্রথমে আউট না দিলে বাংলাদেশ অধিনায়ক রিভিউ নেওয়ার আগে স্বেচ্ছায় প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ফখর। ৮ বলে ৮ রান করার পর তার গ্লাভস ছুঁয়ে বল জমা হয় লিটনের গ্লাভসে। ৩.২ ওভারে ১৪ রানে তিন ব্যাটার নেই পাকিস্তানের।

পঞ্চম ওভারে তানজিম হাসান সাকিব বল হাতে নিয়েই সাফল্য পেলেন। তৃতীয় বলে হাসান নওয়াজের ব্যাটের কানায় লেগে বল লিটন দাসের হাতে পড়ে। ৬ বলে ডাক মারেন নওয়াজ। পরের বলে মোহাম্মদ নওয়াজও একইভাবে উইকেট হারান। খুশদিল শাহ পরের বলে টিকে গেলে হ্যাটট্রিক হয়নি তানজিমের। ১৫ রানে ৫ উইকেট হারালো পাকিস্তান।

পাওয়ার প্লেতে ৫ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে ১৭ রান দিলো বাংলাদেশ। শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব দুটি করে উইকেট নেন।

১৫ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর খুশদিল শাহকে নিয়ে প্রতিরোধ বড় করতে পারেননি ফখর জামান। দশম ওভারে মেহেদী হাসান তাকে ফেরালেন। ৯ রান করে লং অনে তাওহীদ হৃদয়ের ক্যাচ হন পাকিস্তানি ব্যাটার। ২৩ বলের ইনিংস ছিল তার। ৩০ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারালো বাংলাদেশ।

নিজের শেষ ওভারে মেহেদী হাসান তার দ্বিতীয় উইকেট তুলে পেলেন। ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে খুশদিল শাহকে এলবিডব্লিউ করেন বাংলাদেশের স্পিনার। ৪৭ রানে পাকিস্তান সপ্তম উইকেট হারালো। খুশদিল ১৮ বলে ১ চারে ১৩ রান করেন।

১৫তম ওভারে খরুচে রিশাদ হোসেন। ফাহিম আশরাফ ও আব্বাস আফ্রিদি দুটি ছয় ও এক চারে তার ওই ওভারে ২০ রান তোলেন।

বাংলাদেশকে চোখ রাঙানো ফাহিম আশরাফ ও আব্বাস আফ্রিদির জুটি ভাঙলো। শরিফুল ইসলাম ১৭তম ওভারে বল হাতে নিয়ে সফল হলেন। দুজনের ২৭ বলে ৪১ রানের জুটি ভাঙলেন তিনি। ১৩ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ১৯ রান করে বোল্ড হন আব্বাস। একই ওভারের শেষ বলে ফাহিমকে ৩৮ রানে জীবন দেন তানজিম হাসান সাকিব।

বাংলাদেশকে অস্বস্তিতে ফেলেছে আহমেদ দানিয়াল ও ফাহিম আশরাফের জুটি। দুজনের চার-ছক্কায় তাদেরকে চোখ রাঙাচ্ছে পাকিস্তান। ১৬.১ ওভারে ৮৮ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর দুজন জুটি গড়েন। ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রান বেড়ে হয় ১২১। শেষ ৭ বলে দরকার ছিল ১৩ রানের। ওই ওভারের শেষ বলে ফাহিমকে ৫১ রানে থামান রিশাদ হোসেন। ৩২ বলে চারটি করে চার ও ছয়ের ইনিংস ছিল তার।

২০তম ওভারের ২য় বলে দানিয়ালকে ক্যাচ আউট করিয়ে সিরিজ নিজেদের করিয়ে নেয় বাংলাদেশ।

পাকিস্তানকে ৮ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। ১২৫ রানে পাকিস্তানকে অলআউট করেছে বাংলাদেশ।

বাংলাফ্লো/এসও

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0