বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘বিএনপির ১ জন কর্মী বেঁচে থাকতে আপনাদের খায়েশ পূরণ হবে না’

আজ শুক্রবার (১৮ জুলাই) জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে মৌন মিছিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এ কথা বলেন।

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে আপনারা ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন এমন ইঙ্গিতমূলক প্রশ্ন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, আপনারা ভাবছেন, বিএনপি যদি না থাকে, আপনাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়ে যাবে!

তিনি বলেন, আরে ভাই, বিএনপির একজন নেতা-কর্মী বেঁচে থাকতে আপনাদের এই খায়েশ কখনো পূরণ হবে না।

আজ শুক্রবার (১৮ জুলাই) জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে মৌন মিছিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এ কথা বলেন।

পরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মৌন মিছিলটি শুরু হয়ে কাকরাইল, মৌচাক হয়ে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপির নেতা–কর্মীরা গত ১৭ বছর রাজপথে আন্দোলন করেছে—এই দেশের গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য। আজকে সেই সুযোগ নিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করছেন আপনারা। বিএনপির নেতা–কর্মীরা রাস্তায় আন্দোলনের, জেলখানায় জীবনের প্র্যাকটিস করেছে। আমরা নিজেরা জেলে থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, ‘বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই। জীবন ও যৌবনের অর্ধেক সময় রাজপথ ও জেলখানায় কাটিয়েছি আমরা। আমাদের ভয় দেখিয়ে কিছু হবে না। বিএনপির একজন নেতা-কর্মী বেঁচে থাকলেও আপনাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ পূরণ হবে না।’

এ সময় জুলাই শহীদদের নিয়ে একটি মহল ব্যবসা শুরু করেছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা যাঁরা শাহাদাতবরণ করেছেন, তাঁরা যদি আজ বেঁচে থাকতেন, কিংবা বুঝতে পারতেন—তাঁদের লাশ আর স্বজনদের নিয়ে যেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে—তাহলে তাঁরা কোনো অবস্থাতেই মার্জনা করতেন না।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কিছু হলেই তাঁরা বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদ! আরে ভাই, শহীদদের প্রতি সম্মান দেখান। তাঁরা কোনো একক ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেননি। তাঁরা সারা দেশের মানুষের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছেন।’

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘আমরা ৭০ বছর ধরে সংগ্রাম করেছি, যুদ্ধ করেছি, জেলে গিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনো প্রতিদান চাইনি। আজকে কিছু দল আছে, যারা শহীদদের বিক্রি করে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করছে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘তথাকথিত একজন পীর সাহেব বলেছিলেন, ‘‘জামায়াতের ছোঁয়া যেখানে লাগবে, সেই জায়গা পচে যাবে।’’ আর আজ তিনি জামায়াতের কোলে বসেছেন।’

তিনি বলেনে, ‘একসময় জামায়াতের নেতারা বিএনপির কাঁধে, আবার কখনো আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর দিয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। এখন তাঁরাই আমাদের শাহাদাতবরণকারী ভাইদের ব্যবহার করে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছেন।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপিকে অনেকে আওয়ামী লীগের কাতারে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। একদিন দেখলাম, এক তরুণ বলছে, গিনেস বুকে লেখা থাকবে—একটি দল কীভাবে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়! আমি বলব, ভাই, দয়া করে জিবে লাগাম দিন। এমন কিছু বলবেন না, যাতে মানুষের রক্তে আগুন ধরে যায়।’

এ সময় এনসিপির নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের নেতারা বিভিন্ন সময় নানা কথা বলছেন। আগে তো বলতেন না! ৫ আগস্টের পর থেকে হঠাৎ করে এত সাহস কোথা থেকে পেলেন? শক্তি পেলেন? সাহসী হোন, শক্তিশালী হোন—দোয়া করি। কিন্তু বিএনপির মতো একটি দেশপ্রেমিক দলের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাবেন না।’

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আপনারা পায়ে পা দিয়ে বিএনপির সঙ্গে ঝগড়া করবেন না। বিএনপি ঝগড়ার দল নয়। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল, যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে।’

সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আজকে সরকারকে বলছি—দয়া করে পক্ষপাতমূলক আচরণ বন্ধ করুন। এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে। একটি দলকে কোলে, অন্য দলকে কাঁখে তুলে রেখেছেন। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রোগ্রাম করবেন না। এই চিন্তা ভুলেও করবেন না।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি দ্রুত নিরপেক্ষ নির্বাচন দেন, তাহলে দেশের অশান্ত পরিস্থিতি শান্ত হবে। আর না দিলে আমরা ধরে নেব—দেশের অশান্তি দীর্ঘায়িত করে আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান।’

এ সময় তিনি জুলাই আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জন শহীদসহ জুলাই আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শহীদদের যে স্বপ্ন, তা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আয়োজিত এই কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল হক মজনু, সঞ্চালনা করেন সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিন। কেন্দ্রীয় নেতা মীর শরাফত আলী সপু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা হাবিবুর রশিদ হাবিব, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, আরিফা রুমা, নাদিয়া পাঠান পাপনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাফ্লো/এনআর

Leave a Comment

Comments 0