Logo

সাত কোটি পাঠ্যবই এখনো ছাপা হয়নি, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত

শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার ১ মাস ২১ দিন পরও দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সাত কোটি পাঠ্যবই ছাপা হয়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশিরভাগ বই এখনো ছাপাখানায় রয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি: শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার ১ মাস ২১ দিন পরও দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সাত কোটি পাঠ্যবই ছাপা হয়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশিরভাগ বই এখনো ছাপাখানায় রয়েছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই পৌঁছাতে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, যা তাদের পড়াশোনাকে ব্যাহত করছে।

এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মোট ৩৯ কোটি ৬০ লাখ বই ছাপানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে এখনো সাত কোটি বই ছাপা বাকি। মাধ্যমিক পর্যায়ে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) প্রায় ৩০ কোটি ৫০ লাখ বইয়ের চাহিদা রয়েছে, যার মধ্যে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৩ কোটি ৬৭ লাখ বই ছাপা হয়েছে। তবে সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ১৮ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার বই। অর্থাৎ, মাধ্যমিক স্তরে এখনো ১১ কোটি ৭৫ লাখ বই সরবরাহ করা বাকি।

প্রাথমিক স্তরে মোট ৯ কোটি ১৯ লাখ বইয়ের মধ্যে ৮ কোটি ৯৬ লাখ ৪৪ হাজার বই ছাপা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৬১ হাজার বই সরবরাহের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো প্রায় ৫৪ লাখ বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়নি, যা মোট বইয়ের প্রায় ৬ শতাংশ।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, তাঁরা ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বই সরবরাহ করার চেষ্টা করছেন। তবে যেসব বইয়ের পরীক্ষা হয় না, সেগুলো অতিরিক্ত চাহিদার কারণে এখনো বাকি রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পরীক্ষার বইগুলো এ মাসেই সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক স্তরের বই মোটামুটি পাওয়া গেছে। তবে মাধ্যমিক স্তরে, বিশেষ করে নবম শ্রেণির বইয়ের ঘাটতি প্রকট। নেত্রকোনা শহরের আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর হায়দার ফকির জানান, নবম শ্রেণির কৃষিশিক্ষা, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, পৌরনীতি ও সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ের ঘাটতি রয়েছে।

এছাড়া, অনেক স্কুলে শিক্ষকেরা এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে বইয়ের পিডিএফ সংস্করণ ডাউনলোড করে পড়াচ্ছেন। তবে সব শিক্ষার্থীর হাতে পিডিএফ সংস্করণ না থাকায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা তেমন হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে এই সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।

এনসিটিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তাঁরা প্রথমে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এরপর দশম শ্রেণির বই ছাপার কাজে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এখন নবম শ্রেণিসহ মাধ্যমিকের অন্যান্য শ্রেণির অবশিষ্ট বই ছাপায় জোর দেওয়া হচ্ছে।

বই ছাপার কাজে জড়িত এক মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক জানান, কাগজের সংকট এবং অন্যান্য লজিস্টিক সমস্যার কারণে সব বই পেতে মার্চের অনেকটা সময় লাগতে পারে। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, পাঠ্যবই পরিমার্জন, দরপত্র, অনুমোদন ও চুক্তি প্রক্রিয়ায় দেরি এবং কাগজের সংকটের কারণে বই ছাপার কাজে বিলম্ব হচ্ছে।

Related Posts শিক্ষা