বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘আমাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে’

২০২৫ সালে জানুয়ারিতে ইংলিশ ভার্সনে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ছেলেকে ভর্তি করেন।

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: উসাই মং মারমা ও ডেজি মারমা। দুজনই শিক্ষক। তাঁদের একমাত্র সন্তান উক্য চিং মারমা। মা-বাবার স্বপ্ন একমাত্র ছেলে উক্য চিংকে মানুষের মতো মানুষ করাতে হবে। কিন্তু তাঁদের সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।

উসাই মং মারমা ও ডেজি মারমার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ের বাস্তবতা আর পাহাড়ের যে শিক্ষার ব্যবস্থা, সেটা দিয়ে ছেলে প্রতিযোগীতায় টিকবে না। তাই মান সম্মত শিক্ষা ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে ২০২৪ সালে একমাত্র সন্তান উক্য চিং মারমাকে বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে অ্যান্ড কলেজ থেকে ঢাকা নিয়ে মিরপুর শহীদ ক্যাডেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করেন তাঁরা। এরপর তারা ছেলেকে ২০২৫ সালে জানুয়ারিতে ইংলিশ ভার্সনে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করেন। সেখানে ভালোই চলছিল তাদের ছেলে উক্য চিংয়ের পড়াশোনা। সোমবার ক্লাশ চলাকালীন স্কুলের ভেতরে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে দগ্ধ হন উক্য চিং মারমা। নেওয়া হয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। সেখানে রাত ৩টায় মারা যায় উক্য চিং মারমা।

নিজ নিজ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেওয়ার সময় ছেলের দুর্ঘটনার খবর পান উক্য চিং মারমার বাবা উসাই মং ও মা ডেজি মারমা। খবর পেয়ে দুজনই সোমবার বিকেলে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর হয়ে রাত সাড়ে ৯টায় বিমানে ঢাকায় ছুটে যান। হাসপাতালে ছেলে হৃদয় স্পন্দন পান উসাই মং ও ডেজি মারমা। রাত ৩টায় ছেলের মৃত্যু হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে ছেলের মরদেহটি গ্রহণ করেন।

উসাই মং মারমা জানান, স্কুলের সর্বশেষ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছে তাদের একমাত্র ছেলে উক্য চিং মারমা।

সন্তানের মরদেহ নিয়ে ঢাকা থেকে রাঙামাটিতে নিজ বাড়িতে ফিরছেন উসাই মং মারমা। মোবাইলে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সোমবার মোবাইলে ছেলের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঢাকায় ছুটে গেছি। আমার ছেলে হোস্টেলে থাকত। হোস্টেল সুপারের মোবাইলের মাধ্যমে কথা হতো ছেলের সাথে। তাকে সর্বশেষ দেখেছি গত এপ্রিলে যখন দেখা করতে যাই। জানুয়ারিতে ভর্তির সময় আমি ও তার মা উপস্থিত ছিল।’

উসাই মং মারমা বলেন, ‘আমি রাঙামাটি রাজস্থলীর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত আবাসিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। উক্য চিংয়ের মা বান্দরবানের রুমায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমাদের স্বপ্ন ছিল ছেলেকে মানুষ করানো। মাইলস্টোনে ভালো ফলাফল করলে সেন্ট জোসেফ বা নটরডেমে ভর্তি করানো। কিন্তু সোমবারের দুর্ঘটনা সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল আমাদের।’

উসাই মং মারমা জানান, ছেলে উক্যর মরদেহ বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে গ্রহণ করে তাদের নিজ বাড়ি রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া খ্যাংদং পাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। আগামীকাল (বুধবার) দুপুর ২টায় বাঙ্গালহালিয়া হেডম্যান পাড়া কেন্দ্রীয় মারমা শ্মশানে শেষকৃত্য হবে তাঁর ছেলের।

উসাই মং মারমা আক্ষেপ করে বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ছেলের মরদেহ গ্রহণ করেছি। নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছে। আমাদের পাশে ঢাকায় এক আত্মীয় ছাড়া কেউই পাশে ছিল না।’

সরকার কিংবা স্কুল প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগীতা করা হয়েছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না না, শুধু মরদেহ নিয়ে আসছি। ওইখানে কী হচ্ছে না হচ্ছে...কি আর বলার ভাই...।’

রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। আমরা নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি। মরদেহ গ্রহণ করে রাজস্থলীর দিকে রওনা হয়েছে।আগামীকাল (বুধবার) দাহ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা নিয়ে আমাদের এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সরকারি কোনো সহায়তা আসলে আমরা পরিবারের কাছে পৌঁছিয়ে দেব।’

সোমবার ঢাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয় রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের খ্যাংদং পাড়ার উসাই মং মারমা ও ডেজি মারমার একমাত্র সন্তান উক্য চিং মারমা (১৩)। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

বাংলাফ্লো/এসকে

Post Reaction

👍

Like

👎

Dislike

😍

Love

😡

Angry

😭

Sad

😂

Funny

😱

Wow

Leave a Comment

Comments 0