বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: রাজধানীর মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
এ ঘটনায় কমিটির সদস্যরা প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবেন এবং তা জনসম্মক্ষে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য এ অভিযোগ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
লিখিত বক্তব্য বিএনপি মহাসচিব বলেন, কুমিল্লার মুরাদনগরে সংঘটিত তিনটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড, কুমিল্লায় মসজিদের ইমাম হত্যা, খুলনায় যুবদল নেতা মাহবুব মোল্লাকে হত্যা ও রগকাটা, এমন হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে সকলের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সমমানের ছিলো কিনা সে প্রশ্নও তোলা যেতে পারে। পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মিটফোর্ডের হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত কার্যকর করার বিষয়ে আমাদের দলীয় অবস্থান সুদৃঢ় এবং অপরিবর্তিত। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানের জন্য আমরা উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা প্রকৃত সত্য উদঘাটন করবেন এবং তা জনসম্মক্ষে প্রকাশ করবেন। কিন্তু এবিষয় নিয়ে যারা রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট এবং জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ ও অনিশ্চিত করতে চান এবং প্রকারান্ত ফ্যাসিবাদ উত্থানের পথ কারা সৃষ্টি করতে চান, তাদেরকে চিহ্নিত করা ও প্রতিহত করার প্রত্যয়ও একইসঙ্গে উচ্চারণ করতে চাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, একটি বিবেকবান রাজনৈতিক দল হিসেবে সাম্প্রতিকালে রাজধানী ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় সংঘটিত লালচাঁদ সোহাগ হত্যাকাণ্ডে বিএনপি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও দৃষ্টামূলক শাস্তি দাবি করেছে। এই হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা বা উপস্থিতির প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে যাদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলার আলোকে আজীবন বহিষ্কারের মতো সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মামলার এজহারের অসংগতি প্রসঙ্গে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তাদের বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, তাদের উল্লেখিত তিনজন অপরাধীর নামের স্থলে এমন তিনজনের নাম সংযুক্ত করা হয় যাদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোাগ নেই। দুঃখজনক হলেও সত্যি, নৃশংসতার মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার তো দূরে থাক, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এখনও তাদের নাম-পরিচয় পর্যন্ত উদঘাটনে সক্ষম হয়নি। এছাড়াও আমরা বর্তমান সরকারের কাছে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচারের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গভীর শঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি সুপরিকল্পিতভাবে এই অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে এদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ , সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের সমার্থক রাজনৈতিক দল ও তার শীর্ষ নেতৃত্ব।
গুটিকয়েক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীর অপচেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না। যে তারুণ্য ফ্যাসিবাদের পতনে আমাদের সঙ্গে অগ্রসৈনিক ছিল, আজ দেশের প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রকারীদের কোনো অপচেষ্টাই আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা হতে পারবে না।
তিনি বলেন, সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পিত ফাঁদে পা না দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে বিনষ্ট করার যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। ফ্যাসিবাদের অনুপ্রবেশের যে কোনো ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র আমরা এই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হতে দেবো না। সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে সঙ্গে নিয়ে এদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংকল্পে আমরা বরাবরের মতোই প্রতীজ্ঞাবদ্ধ।
পতিত স্বৈরাচার আর কাপুরুষ ষড়যন্ত্রকারীদের মিলিত অপচেষ্টা, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠা ও আগামীর বাংলাদেশ গড়ার পথে যদি কোনো বাধা হয়ে আসে তবে সেটা আমরা ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে প্রতিহত করবো ইনশাআল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাফ্লো/এনআর
Comments 0