বাংলাফ্লো ডেস্ক
ঢাকা: কল্পনা করুন—এক শহর, যার প্রতিটি ইট, প্রতিটি প্রাসাদ, এমনকি পাথরের পথও ভাসছে পানির বুকে। অথচ সেটি কোনো স্বপ্ন নয়। এ যেন বাস্তবের মধ্যেই এক মায়াবী বিভ্রম—ভেনিস। ইতালির অন্যতম শহর, ইতিহাসের পাতায় রয়েছে এ শহরকে ঘিরে নানা কাহিনি।
খ্রিস্টাব্দ ৪২১। সমুদ্রের বুক চিরে কিছু সাহসী মানুষ আশ্রয় নিল নির্জন জলাভূমির মাঝে। সেখানে নেই কোনো পাহাড়, নেই পাথরের মাটি। কিন্তু ছিল অকল্পনীয় এক স্বপ্ন—সমুদ্রের বুকেই গড়ে তোলা হবে এক অনন্য নগরী। শুরু হলো এক নির্মাণ-যজ্ঞ, যার ভিত্তি গড়া হলো লাখ লাখ কাঠের খুঁটির ওপর।
এই খুঁটিগুলো এল্ডার ও ওকের গাছ থেকে সংগ্রহ করা, যেগুলো পুঁতে দেওয়া হয় সমুদ্রের গর্ভে। আজও, প্রায় ১৫০০ বছর পর, তারা দাঁড়িয়ে আছে—নিস্তব্ধ, অদৃশ্য, অথচ অটুট। পানির নিচে অক্সিজেনহীন পরিবেশে তারা পচে না বরং পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে, যেন তারা নিজেই হয়ে উঠেছে সমুদ্রের গোপন অভিভাবক।
ভেনিসের প্রতিটি ভবন যেন একেকটি ভাসমান দুর্গ, যা এক অদৃশ্য বনভূমির ওপর দাঁড়িয়ে। শুধু সেন্ট মার্কস ক্যাম্পানাইল তৈরি করতে লেগেছিল এক লক্ষ কাঠের খুঁটি। আর বিস্ময়কর বাসিলিকা ডেলা সালুতে! সেখানে সমুদ্রের তলদেশে শুয়ে আছে দশ লাখেরও বেশি কাঠের খুঁটি—জলজ এক কঙ্কালরাজি, যাদের কাঁধে ভর করে উঠে দাঁড়িয়েছে শিল্প, ধর্ম আর ইতিহাসের এক মহান কাব্য।
এই জলে ঢাকা কাঠের জঙ্গল, যার গভীরতা প্রায় তিন মিটার, কালের ধ্বংসরথকে রুখে দিয়ে আজও সমান দৃঢ়তায় ধরে রেখেছে ভেনিসকে। সেই প্রাচীন নির্মাণশিল্পীরা হয়তো জানতেন না, তারা কেবল একটি শহর নয়—একটি রহস্যময় কিংবদন্তি সৃষ্টি করছেন, যা আজও প্রতিদিন লক্ষ মানুষের হৃদয়ে বিস্ময় জাগায়।
ভেনিস কোনো সাধারণ শহর নয়। এটি এক জলজ প্রাসাদ, এক সলিল স্থাপত্যের মহাকাব্য—যার নিচে ঘুমিয়ে আছে একটি অদৃশ্য বন, এবং যার উপরে ভাসছে সময়ের ওপার থেকে আসা এক জাদুময় স্বপ্ন।
বাংলাফ্লো/আফি
Comments 0