বাংলাফ্লো খেলাধূলা
ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে মাঠের কোনো কিছুই ভালো যাচ্ছে না ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। নতুন স্টেডিয়ামের ঘোষণা করলেও সেখানে যারা খেলবে তারা কিছুতেই যেনো ধারাবাহিক হতে পারছিল না ঘরের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে। নতুন হেড কোচের স্টাইলের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে নেওয়া সময়ে ইতিহাসের সবচাইতে বাজেভাবে মৌসুম শেষ করাটাও প্রায় নিশ্চিত ব্রুনো ফার্নান্দেজদের।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপা লীগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে খেলতে নেমেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
একসময় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দুর্গ বলে পরিচিত এই স্টেডিয়ামে অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে ভালো সময় যাচ্ছে না দলটির। প্রিমিয়ার লীগে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও হারতে হয়েছে হ্যারি ম্যাগুয়েরোদের।
তাই ফ্রেঞ্চ ক্লাব লিও’র বিপক্ষে মাঠে নামার আগে উৎসব হল ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। ঘরের মাঠে প্রথমবার তিফো উন্মোচন করে ঐতিহ্যবাহী দলটি।
কিন্তু সেই উৎসব আর একটু হলেও ভেস্তে যেতে বসেছিল বেদনায়।
ইউরোপা কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে অলিম্পিক লিওঁর বিপক্ষে একটা সময় ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও স্বাগতিকরা পিছিয়ে পড়েছিল ৪-২ গোলে। স্টেডিয়াম থেকে অনেক দর্শক তখন ঘরমুখো। কারণ প্রিয় দলের এমন পরাজয় তো আসলে চোখে দেখা সম্ভব না অনেকের জন্য।
ঘরের মাঠে যখন ভক্তদের চোখে পানি ঠিক তখনই আবার ঘুরের দাঁড়ানোর গল্প লেখা।
যারা স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে গেছে তারা বোধ হয় ফার্গি টাইমের ওপরও ভরসা হারিয়ে ফেলেছিল। আর যারা ভরসা রেখে খেলে দেখেছে তারা ম্যাচ শেষে সাক্ষী হয়ে গেছে এক মহাকাব্যিক ম্যাচের।
খেলা অতিরিক্ত সময়ে যেখানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিদায় প্রায় নিশ্চিত ঠিক তখন শেষ পাঁচ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেস, কোবি মেইনু এবং হ্যারি ম্যাগুইারের অসাধারণ তিনটি গোল ইউনাইটেডকে নাটকীয়ভাবে এগিয়ে দেয়।
আর এই তিনজনের নৈপুন্যে অতিরিক্ত সময়ে শেষ মুহূর্তের গোলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হারিয়ে দিয়েছে লিওঁকে।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে এক নাটকীয় লড়াইয়ে লিওঁকে ৭-৬ মোট স্কোরে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইউরোপীয় ইতিহাসে ম্যাচে দিরে আসা আরেকটি ঐতিহাসিক অধ্যায়।
খেলার প্রথমার্ধ – নিখুঁতসূচনা
খেলা শুরুর আগেই 'সার অ্যলেক্স ফার্গুসন স্ট্যান্ড'-এ বিশাল একটি 'টিফো' দিয়ে খেলোয়াড়রা মাঠে প্রবেশ করে। যেখানে ক্লাবের অতীত ইউরোপীয় সাফল্যগুলো তুলে ধরা হয়।
দর্শকরা 'ইউনাইটেড রোড' ‘গ্লোরি গ্লোরি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড’ গাইতে থাকে। আর গানে গলা মিলিয়ে সবাই খেলোয়াড়দের উৎসাহ বাড়াতে থাকে।
ফলাফল হিসেবে দেখা যায়, শুরুর বাঁশি বাজার সাথে সাথে রেড ডেভিলরা মাঠে আক্রমণ শুরু করে।
ক্যাপ্টেন ফার্নান্দেস চমৎকার এক পাস দেন গার্নাচোকে, যিনি বক্সে ঢুকে কাট-ব্যাক করেন উগার্তের উদ্দেশে – এবং গোল!
হ্যারি ম্যাগুয়ের এরপর চেরকি ও আলমাদার দুটি শট ব্লক করে ইউনাইটেডকে রক্ষা করেন। ওনানা কয়েকটি সেভ করেন আত্মবিশ্বাসের সাথে।
৪৫ মিনিটে আবার আক্রমণে যায় ইউনাইটেড। হ্যারি ম্যাগুয়েরোর লম্বা পাস পেয়ে দালোত দারুণভাবে গোল করেন এবং প্রথমার্ধ ২-০ ব্যবধানে শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধ – শেষমুহূর্তেরধাক্কা
দ্বিতীয়ার্ধে গার্নাচো ও ডোরগু ম্যাচে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করে। এরপরে লিওঁ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। ৭১ মিনিটে লাকাজেত্তের হেড থেকে টোলিসো গোল করেন। এরপর ৭৮ মিনিটে টাগলিয়াফিকো গোল করে সমতা আনেন।
শেষ মুহূর্তে টোলিসো দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়েন। ফার্নান্দেস একটি ফ্রি-কিক সরাসরি গোল করার চেষ্টা করলেও লিওঁর গোলরক্ষক তা ঠেকিয়ে দেন। অতিরিক্ত সময়ের জন্য ম্যাচ বাড়ে।
অতিরিক্ত সময় –
লিওঁর বেদনাও দর্শকদের বিস্ময় আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটের মহাকাব্যিক ম্যাচ জয়
১০৫ মিনিটে চেরকি গোল করে লিওঁকে এগিয়ে দেন। এরপর লুক শ-এর ফাউলে পেনাল্টি থেকে লাকাজেত্ত গোল করেন – লিওঁ ৪-২!
কিন্তু তখনও গল্প বাকি ছিল।
ভার রিভিউর পর ক্যাসেমিরোর উপর ফাউলের কারণে ইউনাইটেড একটি পেনাল্টি পায় এবং ফার্নান্দেস গোল করেন।
এরপর ক্যাসিমেরোর অ্যাসিস্ট থেকে কোবি মাইনু অসাধারণ এক কার্লিং শটে সমতা ফেরান।
একেবারে শেষ মুহূর্তে, ক্যাসেমিরোর ক্রস থেকে হ্যারি ম্যাগুয়ের হেড করে ইউনাইটেডকে এগিয়ে দেন!
আবেগ, উচ্ছাস আর শেষ মুহূর্তের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে জয়ী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ইউরোপা লীগের সেমিফাইনালে ১ মে মাঠে নামবে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টটিতে কোনো ম্যাচ না হারা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
পাগলাটে রাতে ৯ গোলের রোমাঞ্চ জিতে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন গ্যালারির দর্শকরাও। এ ধরনের নাটকীয় কিছু বহুদিন দেখেননি ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের দর্শকরা। দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ অগ্রগামিতায় ইউরোপার সেমিফাইনালেও পৌঁছেছে ইউনাইটেড। গ্যালারিতে বসে প্রিয় দলের নতুন প্রজন্মকে এভাবে লড়াই করতে দেখে গর্বই করার কথা স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের।
এছাড়া ইউরোপার সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে টটেনহাম ও অ্যাথলেতিক ক্লাব। দ্বিতীয় লেগে টটেনহাম ১-০ গোলে হারায় ফ্রাঙ্কফুর্টকে, তাদের অগ্রগামিতা ২-১। অপর ম্যাচে অ্যাথলেতিক ২-০ গোলে হারায় রেঞ্জার্সকে। দুই লেগ মিলিয়ে তাদের অগ্রগামিতা ২-০।
ম্যাচের বিবরণ
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড:
ওনানা; মাজরাউই (শ-৪৬), ম্যাগুয়েরো, ইয়োরো; দালোত, ক্যাসেমিরো, উগার্তে (মাউন্ট ৮৬), দোরগু (আমাস ১০০); ফার্নান্দেস (অধিনায়ক), গার্নাচো (এরিকসেন ১০০); হজলুন্ড (মেইনু ৮৬)
অব্যবহৃত বিকল্প: বায়িন্দির, হিটন, কামাসন, কুকোনকি, লিন্ডেলফ, মুরহাউস।
গোল: উগার্তে ১০’, দালোত ৪৫+১’, ফার্নান্দেস ১১৪’ (পেন), মেইনু ১২০’, ম্যাগুইর ১২০+১’
বুকিং: গার্নাচো, ম্যাগুইর, ইয়োরো
লিওঁ:
পেরি; মেইটল্যান্ড-নাইলস, মাত্তা, নিয়াখাতে, তাগলিয়াফিকো (কালেতা-কার ১১৫); টোলিসো (অধিনায়ক), আকুউকু (টেসম্যান ৫৫); ভেরেতু (লাকাজেত্ত ৫৫), চেরকি (আবনার ১০৬), আলমাদা; মিকাউতাদজে (ফোফানা ৬৪)
অব্যবহৃত বিকল্প: ডেসকাম্পস, দিয়ারা, কুম্বেদি, ওমারি, মাতিচ
গোল: টোলিসো ৭১’, তাগলিয়াফিকো ৭৮’, চেরকি ১০৫’, লাকাজেত্ত ১১০’ (পেন)
বুকিং: ভেরেতু, টোলিসো, তাগলিয়াফিকো
লাল কার্ড: টোলিসো
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0