বাংলাফ্লো প্রতিনিধি

ঢাকা: দেশের ওষুধ শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে দাম সমন্বয় করা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) ট্রেজারার ও হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান।

তিনি বলেন, চাল, ডাল, তেল, রিকশা ভাড়া— সবকিছুর দাম বাড়ছে। ওষুধ তো কোনো ভিন্ন জগতে তৈরি হয় না। কাঁচামাল, পরিবহন, কর, গবেষণা ও উন্নয়নসহ প্রতিটি পর্যায়ে খরচ বাড়ছে। অথচ দাম আগের মতোই থাকছে। এই খাতে যদি দ্রুত মূল্য সমন্বয় করা না হয়, তাহলে ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়ে যাবে।

সোমবার (২১ এপ্রিল) ‘জার্নি অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ আয়োজনে কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়।

মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রমোশনাল খরচ নিয়ে বাজারে নানা ধরনের সমালোচনা থাকলেও এসবের যৌক্তিক ভিত্তি নেই।

তিনি বলেন, প্রমোশন ছাড়া তো আমাদের ওষুধ বিক্রির আর কোনো মাধ্যম নেই। চিকিৎসকদের কাছে নতুন ওষুধ ও সংশ্লিষ্ট তথ্য পৌঁছে দিতে হয়। অনেকে বলে কোম্পানিগুলো নাকি প্রমোশনে ৩০ শতাংশ খরচ করে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। স্কয়ার, বেক্সিমকো, রেনেটা— এসব কোম্পানি পাবলিক লিমিটেড, তাদের হিসাবপত্র উন্মুক্ত। প্রকৃত চিত্র সেখানে খুঁজলেই মিলবে। সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ শতাংশের বেশি কারও পক্ষেই খরচ করা সম্ভব হয় না।

তিনি আরও বলেন, একই ধরনের ওষুধ হলেও ‘লেভেল অব সেফটি’ নিশ্চিত করতে বাড়তি খরচ হয়। বিশেষ করে যদি কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ অনুমোদন নিতে চায়, তবে ডাটা সেফটি, ইন্টিগ্রিটি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়।

বাপি’র ট্রেজারার বলেন, এখনও আমাদের প্যারাসিটামলের মতো সাধারণ ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। একটা কাঁচামাল দেশীয়ভাবে তৈরি করতে ১০০ টাকা লাগে, আর বিদেশ থেকে ৮০ টাকায় আনা যায়— তাহলে শিল্প মালিকরা কী করবে?

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে হালিমুজ্জামান বলেন, ওষুধ প্রশাসন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসরণ করে। তবে কেউ কেউ তার চেয়েও উচ্চমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইলে খরচ স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে।

এসময় বাপি’র জেনারেল সেক্রেটারি ডা. জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প গত এক দশকে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে যেখানে ওষুধ রফতানি ছিল মাত্র ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। বর্তমানে বাংলাদেশ ১৫১টি দেশে ওষুধ রফতানি করছে। এমনকি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এ রফতানির পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

কর্মশালার শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি। তিনি ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।

এসময় এসিআই হেলথ কেয়ারের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম. মহিবুজ্জামান বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হাসান সোহেল।

বাংলাফ্লো/এসবি