বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জে পৃথক ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে দুই নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
শনিবার (২১ জুন) সংগঠনটি অবিলম্বে এ ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
সংগঠনের (আসক) সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৯ জুন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার এলাকা থেকে শেখ জুয়েল (৩৫) নামের এক যুবককে মাদকবিরোধী অভিযানে আটক করে পুলিশ। আটক অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের অভিযোগ, তিনি পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েই মারা গেছেন।
অন্যদিকে, ১৩ জুন রাতে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌর এলাকায় পুলিশের অভিযানে ফিরোজা বেগম (৫০) নামের এক নারীকে আটক করা হয়। গণমাধ্যম ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকলেও তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরদিন সকালে থানা হেফাজতেই তার মৃত্যু হয়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করলেও এখনও থানা ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি, যা ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে অত্যন্ত জরুরি।
আসক বলছে, উভয় ঘটনার ক্ষেত্রেই নিহতদের পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু পুলিশ তাদের বক্তব্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে হেফাজতে মৃত্যুকে শুরু থেকেই স্বাভাবিক বলে দাবি করছে— যা কোনও তদন্ত ছাড়াই একতরফা ব্যাখ্যা প্রদানের শামিল।
সংগঠনটি মনে করে, তদন্ত চলাকালে পুলিশের এ ধরনের অবস্থান গ্রহণ ন্যায়বিচারের পথে অন্তরায় হতে পারে।
আসক আরও বলেছে, এই ধরনের মৃত্যু ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী তদন্তযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। তাই নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত পরিচালনা করা অত্যন্ত জরুরি।
একইসঙ্গে উভয় ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ অবিলম্বে প্রকাশ, ভুক্তভোগী পরিবারকে নিরাপত্তা ও আইনগত সহায়তা প্রদান এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানায় সংগঠনটি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হেফাজতে মৃত্যুর এমন পুনরাবৃত্তি শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা হ্রাস করছে না, বরং মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি উদ্বেগজনক সংস্কৃতিকে পুষ্ট করছে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকের জীবন, মর্যাদা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর উচিত পেশাদারত্ব, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
বাংলাফ্লো/এনআর
Like
Dislike
Love
Angry
Sad
Funny
Wow
Comments 0