নিজস্ব প্রতিবেদক : শীত শেষে ফাল্গুনের শুরুতেই হালকা গরম পড়ায় রাতে ফ্যান চালাতে হচ্ছে। এতেই শুরু হয়েছে লোডশেডিং। মার্চে রমজান মাসের সঙ্গে তাপমাত্রা আরও বাড়বে, পাশাপাশি শুরু হবে সেচ মৌসুম। সব মিলিয়ে মার্চ-এপ্রিলে বিদ্যুতের চাহিদা দেড় গুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ সম্ভব হবে না। এ বছর গরমে তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ ঘাটতির শঙ্কা রয়েছে। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ দাবি করছে, লোডশেডিং দেড় হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করেছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে রমজান ও সেচ মৌসুমে সংকট নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ বছর গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। অন্যদিকে, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের জোগান কমছে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।
লোডশেডিং শুরু
গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই লোডশেডিং শুরু হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) তথ্যমতে, গত সোমবার রাত ৯টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ১৭০ মেগাওয়াট, যার মধ্যে ১০২ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। দিন দিন এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা
বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত উৎপাদন সক্ষমতা ২৭ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে সাত হাজার মেগাওয়াট এবং ফার্নেস অয়েল থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ভারত থেকে আমদানি করা হয় ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট এবং সৌর ও জলবায়ু থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে।
জ্বালানি সংকট
রমজান ও গরমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেড় লাখ টন ফার্নেস অয়েল, ১৫-১৬ হাজার টন ডিজেল এবং দৈনিক ৪০ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে দিনে ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ৯০ থেকে ৯২ কোটি ঘনফুট। রমজানে এই সরবরাহ ১৩০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তবে তা যথেষ্ট নয়।
বকেয়া সমস্যা
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বকেয়া বিল ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কোম্পানিগুলো সময়মতো অর্থ না পেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে। এ পরিস্থিতিতে রমজান ও গ্রীষ্মে গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদা পূরণ করা কঠিন হবে।
শহর ও গ্রামে সমান লোডশেডিং
এবার শহর ও গ্রামে সমান হারে লোডশেডিং বণ্টন করা হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা জানিয়েছেন, গরমে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হতে পারে এবং এটি শহর ও গ্রামে সমানভাবে বণ্টন করা হবে।
গ্যাস সংকট
রমজান ও গরমে বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাসের সংকটও তীব্র হবে। বিশেষ করে আবাসিক গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হবেন। বর্তমানে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪২০ কোটি ঘনফুট, কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি ঘনফুট। রমজানে এটি ২৮০ থেকে ২৮৫ কোটি ঘনফুটে উন্নীত করা হলেও তা চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
সাশ্রয়ী ব্যবস্থা
সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উপর জোর দিচ্ছে। এসির তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নির্ধারণ করলে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব। এ লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ বিভিন্ন খাতে নির্দেশনা জারি করবে।