শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র বিক্রিতে জড়িত পুলিশ কনস্টেবলসহ ৬ জন গ্রেপ্তার

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন চট্টগ্রামে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কনস্টেবল মো. রিয়াদ এবং তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম প্রতিনধি: গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন চট্টগ্রামে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কনস্টেবল মো. রিয়াদ এবং তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) নগরীর পতেঙ্গা থানার কাঠগড় ও বাকলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন পুলিশ কনস্টেবল মো. রিয়াদ, তার সহযোগী আবদুল গণি, আবু বক্কর, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও মো. ইসহাক। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও সাত রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। কনস্টেবল রিয়াদ চাঁদপুর জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। গ্রেপ্তারের পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে আবদুল গণি ও ফরহাদ হোসেনকে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালত। কনস্টেবল রিয়াদ, আবু বক্কর ও মোস্তাফিজুর রহমান থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র বেচাকেনায় জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলত জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া জবানবন্দি না দেওয়ায় গ্রেপ্তার ইসহাককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার হওয়া ছয় আসামিকে আদালতে হাজির করে পতেঙ্গা মডেল থানা পুলিশ। এর মধ্যে তিন জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দুজনকে তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে অন্য পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র পুলিশের বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানা থেকে এগুলো গত আগস্টে লুট হয়েছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, পতেঙ্গায় অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আফতাব হোসেন বাদী হয়ে পতেঙ্গা থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চাঁদপুর জেলায় কর্মরত কনস্টেবল রিয়াদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেসময় তিনি দীর্ঘদিন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তার সঙ্গে জড়িত চক্রের বাকি পাঁচ সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরের পতেঙ্গার কাঠগড় এলাকায় আসামি আবদুল গণির কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়।

গত তিন মার্চ রাতে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার এওচিয়া ইউনিয়নে ‌মাইকে ‌‘ডাকাত পড়েছে’ ঘোষণা দিয়ে নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক নামে দুই জামায়াত কর্মীকে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় নিহত নেজামের লাশের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ওই অস্ত্রটি আটক পুলিশ সদস্য রিয়াদ পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ শুরু হয়। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় তাকে আটক করে নগরীর কোতোয়ালি থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিএমপির একটি টিম। জিজ্ঞাসাবাদে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেন কনস্টেবল রিয়াদ। এরপর তাকে নিয়ে অভিযানে নামে কোতোয়ালি থানার একটি তদন্ত টিম।

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন নগরীর আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়ি লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। ওই সময় ৮১৩টি অস্ত্র এবং ৪৪ হাজার ৩২৪টি গুলি লুট হয়।

জেবি