বাংলা ফ্লো স্পোর্টস
ঢাকা: চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ঘরের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদকে পাত্তাই দিলো না আর্সেনাল। ডেক্লান রাইসের ফ্রি কিক থেকে নেওয়া দুই গোল ও মিকেল মেরিনোর এক গোলে এমিরেটস স্টেডিয়ামে তারা রিয়াল মাদ্রিদকে হারালো ৩-০ গোলে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) এমিরেটস স্টেডিয়ামে এই দুই দলের খেলার দ্বিতীয়ার্ধেই আর্সেনাল প্রতিপক্ষের জালে তিনটি গোল জড়ায়।
খেলার প্রথমার্ধে অবশ্য দুই দলের লড়াই ছিল উপভোগ করার মতো। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দেখা যায় দুই ভিন্ন দলকে। একদিকে উজ্জীবীত আর্সেনাল আর অন্যদিকে বিবর্ণ রিয়াল মাদ্রিদ।
ফলাফল হিসেবে দ্বিতীয়ার্ধে আর্সেনালের একচ্ছত্র দাপটের সামনে রিয়াল মাদ্রিদ হয়ে পড়ল রীতিমতো অসহায়।
১৭ মিনিটের ঝড়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপাধারীদের জালে তিনবার বল পাঠাল গানাররা।
স্মরণীয় জয়ে প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে ওঠার পথে এগিয়ে গেল মিকেল আর্তেতার শিষ্যরা।
অবশ্য এই ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে থেকেই সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল।
বিশেষ করে ঘরের মাঠে আর্সেনাল কোচ মিকেল আর্তেতা নিজ দলের সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছিল— তোমাদের গলায় যেন আগুন থাকে!
ভক্তরা নিরাশ করে নাই।
আর ভক্তদের উৎসাহকে অনুপ্রেরণা বানিয়ে খেলার প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণ শুরু করে দ্যা গানার্স খ্যাত আর্সেনাল। বিশেষ করে বুকায়ো সাকাকে রুখতে হিমশিম খাচ্ছিল রিয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্স লাইন। রিয়াল মাদ্রিদের গোলরক্ষক থিয়াবো কোর্তোয়া রক্ষাকর্তা হয়ে নয়া উঠলে প্রথমার্ধেই অবশ্য গোলের দেখা পেতো আর্সেনাল।
রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচের প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় খেলার ২০তম মিনিটে। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের একক প্রচেষ্টা অবশ্য পোস্টের বাইরে দিয়েই চলে যায়।
খেলার ৫৮তম মিনিটে পুরো রিয়াল মাদ্রিদ দলকে প্রথম হতাশায় ভোগান ডেক্লান রাইসের একক নৈপূন্য যা দেখে বেলিংহ্যাম, এমবাপ্পেরা হা করে শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া অন্য কিছু করার ছিল নয়া।
তার নেওয়া বাঁকানো ফ্রি-কিক ঠেকাতে পারেননি রিয়ালের ওয়াল ও গোলকিপার থিবো কোর্তোয়ার কেউই।
কিন্তু তখনো আসলে বোঝা যায় এর পরে কি আসতে যাচ্ছে।
ম্যাচের ৭০তম মিনিটে আবারও ফ্রি-কিক পায় আর্সেনাল।
আবারও ফ্রি কিক থেকে শট নেয় ডেক্লান রাইস।
আর এবারও বল ঠিক জায়গায়—বারের ডান কোণে। পুরো স্টেডিয়াম তখন বিস্ময়ে বিমুগ্ধ। খোদ আর্সেনাল অধিনায়ক ওডেগার্ডও বিষ্ময়ের সঙ্গে তাকিয়ে ছিলেন।
দুই গোল হজমের পরেও অবশ্য থামে নি রিয়াল মাদ্রিদের দুর্ভাগ্য।
ম্যাচের ঠিক ৭৫ মিনিটে স্পেনিশ মিকেল মেরিনো যখন দুর্দান্ত শটে বল পাঠান নিচু কোণে তখন ডাগ আউটে থাকা মিকেল আর্তেতা তখন যেনো ভক্তদের সঙ্গে ভাসছিলেন এক ভিন্ন গ্রহে।
৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়লেও রিয়াল মাদ্রিদের পুরনো রূপে ফিরে আসা দেখাটা আর এই ম্যাচে সম্ভব হয় নি। উলটো ম্যাচের শেষ দিকে অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে (৯২ মিনিটে) দুই হলুদ কার্ডের কারণে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় কামাভিঙ্গাকে।
অবশ্য ১০ জনের দল নিয়ে বেশি সময় লড়তে হয় নি রিয়াল মাদ্রিদকে।
আজকের রাতটা আর্সেনাল ভক্তদের জন্য উপভোগের রাত। তবে মিকেল আর্তেতা জানেন এই ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালের পথে এক পা এগিয়ে গেলেও পরের লেগের ম্যাচ হবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে।
আর সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৯০ মিনিটের খেলা মানে সকল প্রতিপক্ষের জন্যেই বিশেষ কিছু।
রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তরা তাই বলে থাকে, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ৯০ মিনিটে মানে অনেক দীর্ঘ সময়।
সে যাই হোক না কেনো, আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়নকে ৩-০ গোলে হারানো কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়।
বিশেষ করে সেই আর্সেনাল দলের জন্য যারা টানা ছয় মৌসুম চ্যাম্পিয়নস লীগেই খেলার সুযোগ পায় নি। ২০২৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফেরার পরে সবশেষ দুই মৌসুম মিলিয়ে নিজেদের মাঠে ১১ ম্যাচ খেলে অপরাজিত রইল আর্সেনাল। এর মাঝে এমিরেটস স্টেডিয়ামে গানার্সরা জিতেছে নয়টি ম্যাচ ও বাকি দুটি ম্যাচ ড্র।
২০০৮-০৯ মৌসুমে শেষবার সেমিফাইনালে উঠেছিল আর্সেনাল।
এখন অপেক্ষার পালা সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে।
আর্সেনাল কি পারবে ১৫ বারের শিরোপা জয়ী রিয়াল মাদ্রিদকে রুখে দিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছাতে?
নাকি সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদ রচনা করবে নতুন কোনো কামব্যাকের গল্প?
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0