শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সৌদিআরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ পালিত হচ্ছে ঈদ

সৌদিআরবের সঙ্গে মিল রেখে এসব জেলার বেশকিছু এলাকার বাসিন্দারা রোজা শুরু করেন। সেই হিসেবে রাত পোহালেই ওইসব এলাকার মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন শুরু করবেন। সকালে ওই সব এলাকায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর, ভোলা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, পিরোজপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ আরও বেশ কিছু জেলার মানুষ।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

বাংলাফ্লো প্রতিবেদক

ঢাকা: শনিবার (২৯ মার্চ) সৌদিআরবে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় দেশটিতে আজ পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশটির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন বাংলাদেশের অন্তত ৮ জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।

এর আগে সৌদিআরবের সঙ্গে মিল রেখে এসব জেলার বেশকিছু এলাকার বাসিন্দারা রোজা শুরু করেন। সেই হিসেবে রাত পোহালেই ওইসব এলাকার মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন শুরু করবেন। সকালে ওই সব এলাকায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর, ভোলা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, পিরোজপুর, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম।

জামালপুরের ১৩ গ্রামে ঈদ উদযাপন

রোববার (৩০ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় সরিষাবাড়ী পৌরসভার বলারদিয়ার মধ্যপাড়া মাস্টার বাড়ি জামে মসজিদ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

ঈদ জামাতে ইমামতি করেন বলারদিয়ার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আজিম উদ্দিন।

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদ জামাতে পুরুষের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেন নারীরাও।

মাসুদ রানা নামে একজন স্থানীয় বলেন ‘আমরা চাঁদ দেখে রোজা নেই, চাঁদ দেখে ঈদ করি। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে বলেই আমরা সালাত আদায় করছি। আমরা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে মিল রেখে নয়, আমরা চাঁদের উপর নির্ভর করে নামাজ আদায় করি।’

হাসান আলী নামে আরেকজন স্থানীয় বলেন ‘আমার মতে, চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে ভৌগলিক সীমারেখার কোনো গ্রহনযোগ্যতা নেই।’

উপজেলার বলারদিয়ার, মূলবাড়ী, সাতপোয়া, সাঞ্চারপাড়, পঞ্চপীর, পাখাডুবি, বনগ্রাম, বালিয়া, বাউসী, হোসনাবাদ, পাটাবুগা, পুঠিয়ারপাড় ও বগারপাড় গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ এ নামাজে অংশ নেন।

চাঁদপুরে অর্ধশত গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর।

আজ রোববার সকাল থেকে হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফসহ জেলার প্রায় অর্ধশত গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে।

ঈদের প্রথম জামাত দরবার শরীফ মাঠে সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। এই জামাতে ইমামতি করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী।

মাওলানা মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘১৯২৮ সাল থেকে সাদ্রা দরবার শরিফের পীর সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রথা চালু করেন। মরহুম পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.)–এর অনুসারী মুসল্লিরা চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।’

ঈদের দ্বিতীয় জামাত সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা মাঠে সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা মুফতি আরিফ চৌধুরী।

মাওলানা মুফতি আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘শুধুমাত্র সৌদি আরব নয়, কোরআন ও হাদিসের আলোকে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আমরা রোজা পালন ও ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকি।’

ঈদের নামাজ আদায় করতে আসা আব্দুর রব বলেন, এখানে আমার বাবা-চাচাও ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এখন আমরা একসঙ্গে রোজা ও ঈদ উদযাপন করি।

রাসেল মুন্সি নামে এক মুসল্লি বলেন, সাদ্রা দরবার শরীফে আমি ২৫ বছর ধরে ঈদের নামাজ আদায় করছি। এই এলাকার না হলেও মরহুম পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.)–এর অনুসারী হিসেবে আমরা রোজা ও ঈদ উদযাপন করি।

হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, প্রতাপুর, বাসারা, ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর, মতলব উপজেলার দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী এবং কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলাসহ অর্ধশত গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে।

ভোলার ১৪ গ্রামে ৫ হাজার মানুষের ঈদ উদযাপন

প্রতি বছরের ন্যায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ ঈদ পালন করছেন ভোলার ৫ হাজার মানুষ।

রোববার (৩০ মার্চ) সকালে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন শরীয়তপরের নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরী দরবার শরীফ ও চট্রগ্রামের সাতকানিয়া মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরী দরবার শরীফ ও চট্রগ্রামের সাতকা‌নিয়ার মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা জানান, জেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ৫ হাজার অনুসারী রয়েছে তাদের। তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রেখেছেন এবং সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ ঈদ পালন করছেন।

তবে জেলার ৫ হাজার অনুসারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুসারী রয়েছে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়। এ উপজেলার টবগী ও মুলাইপত্তন গ্রামেই রয়েছে তাদের প্রায় ৩ হাজার অনুসারী।

বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী গ্রামের বাসিন্দা সুরেশ্বরী দরবার শরীফের অনুসারী মো. সুমন মিয়া বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ তারা ঈদ পালন করছেন। সকাল ৯টায় ওই গ্রামের পঞ্চায়েত বাড়ির দরজায় তাদের ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সুরেশ্বরী দরবার শরীফ ও সাতকা‌নিয়ার মির্জাখীল দরবার শরীফ অনুসারী এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলার মুলাইপত্তন গ্রামের আমিন মিয়া চৌকিদার বাড়ি দরজা জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতি বছরের মতো এবছরও তারা সৌ‌দি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রেখেছেন এবং সকালে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ভোলা সদর উপজেলা, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, তজুম‌দ্দিন, লালমোহন, চরফ‌্যাশন ও মনপুরা উপজেলার ১৪টি গ্রামে সুরেশ্বরী দরবার শরীফ ও সাতকা‌নিয়ার মির্জাখীল দরবার শরীফ অনুসারীরা ঈদ পালন করছেন।

এদিকে, ঈদ পালন করা অনুসারীরা বলছেন, সারা বিশ্বের মুসলমানরা একই সময় রোজা ও ঈদ পালন করা উচিত। তাদের মতে তারাই সঠিক সময়ে রোজা ও ঈদ পালন করছেন।

রংপুরে ১২০ পরিবারের ঈদ উদযাপন

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে ১২০ পরিবার।

রোববার (৩০ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলরা বড়বিল ইউনিয়নের বাগপুর পূর্ব মৌলভীপাড়া জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আর এতে ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুল বাতেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বাগপুর পূর্ব মৌলভীপাড়া গ্রামের মাওলানা আব্দুর রশীদ বাদশা ঈমাম হয়ে ২০ থেকে ৪০ জন মুসল্লিকে সঙ্গে নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা এবং ঈদ উদযাপন শুরু করেন। তখন থেকেই এ নিয়ম চলে আসছে সেখানে।

২০২২ সালে মাওলানা আব্দুর রশীদ বাদশার মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে মাওলানা আব্দুল বাতেন বাবার শুরু করা এই প্রথা ধরে রেখেছেন। বর্তমানে মাওলানা আব্দুল বাতেন ইমাম হয়ে ১২০টি পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছেন। জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে আশপাশের গ্রাম ও শহর থেকে মুসল্লিরা আসেন। এসময় সেখানকার নিরাপত্তায় গঙ্গাচড়া মডেল থানার পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়।

ঈদের নামাজ আদায় করা স্থানীয় বাসিন্দা মোছাদ্দেক আলী ও রহিদুল ইসলাম বলেন, ছোট থেকে আমিও এখানে বছরে দুই বার ঈদের নামাজ আদায় করতে আসি। আমার জানা মতে, শুধু গঙ্গাচড়ার এই গ্রামে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালন করা হয়।

এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল এমরান বলেন, বড়বিল ইউনিয়নের একটি গ্রামের প্রায় ১২০টি পরিবার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় করেছে। তারা যেন সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন সে লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। কোনো প্রকার সমস্যা হয়নি সেখানে।

বরিশালের ২০ হাজার পরিবারে ঈদ উদযাপন

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বরিশাল বিভাগের ২০ হাজার পরিবারের প্রায় ১ লাখ মুসল্লি ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন।

রোববার (৩০ মার্চ) সকালে নগরীর সাতটিসহ বিভাগের ৭৩টি মসজিদে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন।

তথ্যমতে, সকাল সাড়ে আটটায় নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁজকাঠী হাজীবাড়ি শাহসুফী জাহাগীরিয়া জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও নগরীর তাজকাঠি, জিয়া সড়ক, টিয়াখালী, হরিনাফুলিয়া এবং সদর উপজেলার সাহেবেরহাট এলাকায় ঈদের জামাত হয়েছে। এরমধ্যে নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হরিনাফুলিয়ার চৌধুরী বাড়ি শাহসুফী মমতাজিয়া জামে মসজিদে সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

নগরী ছাড়াও বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরা, কেদারপুর, মাধবপাশাসহ ছয়টি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার, মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় এবং বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন, পতাং, লাহারহাট গ্রামে চন্দনাইশ এলাহবাদ জাহাগীরিয়া শাহছুফি দরবার শরীফের আড়াই হাজার অনুসারী রয়েছেন। ওইসব পরিবারগুলোতে আজ রোববার আগাম ঈদ উদযাপিত হচ্ছে।

ব‌রিশাল নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হরিনাফুলিয়া চৌধুরীবাড়ি শাহ মমতাজিয়া জামে মসজিদের সভাপতি মমিন উদ্দিন কালু জানান, আমা‌দের ওযার্ডে আগাম ঈদ পালন কর‌ছেন প্রায় এক হাজার পরিবার।

বরিশাল নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠীর হাজী বাড়ির জাহাগিরিয়া শাহসুফী মমতাজিয়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আমীর হোসেন জানান, এ ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাগরদী, তাজকাঠীসহ আশপাশের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার ঈদ পালন করছেন।

সাতক্ষীরার ২০ গ্রামে ঈদ উদযাপন

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে সাতক্ষীরার অন্তত ২০টি গ্রামে ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (৩০ মার্চ) সকাল ৮টায় সদর উপজেলার ভাড়ুখালি আহলে সুন্না আল জামাত জামে মসজিদে ঈদের অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা হাববুর রহমান।

এছাড়া সাতক্ষীরা সদরের বাউখোলা, তালা উপজেলার জেঠুয়া, ইসলামকাঠি, শ্যামনগর উপজেলার গোয়াল চত্বরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে একই সময়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

মাওলানা হাববুর রহমান বলেন, প্রতিবছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আমরা বিশ্বাস করি, সারা বিশ্বের মুসলমানদের সঙ্গে একসঙ্গে ঈদ পালন করাই উত্তম।

স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, গত এক যুগ ধরে তারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে আসছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও রোববার সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন। ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লিরা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় দিনটি উদযাপন করেন।

যদিও বাংলাদেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী ঈদ একদিন পর উদযাপিত হবে, তবে এই ২০টি গ্রামে আগেভাগেই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাড়ুখালী আহলে সুন্নাত আল জামায়াত জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। সেখানে ইমামতি করেন মাওলানা মাহবুবুর রহমান। একই সময়ে বাওখোলা পূর্বপাড়া জামে মসজিদেও ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মোহাব্বত আলী।

লক্ষ্মীপুরে ১১ গ্রামে ঈদ উদযাপন

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগেই ঈদুল ফিতর উদযাপন করছে লক্ষ্মীপুরের ১১ গ্রামের মানুষ।

রোববার (৩০ মার্চ) সকাল ১০টায় রামগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব নোয়াগাঁও তালিমুল কোরআন নুরানি মাদরাসা ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেন শতাধিক মুসল্লি।

এছাড়া রামগঞ্জ উপজেলার ৪টি ও রায়পুর উপজেলার একটি মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, বারোঘরিয়া, হোটাটিয়া, শরশৈই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপাসহ ১১টি গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছে। তারা পৃথকভাবে নিজ নিজ এলাকার মসজিদে ঈদের নামাজের আয়োজন করেছেন। সকাল সাড়ে ৭টায় রামগঞ্জ পৌরসভার জাহাঙ্গীর টাওয়ার, ১০টায় পূর্ব বিঘা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও পশ্চিম নোয়াগাঁও জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।

স্থানীয় রাজমিস্ত্রী আব্দুর রহিম ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী জানান, ছোটবেলা থেকে বাপদাদার সঙ্গে ঈদের নামাজ সৌদির সঙ্গে মিল রেখে তারা আদায় করেন। আবার সৌদির সঙ্গে মিল রেখেই রোজা ভাঙেন। পৃথিবীর কোথাও একবার চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ উদযাপন করতে হবে। সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেছে। এতে তারা সারাবিশ্বের সঙ্গে মিল রেখেই মাজহাব অনুযায়ী ঈদ পালন করছেন। ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ-পূর্ব তালিমুল কুরআন মাদরাসার ঈদগাহের খতিব মাওলানা আমিনুল ইসলাম খান বলেন, প্রত্যেকটি মাজহাবে একসঙ্গে সারাবিশ্বে ঈদের জামাত করার ফতোয়া রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকা ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে। আগে যোগাযোগের উন্নত মাধ্যম ছিল না। এজন্য মানুষ সৌদি আরবের এক দিন পর ঈদ করতো। কিন্তু এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত। এতে আমরা পিছিয়ে থাকব কেন।

দিনাজপুরে ঈদ উদযাপন

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দিনাজপুরের বেশ কয়েকটি উপজেলায় ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (৩০ মার্চ) সকাল ৮টায় দিনাজপুর শহরের চারুবাবুর মোড়ের পার্টি সেন্টারে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

নামাজে সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন। এই জামাতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও নামাজ আদায় করেছেন।

নামাজের ইমামতি করেন দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মহেশপুর ফ্যামিলি কেয়ার মহিলা মাদরাসার পরিচালক মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাক।

এ ছাড়া দিনাজপুর শহর, চিরিরবন্দর, বিরল, কাহারোল, বিরামপুর উপজেলাসহ বেশ কিছু এলাকায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে কয়েক শ পরিবার।

উল্লেখ্য, দিনাজপুর জেলায় ২০০৭ সাল থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ পড়ার রীতি শুরু হয়। প্রথম দিকে মুসল্লির সংখ্যা কম থাকলেও প্রতি বছর তা বাড়ছে।

বগুড়ায় বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

রোববার (৩০ মার্চ) সকালে জেলার তিন উপজেলার তিনটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলার গাবতলী উপজেলার রেল স্টেশনের একটি মাঠে অর্ধশত মুসল্লিরা সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। এছাড়াও ধুনট উপজেলার হাশুখালী গ্রামে ও সোনাতলার কালাইগাটা গ্রামে কয়েকবাড়ির মুসল্লিরা সকাল সাড়ে ৭টায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এতে ইমামতি করেন হাফেজ ওয়ালীদ ইসলাম।

শিশু ও নারীরা জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। এসময় অপ্রীতিকর ঘটনায় এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মুসল্লিরা দাবি করেন, পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা হারাম। সারা পৃথিবীতে ঈদ হচ্ছে, সে হিসেবে আমরাও পালন করছি। এর আগেও ঈদ পালন করেছি।

একই তারিখে রোজা রাখা ও ঈদ উদ্‌যাপন করার জন্য সব মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান নামাজে আসা মুসল্লিরা।

বগুড়ার গাবতলী মডেল থানা পুলিশের ওসি আশিক ইকবাল জানান, বেশ কয়েকজন মুসল্লি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী আজই ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন। গাবতলীতে ঈদ জামাত শান্তিপূর্ণভাবে অনু্‌ষ্ঠিত হয়েছে।

সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঝিনাইদহে ঈদের নামাজ আদায়

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছে কয়েকটি গ্রামের মুসল্লিরা।

রোববার (৩০ মার্চ) সকাল ৮টায় উপজেলা শহরের ফুটবল মাঠ এলাকায় এ ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজের ইমামতি করেন মাওলানা রেজাউল ইসলাম।

মুসল্লিরা জানায়, সৌদি আরবের সঙ্গে মিলে রেখে তারা কয়েক বছর ধরে ঈদ জামাতের আয়োজন করে আসছেন। এবারও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চোরকোল, শ্যামনগর, যাদবপুর, হরিণাকুন্ডু উপজেলার দখলপুর, নারায়নকান্দি, বৈঠাপাড়া, বোয়ালিয়া, চটকাবাড়ীয়া, পারফলসী, পায়রাডাঙ্গা এবং শৈলকুপা উপজেলার ভাটইসহ জেলা শহর থেকে আগত মুসল্লিরা এ ঈদের নামাজ আদায় করেন।

নামাজ শেষে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

বাংলাফ্লো/এসবি

Leave a Comment

Comments 0