বাংলাফ্লো স্পোর্টস ডেস্ক
ঢাকা: ইয়র্কারের গুণের অভাব নেই। ঝুঁকিও আছে! জায়গামতো বল না পড়লেই তা হয় ফুলটস, নয় হাফ ভলি। এই সময়ে এই দুটি ডেলিভারির একটি পেলেই বল গ্যালারিতে। আর ইয়র্কার সবাই নিখুঁতভাবে মারতেও পারেন না। বোলারের কৌশলের বিষয় তো আছেই।
তবে গতকাল আইপিএলে মিচেল স্টার্ক একাই করেছেন একের পর এক ইয়র্কার। শেষ ৩ ওভারের মধ্যে ১৭টিই ইয়র্কার করেছেন এই বাঁহাতি পেসার।হারের পথে থাকা দিল্লি ক্যাপিটালসকে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে জিতিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ান তারকা।
কাল স্টার্ক কী করেছেন
স্টার্ক ৪ ওভারে রান দিয়েছেন ৩৬। উইকেট নিয়েছেন ১টি। এই পরিসংখ্যান আসলে একেবারেই অর্থহীন। স্টার্ক গতকাল শেষ ওভারে দিল্লির হয়ে ৯ রান ডিফেন্ড করেছেন। এরপর সুপার ওভারেও আটকে রেখেছিলেন শিমরন হেটমায়ারদের।
শেষ ৩ ওভারে রাজস্থানের লাগত ৩১ রান। ক্রিজে ২৬ বলে ৫০ রানে অপরাজিত নীতিশ রানা ও ১০ বলে ১৩ রান করা ধ্রুব জুড়েল। মানে জয়ের কাছাকাছি রাজস্থান। এমন পরিস্থিতিতে ইয়র্কারের ওভার শুরু করেন স্টার্ক। স্টার্ক আসল জাদু দেখান ওভারের চতুর্থ বলে। ইনসুইং ইয়র্কারে এলবিডব্লু হন নীতিশ। ক্রিজে আসা হেটমায়ারকেও একই রকম ইয়র্কার সামলাতে হয়। সৌভাগ্যবশত ইনসাইড এজে চার হয়। সেই ওভার থেকে মোট রান আসে ৮।
শেষ ওভারে রাজস্থানের দরকার ৯ রান। স্ট্রাইকে হেটমায়ার, অন্য প্রান্তে জুড়েল। তাঁদের সামনে স্টার্ক একের পর এক ইয়র্কার করতে থাকেন। ছক্কা মারায় বিখ্যাত হেটমায়ার হাত খোলার সুযোগই পান না। ম্যাচ চলে যায় সুপার ওভারে। সুপার ওভারেও স্টার্ক প্রতিটি ডেলিভারি ইয়র্কার করার চেষ্টা করেন। মোটামুটি পারলেনও। নো বল করার পরও ওই ওভারে রান দিয়েছেন ১১। এভাবেই সুপার ওভারসহ শেষ ৩ ওভারে ১৭টি বল ইয়র্কারের চেষ্টা করেন এই পেসার।
স্টার্কের ইয়র্কারে থুতুর প্রভাব কতটুকু
স্টার্ক গতবারও আইপিএলে পুরো মৌসুম খেলেন। গতকালকের মতো ভয়ংকর ছিলেন না এক ম্যাচেও। স্টার্ক কীভাবে ডেথ ওভারে এতটা জ্বলে উঠলেন এই পেসার? অনেকেই বলছেন স্টার্কের ইয়র্কার মারার পেছনে থুতুর অবদান।
মূলত বল সুইং করতে সাহায্য করে বলে থুতু বা লালার ব্যবহার, বলের এক পাশে লালা ব্যবহার করে ঘষলে সেটা উজ্জ্বল হয় এবং বল রিভার্স সুইং করে। সেটাই কাজে লাগিয়ে রিভার্স সুইং ইয়র্কার মারার চেষ্টা করেছেন স্টার্ক।
ক্রিকেটাররাও সেটিই বলছেন। ম্যাচ শেষের পর সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটসম্যান নীতিশ রানা বলেছেন, ‘থুতু ব্যবহারের অনুমতি ফেরায় রিভার্স সুইং ফিরে এসেছে এবং স্টার্ক সেটি দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। আমরা গত ২-৩ বছরে থুতু ব্যবহার করিনি, এমনকি নেটেও রিভার্স সুইংয়ের বিপক্ষে ব্যাটিং করিনি। এখন কেউ যদি ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে ১২ বলের মধ্যে ১১টি ইয়র্কার করতে পারে, তাকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।’
দিল্লির অধিনায়ক প্যাটেলের মুখেও থুতুর প্রসঙ্গ উঠে আসে, ‘থুতু ব্যবহারের অনুমতি আছে, আর মাঠে ঘাসও কম—ফলে বল সহজেই পুরোনো হয়ে রিভার্স সুইং করে। তবে শুধু রিভার্স হলেই হবে না, সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করাটাই বড় বিষয়। সেই চাপের মুহূর্তেও স্টার্ক দারুণভাবে বল করেছে। আমি ওকে শুধু মনে করিয়ে দিচ্ছিলাম নিজের প্ল্যানে অটল থাকতে। সে শুধু বলছিল, “চিন্তা কোরো না।”’
স্টার্ক কী বলছেন
স্টার্ক অবশ্য থুতুতে কাজ হয়েছে বলে মনে করেন না। ম্যাচ শেষে স্টার স্পোর্টসকে বলেন, ‘আমি থুতু ব্যবহার করি না। এটা আমার কাছে একটা মিথ। কেউ কেউ ওটার ওপর বিশ্বাস রাখে, কেউ কেউ রাখে না। ঘাম আর থুতুর মধ্যে আমি তেমন পার্থক্য দেখি না। লাল বলের ক্ষেত্রে কিছুটা হতে পারে, কিন্তু সাদা বলে তেমন কিছু না।’
প্রতিপক্ষ রাজস্থানের পরিকল্পনাই কাজটা সহজ করে দিয়েছে বলে মনে করেন স্টার্ক। তাঁর করা ম্যাচের ১৮ ও ২০তম ওভারের ১২ বলের মধ্যে ৮ বলেই মুখোমুখি হন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানরা। ফলে তাঁর স্টক ডেলিভারি, অর্থাৎ ওভার দ্য উইকেট থেকে ইনসুইং ইয়র্কার, সহজেই কার্যকর হয়েছে।
সুপার ওভারে হেটমায়ারকে ওপেনার এবং তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বাঁহাতি জয়সওয়ালকে দেখে অবাক হন স্টার্ক, ‘আমার অ্যাঙ্গেল আর বলের সুইং মাথায় না রেখে ওরা যেভাবে বাঁহাতিদের পাঠিয়েছে, তাতে আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম।’
বাংলাফ্লো/এসএস
Comments 0