শেখ সাদী খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: দক্ষিণ এশিয়ায় বাড়তে থাকা উত্তেজনার কেন্দ্রে এখন ভারত-পাকিস্তান। সীমান্তে প্রতিবেশী দুই দেশের গোলাগুলির ঘটনা, কূটনৈতিক বাকযুদ্ধ আর সামরিক মহড়ার পাল্টাপাল্টি বার্তা—সব মিলিয়ে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ছড়াচ্ছিল যুদ্ধ পরিস্থিতির উত্তেজনা। তবে মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাত থেকে দুই প্রতিবেশী দেশের হামলা ও পালটা হামলার ঘটনায় এখন যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কাও বাড়ছে,।
আর এই যুদ্ধের সম্ভাবনা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অস্বস্তির মেঘ জমেছে প্রতিবেশী বাংলাদেশেও।
বুধবার (৭ মে) পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে বাংলা ফ্লো’র সঙ্গে কথা বলেন একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা।
রাজনীতিবিদরা বলছেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুধু উপমহাদেশ বা এশিয়া মহাদেশই নয়, সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও ভূ-কৌশলগত ভারসাম্যে।
তারা বলছেন, যুদ্ধ কখনো হতে পারে না সমাধান। ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনা যদি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়, তবে উপমহাদেশে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে নানা ভাবে। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে এর প্রভাব দেখা যেতে পারে বিস্তৃত আকারে। বাংলাদেশ সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও, এর অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব পড়তে পারে ভয়াবহভাবে। আর তাই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ মানেই বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত।
এমন পরিস্থিতিতে সামগ্রিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেছেন দেশের রাজনীতিবিদরা।
কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা?
দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতিকে যুদ্ধ বলতে নারাজ।
তিনি বলছেন, এখনো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লেগেছে কিনা নিশ্চিত নই। তবে দুই দেশের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে যা আমরা গণমাধ্যমের সাহায্যে জেনেছি এবং শুনেছি ।
তিনি বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ হলে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে পাক-ভারত যুদ্ধ হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুব একটা বেশি প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন এই বিএনপি’র এই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ।
তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাক-ভারত যুদ্ধ কোন প্রভাব ফেলবে না। তাছাড়া আমরা যুদ্ধ চাই না বরং শান্তি চাই।
বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে তা এশিয়া মহাদেশের জন্য অবশ্যই অশনিসংকেত বলে ভাবছেন।
তবে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই যুদ্ধের তেমন প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করছেন।
তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে উপমহাদেশের দুই প্রভাবশালী দেশের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আমাদের দেশের রাজনীতিতে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। আগামীতেও পারবে বলেও মনে করিনা। কিন্তু আগামীর বিষয়টি আমরা সময়ের উপরেই ছেড়ে দিতে চাই।
এ দিকে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( বাংলাদেশ জাসদ) একাংশের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন,যুদ্ধ এই অঞ্চলের যেখানেই হোক না কেন তার একটা প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সব কিছুতেই যুদ্ধের একটা প্রভাব পড়ে।
আর তাই জাসদের পক্ষ থেকে প্রত্যাশা এবং মতামত থাকবে পাকিস্তান-ভারত যেন যুদ্ধটা না হয় — যোগ করেন নুরুল আম্বিয়া।
তিনি বলেন, যুদ্ধ কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনা ধ্বংস ছাড়া। আর তাই আমরা যুদ্ধকেই সমর্থন করিনা কোনো ভাবেই।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, পাক-ভারত যুদ্ধ শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বে এর একটা প্রভাব ফেলবে। এতে করে বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে না হলেও অর্থনৈতিকভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ভারত আমাদের অন্যতম প্রতিবেশী দেশ, পাকিস্তানও দূর প্রতিবেশী। দুটি দেশের সাথেই বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান। যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষতি আমাদের সবাইকে বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উনিও ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনা প্রশমনে বিশ্ব নেতাদের কাছে প্রস্তাব রাখলে সেটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। এই উদ্যোগ উনি নিবেন বলেও আমরা আশা করি।
সর্বশেষ, মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে পাকিস্তানের আওতাধীন কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের অন্তত পাঁচটি জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। পরবর্তীতে পালটা হামলা চালায় পাকিস্তানও। এমন পরিস্থিতি দুই প্রতিবেশী দেশের এই সামরিক উত্তেজনা শুধু তাদের সীমান্তে আটকে নেই—এর প্রভাব পড়তে পারে সারা বিশ্বেই।
ভারত-পাকিস্তানকে সংযত থাকার আহ্বান জানাল বাংলাদেশ
এমন পরিস্থিতিতে উপমহাদেশের ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান দু পক্ষকেই সংযত থাকার আহ্বানও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বুধবার (৭ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ভারত ও পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং উভয় দেশকে শান্ত থাকার, সংযত থাকার এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়।
এতে আরও বলা হয়, আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতার চেতনায়, বাংলাদেশ আশাবাদী যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত হবে এবং শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলের জনগণের কল্যাণে শান্তি বিরাজ করবে।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়। এর পর থেকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0