বাংলাফ্লো প্রতিবেদক
ঢাকা: গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে রাজধানী ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কর্মসূচি রূপান্তর হয় গণসমাবেশে। এতে অংশ নিয়ে ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, জনতার এই মহাসমুদ্র ফিলিস্তিন ও আল আকসার প্রতি আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ। ভৌগোলিকভাবে আমরা তাদের থেকে দূরে থাকলেও আজকের এই বিপুল উপস্থিতি প্রমাণ করে আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে বাস করে একটি করে ফিলিস্তিন।
এসময় ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন! প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি!—এসব স্লোগান দেন মিজানুর রহমান আজহারী।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হন তিনি।
এর আগে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের কর্মসূচি ‘মার্চ ফর গাজা’র আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
বিকাল ৩টার কিছু সময় পরে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুহাম্মাদ আবদুল মালেক।
বিশ্বজুড়ে যখন ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ-সমাবেশ হচ্ছে, তখন বাংলাদেশেও ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত হচ্ছে এই ব্যতিক্রমধর্মী সমাবেশ।
এদিন, চৈত্রের দুপুরে সূর্যে তপ্ত রোদকে উপেক্ষা করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেমেছে লাখো মানুষের ঢল। সবার হাতে দুই হাজার কিলোমিটার দূরের ভূমি ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা। গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। মূলমঞ্চ থেকে একটু পর পর ঘোষণা হচ্ছে, মাঠের ভেতরে আর কোনও যায়গা নেই। এই মুহূর্তে যারা যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানেই বসে পড়ুন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন দল, সংগঠন এবং ইসলামি বক্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উদ্যোগে কর্মসূচির আয়োজন করেছে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।
আয়োজকদের মতে, এই কর্মসূচির লক্ষ্য গাজার নিরস্ত্র জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ, বিশ্বজনমত গঠন এবং মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে সোচ্চার হওয়া।
আরও পড়ুন: মার্চ ফর গাজা: শেষ সময়েও জনস্রোত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে
মার্চ ফর গাজা: মিছিলে মিছিলে মুখরিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, প্রস্তুত মঞ্চ
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে যেতে হবে ৫ রুটে, মানতে হবে ৪ নির্দেশনা
মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে অংশ নেবে বিএনপি
এই আয়োজনে একাত্মতা প্রকাশ করে সমর্থন জানিয়েছেন দেশের বড় বড় ইসলামিক স্কলার, তারকা খেলোয়াড়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
এদিন, বিকেল ৩টা থেকে মূল আয়োজন শুরু হলেও এদিন সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ঢল নেমেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এরই মধ্যে মূল অনুষ্ঠানস্থলে চলে এসেছেন কয়েক হাজার মানুষ।
শেষ মুহূর্তে এসেও দেখা যায় থেমে নেই জনস্রোত। দুপুর পেরোলেও এখনও বিভিন্ন গেট দিয়ে মানুষ উদ্যানের ভেতর প্রবেশ করছেন।
শনিবার (১২ এপ্রিল) সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তরুণ, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের। অনেকেই হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা ও প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন— ‘গাজা শান্তি চায়’, ‘ইসরায়েল নিপাত যাক’, ‘ফিলিস্তিনের শিশুদের রক্ষা করো’।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের মুখে চোখে পড়ে ব্যতিক্রমী দৃশ্য— কারও গায়ে ‘Free Palestine’ লেখা টি-শার্ট, কারও হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা। কেউ মাথায় বেঁধেছেন রুমাল, তাতে আরবি ক্যালিগ্রাফিতে লেখা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।
কাঁধে পতাকা ঝুলিয়ে রাখা তানভির ইসলাম নামের এক তরুণ বলেন, গাজার মানুষ আমাদের মতোই মানুষ। তাদের ওপর এমন বর্বরতা দেখে ঘরে বসে থাকতে পারিনি। অন্তত একটা বার্তা দিতে এসেছি যে, আমরা তাদের পাশে আছি।
কেরানিগঞ্জ থেকে মিছিল নিয়ে আসা কলেজছাত্র মাহফুজ আলম বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই গাজায় যুদ্ধ দেখে আসছি। আমরা চাই এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীর চোখ খুলে যাক। গাজার শিশুদের মুখে হাসি ফেরানোর জন্য বিশ্ব নেতারা যেন কিছু করেন। গাজার মানুষের জন্য আমরা বুক পেতে দিতেও রাজি।
অন্যদিকে, বিপুল জমায়েত ঘিরে যেন কোনো ধরনের অনভিপ্রেত পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0