বাংলাফ্লো ডেস্ক
ঢাকা: রাত থম থম স্তব্ধ, ঘোর-ঘোর-আন্ধার,
নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,
করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।
শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,
তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।
পল্লী জননী - জসীমউদ্দীন
আমাদের দেহে প্রাণের সঞ্চার থেকে শুরু করে পৃথিবীর বুকে বেড়ে ওঠা, ছুটে চলার পুরোটাই মায়ের অবদান। সব সন্তানই মাকে ভালবাসে কিন্তু ব্যাস্ত জীবনে কখনো মাকে বলা হয়ে ওঠে না “ভালবাসি মা”।
এই না বলা কথাটুকু বলার জন্য একদম ঠিকঠাক দিন আজ। আজ বিশ্ব মা দিবস। যদিও এই দিনটির নেপথ্যে আছে এক দারুন ইতিহাস।
মা দিবস পালনের প্রচলন শুরু হয় মূলত যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামের এক নারীর হাত ধরে। ১৮৭০ সালে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় শান্তির প্রত্যাশায় জুলিয়া একটি ঘোষণাপত্র লেখেন। এটি মাদারস ডে প্রোক্লেমেশন নামে পরিচিত ছিল। এ ঘোষণার মধ্যে জুলিয়া রাজনৈতিক স্তরে সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য রাখেন।
এরপর যুদ্ধ শেষে পরিবারহীন অনাথদের সেবায় ও একত্রীকরণে নিয়োজিত হন মার্কিন সমাজকর্মী অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ও তার মেয়ে আনা মেরি জার্ভিস। এ সময় তারা জুলিয়া ওয়ার্ড ঘোষিত মা দিবস পালন করতে শুরু করেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আনা রিভিজ জার্ভিস ১৯০৫ সালের ৫ মে মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন।
১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে হার মানেননি আনা। তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে। অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।
মা দিবসে সব সন্তানই চায় মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে। মায়ের প্রতি অগাধ ভালবাসার কথা মাকে জানাতে। কিন্তু কিভাবে প্রকাশ করবে তা বুঝে উঠতে পারে না।
চলুন জেনে নেই মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রকাশের কিছু সহজ উপায়-
১। মাকে জড়িয়ে ধরুন। মায়ের সাথে সন্তানের নাড়ির বাঁধন তাই সন্তানের স্পর্শ তাকে স্পেশাল ফিল করায়।
২। মায়ের কাজে সাহায্য করুন। এটি অন্যতম একটি লাভ ল্যাঙ্গুয়েজ। যেকোনো মানুষের ক্ষেত্রেই তার কাজে সাহায্য করার মাধ্যমে আপনি তাকে ভালবাসা অনুভব করাতে পারেন।
৩। মায়ের প্রশংসা করুন। মায়ের সৌন্দর্য, তার রান্না অথবা আপনার সফলতার পিছনে তার অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে প্রশংসা করুন।
৪। মাকে উপহার দিন। এতে খুব বেশি খরচ করতে হবে না আপনাকে। দামি উপহার দিতে নাই পারলেন। একটা ফুলের তোড়া, হাতে তৈরি সুভেচ্ছা কার্ড, মায়ের পছন্দের কোন খাবার কিনে আনা বা তৈরি করেও উপহার দিতে পারেন। তাও না পারলে, আশেপাশে কোথাও থেকে কিছু জংলি ফুল কুড়িয়ে এনে দিলেও খুশি হবেন তিনি। আফটারঅল মা তো!
৫। মায়ের সাথে সময় কাটান। আমরা সবাই পড়াশুনা আর ক্যারিয়ার নিয়ে এতোই ব্যাস্ত থাকি যে মাকে সময় দেয়া হয়ে ওঠে না। সন্তান বড় হয়ে গেলে মায়েরা একাকিত্বে ভোগেন। মাঝে মধ্যে ভাবেন- আমার বাবুটা কেন এতো বড় হয়ে গেল? আপনার মা আপনার ছোটবেলা মিস করে। তাই আজকের দিনে ফিরে যান সেই ছোটবেলায়। মায়ের সাথে গল্প করুন, তার জমে থাকা কথাগুলো শুনুন। মাকে ফিল করান যে, আপনি পুরো পৃথিবীর কাছে বড় হয়ে গেলেও মায়ের সেই ছোট্ট খোকাই আছেন এখনো, একটুও বদলে যান নি।
নিজে না খেয়ে সন্তানের মুখে ভালো খাবারটি তুলে দেয়া কিংবা অসুখের সময় মাথার কাছে বসে সারারাত জেগে সেবা করা মানুষটিই মা। ১০ মাস পেটে ধরে মৃত্যুসম যন্ত্রণা সহ্য করে পৃথিবীর আলো দেখানো আর এই নিষ্ঠূর পৃথিবীর সব বিপদ থেকে আগলে রাখা মানুষটি মা। জীবনের চরম শঙ্কটের সময় পুরো পৃথিবী পর হয়ে গেলেও যেই মানুষটিকে পাশে পাওয়া যায় সেই হল মা। মাকে ভালবাসার জন্য দিবস দরকার হয় না। তবু দিনটাকে একটু স্পেশাল করে যদি মায়ের মুখে একটু হাসি ফোটানো যায় তাতে ক্ষতি কি? বিশ্ব মা দিবসে পৃথিবীর সকল মাকে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা আর ভালবাসা।
বাংলাফ্লো/আফি
Comments 0