Logo

ফের সাভারে দিনে দুপুরে ২টি যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ডাকাতি, স্বর্ণালঙ্কার লুট

বারবার চলন্ত বাসে এমন ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ডাকাতির শিকার হওয়া সাভার পরিবহন

বাংলা ফ্লো প্রতিবেদক

ঢাকা: ফের দিনেদুপুরে যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফের ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে সাভারে। এক ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুটি চলন্ত বাসে ডাকাতি করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় কাউকে আঘাত না করলেও তারা অস্ত্রের মুখে লুট করেছে যাত্রীদের স্বর্ণের চেইন।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে সাভারের সিঅ্যান্ডবি ও ব্যাংকটাউন এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় সাভার পরিবহনের চালক মো. সজিবকে (৩০) আটক করা হয়েছে।

এদিকে বারবার চলন্ত বাসে এমন ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিন বেলা ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ব্যাংক টাউন এলাকা সংলগ্ন ব্রিজের ওপর ঢাকামুখী সাভার পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব ১৩-০৭০৬) একটি যাত্রীবাহী বাসে এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

এ সময় বাসটিতে থাকা তায়েফুর রহমান নামে সাভারের স্থানীয় একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকও ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।

সাংবাদিক তায়েফুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বেলা ১২টার দিকে শ্যামলী যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্ত্রী ও বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাংক টাউন থেকে বাসটিতে উঠি আমরা। ব্যাংক টাউন পার হয়ে পুলিশ টাউনের আগের ব্রিজের ওপর বাসটি ওঠতেই বাসে আগে থেকেই অবস্থান করা ৩ থেকে ৪ জন যুবক ছুরি হাতে বাসে থাকা নারী যাত্রীদের টার্গেট করে তাদের কাছ থাকা চেইন, স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় তারা আমার স্ত্রীর গলায় থাকা লকেটসহ একটি স্বর্ণের চেইনও ছিনিয়ে নেয়।

তিনি আরও জানান, বাসে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন যাত্রী ছিল। তবে ছিনতাইকারীরা কারও মোবাইল ফোন বা ডিভাইস নেয়নি। শুধু নারী যাত্রীদের টার্গেট করে তারা। ছিনতাইকারীরা বাসে থাকা অন্তত তিন জন নারী যাত্রীর কাছ থেকে চেইন ছিনিয়ে নিয়েছে।

যদিও তাৎক্ষনিকভাবে ছিনতাইয়ের বিষয়ে বাসটিতে থাকা অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তায়েফুর রহমান আরও জানান, পরবর্তী সময়ে বাসটি গাবতলীতে আসার পর যাত্রীরা বাসের চালককে একটি কাউন্টারে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। পরে তিনি সেখান থেকে চলে যান।

যদিও ছিনতাইকারীরা ঠিক কোন জায়গা থেকে বাসটিতে ওঠেছিল- সেটি খেয়াল করে দেখতে পারেননি তিনি। তবে ছিনতাইয়ের সময় ছিনতাইকারীরা বাসটিকে ব্রিজের ওপর দাঁড় করিয়ে ছিনতাই শেষে ওই ব্রিজের ওপরই নেমে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রেডিও কলোনি থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় সিএন্ডবির আগে রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে হঠাৎ তিনজন ছিনতাইকারী ওঠে। তিনজনের কাছেই ছুরি ছিল। একজন ড্রাইভারকে ছুরি দেখিয়ে বাস থামায়, বাকি দুজন যাত্রীদের ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখাতে থাকে। তাদের মুখ সম্পূর্ণ খোলা ছিল। আমার পাশে বসা নারীর গলা থেকে চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। পেছনে বসা আরেকজন নারীর গলার চেইনও নিয়ে পালিয়ে যায়। আমাদের জন্য দিনেও কোথাও যাওয়া নিরাপদ নয়।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনূর কবির বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে ঘটনা শুনলাম। আমাদের ওখানে কিন্তু সবগুলো লোকাল বাসে চেক চলছে। তারপরও কীভাবে এই ঘটনা ঘটল? ওই এলাকার সবজায়গায় রেট দিচ্ছি, ধরাও হচ্ছে। তারপরও কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না, বিষয়টা বোঝা যাচ্ছে না। এর মাঝে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না? আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি।

তিনি বলেন, বাস মালিকদেরও আমরা জানিয়েছি, ব্যাংকটাউন ওই জায়গায় বাস না থামিয়ে উলাইল কিংবা ফুলবাড়িয়ায় থামিয়ে যেন যাত্রী উঠানামা করায়।

এর আগে, ৪ এপ্রিল বিকেলে ঠিক একই জায়গায় যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি সাভারের মহাসড়ক ও চলন্ত বাসে ছিনতাই প্রতিরোধে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে, বিশেষ করে ব্যাংক টাউন এলাকাসহ ছিনতাইপ্রবণ যেসব এলাকা রয়েছে, সেসব স্থানে বিশেষ চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঢাকা জেলা পুলিশ।

মহাসড়ক ও চলন্ত বাসে ছিনতাই প্রতিরোধে ৫ এপ্রিল থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে এমন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহীনুর কবির।

পরবর্তী সময়ে সাভারের ব্যাংক টাউনসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেসব এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়কে চলাচলরত বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস, বিশেষ করে লোকাল বাসগুলো থামিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করছে সাভার মডেল থানা পুলিশ ও ঢাকা জেলা উত্তর ডিবি পুলিশের একাধিক টিম।

এ সময় বাসে উঠে যাত্রীদের কোনো ধরনের সমস্যা রয়েছে কিনা, সন্দেহজনক কিছু দেখছেন কিনা সেটি জিজ্ঞাসার পাশাপাশি যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সচেতনতামূলক নির্দেশনা দিতে দেখা যায় পুলিশ কর্মকর্তাদের।

পুলিশের চলমান এই চেকপোস্ট এবং তল্লাশি কার্যক্রমের মধ্যেই আবারও আজ দুইটি চলন্ত বাসে এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলো।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের একই জায়গায় ইতিহাস পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতরা দেশীয় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মূল্যবান মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বাসের এক ভুক্তভোগী যাত্রী সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

গত ২৪ মার্চ রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ব্যাংকটাউন ও রাজফুলবাড়িয়া এলাকার মাঝামাঝি জায়গায় শুভযাত্রা পরিবহনের বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার আগে গত ২ মার্চ একই এলাকায় রাজধানী পরিবহনের একটি বাসের অন্তত ২০-২৫ জন যাত্রীর মূল্যবান জিনিসপত্রসহ নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করে ডাকাতরা।

এ ছাড়া গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে একই এলাকায় বৈশাখী পরিবহনের একটি বাসে যাত্রীদের মারধর ও ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।

বাংলাফ্লো/এসবি

Related Posts বাংলাদেশ

Leave a Comment

Comments 0