বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত প্যানেল ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের’ সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী আবু বাকের মজুমদার।
মঙ্গলবার (০৯ সেপ্টেম্বর) টিএসসিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ অভিযোগ করেন তিনি।
বাকের বলেন, আমরা জানতে পেরেছি একটি কেন্দ্রে পূরণ করা ব্যালট দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। আবার শুনতে পেয়েছি শামসুন্নাহার হলে একটি নির্দিষ্ট দলের একটা বড় অংশের শিক্ষকরা ঢুকে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। এক সাংবাদিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা এমন আশঙ্কার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। আমরা শুনতে পাচ্ছি ইন্টারনালি ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এটি একটি নির্দিষ্ট পাওয়ার পলিটিকস পার্টির জায়গা থেকে করা হচ্ছে। আজকে এই আশঙ্কা মাঠে দেখা যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি কার্জন হলে ছিলাম। সেখানে পূরণকৃত ব্যালটটি কার নামে ছিল সেটি জানার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু জানতে পারিনি। তারা নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। ফলে ভোটে কোনো ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে কি না তার তীব্র শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
বাকের বলেন, আমরা মনে করি আজকের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নেবেন। জুলাই অভ্যুত্থানে এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা আবদান রেখেছে। নিরপেক্ষ ছাত্র সংসদ তাদের প্রাপ্য। আমরা মনে করি যারা এভাবে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার শিক্ষার্থীরা ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে রুখে দেবে।
তিনি অভিযোগ করেন, আমরা শুনতে পেয়েছি প্রতিটি হলে ৩০০ করে ভোট কনভার্ট করবে। তাহলে ৫ হাজার ৬০০ ভোট কনভার্ট করলে তাদের ভিপি জিএস জিতিয়ে ফেলতে পারবে। আজকে এ ধরনের এজেন্ডা কতটুকু বাস্তবায়ন করছে সেটা আপনাদের খোঁজ নিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।
নির্বাচনে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন, যা ডাকসুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে নারী ৬২ জন। অন্যদিকে, ১৮টি হলে ১৩টি পদে মোট ১ হাজার ৩৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) ও ছাত্র অধিকার পরিষদ আলাদা প্যানেল দিয়েছে। বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচন করছে দুটি প্যানেলে। এ ছাড়া স্বতন্ত্রদের পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে প্যানেল রয়েছে ১০টির মতো।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২০ হাজার ৮৭৩ এবং ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯০২ জন। আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে প্রত্যেক ভোটারের ডাকসু ও হল সংসদের মোট ৪১টি পদে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকছে। সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ ব্যালট যুদ্ধ বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা আট ঘণ্টা চলবে। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে গণনা শুরুর পর ফল প্রকাশ করবে। একজন ভোটার গড়ে ১০ মিনিট সময় নিলেও কোনো রকম বিঘ্ন ছাড়াই সব কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ে ভোট দিতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।
ভোট গণনা হবে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) মেশিনে। প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে এলইডি স্ক্রিনে ফল গণনা প্রদর্শিত হবে। সবশেষে সিনেট ভবন মিলনায়তনে সব কেন্দ্রের মোট ফল ঘোষিত হবে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ৮টি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে নিরাপত্তাচৌকি। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি থাকছে মোবাইল প্যাট্রল, ডগ স্কোয়াড, বিশেষায়িত টিম, বোম এক্সপোজাল ইউনিট, সোয়াত টিম, ডিবি (সাদা পোশাকে), সিসিটিভি মনিটরিং সেল এবং স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স।
আলোচনায় যারা: এবারের নির্বাচনে ১০টি প্যানেল ও বহু স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলেও মূলত তিনটি প্যানেল নিয়ে হচ্ছে বেশি আলোচনা। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং বাগছাস সমর্থিত প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন বলে বিভিন্ন জরিপ ও শিক্ষার্থীদের আলোচনায় উঠে এসেছে। এর বাইরে উমামা ফাতেমা ও বামজোট সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরাও আলোচনায় রয়েছেন। এর বাইরে স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থীও আলোচনায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে ভিপি পদে শামীম হোসেন, জিএস পদে আরাফাত চৌধুরী এবং এজিএস পদে তাহমীদ আল মুদাসসীর চৌধুরীর নাম বেশি শোনা যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাফ্লো/এফএ
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0