Logo

রাজধানীর জন্য কতটা কার্যকরি হবে‘এয়ার পিউরিফায়ার’?

বায়ুমানের সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে গত ২২ এপ্রিল কিছু তথ্য প্রকাশ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র

বাংলাফ্লো প্রতিনিধি 

ঢাকা: বায়ুমানের সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে গত ২২ এপ্রিল কিছু তথ্য প্রকাশ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। কেন্দ্র জানায়, রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষ গত ৯ বছরে (৩ হাজার ১১৪ দিনের হিসাব) মাত্র ৩১ দিন নির্মল বাতাসে শ্বাস নিতে পেরেছেন।

এ সময়ে ৮৫৩ দিনের বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর। আর খুব অস্বাস্থ্যকর ও দুর্যোগপূর্ণ ছিল যথাক্রমে ৬৩৫ দিন ও ৯৩ দিন। ক্যাপস জানায়, দেশে প্রতিবছরই বায়ুদূষণ আগের চেয়ে বাড়ছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৪’ বলছে, বায়ুদূষণে ওই বছর দেশ হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর নগর হিসেবে তৃতীয় স্থানে ছিল ঢাকা।

আমরা একটি পাইলট প্রকল্প করে দেখতে চাই, ফলাফল কী আসে। এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসব। যদি ইতিবাচক না হয়, আমরা ভিন্ন উদ্ভাবনের দিকে যাব।

মোহাম্মদ এজাজ, ডিএনসিসির প্রশাসক

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন

বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা গবেষকেরা বলছেন, ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এ ধরনের পিউরিফায়ার স্থাপন করে সামগ্রিক বায়ুমানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আনা কঠিন। বায়ুদূষণ রোধে স্বীকৃত উপায়গুলোর মধ্যে এয়ার পিউরিফায়ার নেই। এটি ছোট পরিসরে সাময়িক স্বস্তি পেতে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো যেতে পারে।

দূষণ ঠেকাতে এয়ার পিউরিফায়ার স্থাপন কার্যকর পদক্ষেপ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বায়ুদূষণবিষয়ক গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় দেশগুলোও এয়ার পিউরিফায়ার স্থাপনের মতো ব্যয়বহুল প্রকল্প নিয়ে খুব একটা সফল হতে পারেনি। হয়তো প্রাথমিকভাবে বেসরকারি কোম্পানি ব্যয় বহন করছে, তবে একটা সময় আমাদের এগুলো কিনতে হবে। সেদিকে না গিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে দূষণের উৎস খুঁজে বের করে সেগুলো বন্ধ করতে।’

একই কথা বলেন বেসরকারি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘মাঠপর্যায়ে এখনো এয়ার পিউরিফায়ার টেকসই সমাধান নয়। কিছু জনপরিসরে এটি পরীক্ষামূলক একটি পদক্ষেপ হতে পারে। তবে বড় সমস্যা সমাধানের পথ নয়।’

অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, দেশের অর্থসামাজিক ও পরিবেশগত দিক বিবেচনায় এয়ার পিউরিফায়ার এখনো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট। যে দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বাতাস সেবন করছে, সে দেশে এয়ার পিউরিফায়ারকে আলাদা করে প্রমোট (উৎসাহিত) করার বিষয়টি ন্যায্যতার ঘাটতি ও বৈষম্যও বটে।

‘তবে নগর প্রশাসন বায়ুদূষণ নিয়ে ভাবছে, সমাধানের পথ খুঁজছে, বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছি।

বিশ্বে বিভিন্ন শহরে বড় আকারের এয়ার পিউরিফায়ার স্থাপন করে দেখা গেছে, এগুলোর প্রভাব মূলত স্থানীয় পর্যায়ের ও সীমিত। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে দিল্লির কনট প্লেসে স্থাপন করা হয় ২৪ মিটার উচ্চতার একটি স্মগ টাওয়ার। এটি ৫০ মিটারের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বায়ুদূষণ কমাতে সক্ষম হলেও ৩০০ মিটারের বাইরে এর প্রভাব ছিল না বললেই চলে।

২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর এনডিটিভির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দিল্লির পরীক্ষামূলক স্মগ টাওয়ার বায়ুদূষণ হ্রাসে কার্যকর নয় বলে মত দেয় দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি। একই সঙ্গে ব্যয়বহুল বিশাল এয়ার পিউরিফায়ার চালানোর যৌক্তিকতা নেই বলেও দেশটির জাতীয় পরিবেশ আদালতকে জানায় সংস্থাটি।

এনডিটিভির খবর অনুযায়ী, সে সময় সংস্থাটি জোর দিয়ে বলেছে, স্মগ টাওয়ার বায়ুদূষণ সমস্যার কোনো বাস্তবসম্মত সমাধান নয়।

বড় দেশগুলোও এয়ার পিউরিফায়ার স্থাপনের মতো ব্যয়বহুল প্রকল্প নিয়ে খুব একটা সফল হতে পারেনি। হয়তো প্রাথমিকভাবে বেসরকারি কোম্পানি ব্যয় বহন করছে, তবে একটা সময় আমাদের এগুলো কিনতে হবে। সেদিকে না গিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে দূষণের উৎস খুঁজে বের করে সেগুলো বন্ধ করতে।

টেকসই সমাধান কী

এত আলোচনার পরও বায়ুদূষণ বন্ধ হয় না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘সমাধান আসে না। কারণ, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কথা বেশি বলি, কিন্তু কাজ করি কম। বায়ুদূষণ না কমার কারণ এটাই। শীতকালে যখন দূষণ বেড়ে যায়, তখন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করা হয়, টাস্কফোর্স করা হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো আর নেওয়া হয় না।’

বায়ুদূষণ মোকাবিলায় মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরামর্শ দেন এই গবেষক। কার্যকর সমাধানগুলোর মধ্যে রয়েছে—পুরোনো ও কালো ধোঁয়া ছাড়ানো যানবাহন নিয়ন্ত্রণ; নির্মাণস্থলে ধুলা নিয়ন্ত্রণে কঠোর নিয়ম প্রয়োগ; অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা; সবুজায়ন ও নগর–পরিকল্পনায় পরিবেশবান্ধব নীতিমালা গ্রহণ এবং বায়ুর গুণমান মনিটরিং স্টেশন স্থাপন করে দূষণের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ।

বাংলাফ্লো/এসকে

Related Posts বাংলাদেশ

Leave a Comment

Comments 0