বাংলাফ্লো প্রতিনিধি
ঢাকা: রাত পোহালেই বাংলা নববর্ষ-১৪৩২। এবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শোভাযাত্রার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তৈরি করা ফ্যাসিবাদবিরোধী ও শান্তির প্রতীক মোটিফ পুড়িয়ে ফেলার পর তা আবারও তৈরি করা হয়েছে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায় শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিকৃতি তৈরির কাজে।
ককশিট ও অন্যান্য হালকা উপকরণে দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। পুরো প্রাঙ্গণজুড়ে যেন একটা লড়াকু মনোভাব—শুধু শিল্প নয়, প্রতিবাদের ভাষাও।
শোভাযাত্রার মূল মোটিফ হিসেবে ‘স্বৈরাচারের প্রতিকৃতি’ রাখার কথা থাকলেও, শেষ মুহূর্তে দুষ্কৃতকারীরা আগুন দিয়ে সেটি পুড়িয়ে দেয়। তবে চারুকলার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দমে না গিয়ে নতুন উদ্যমে আবার কাজ শুরু করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান জানান, এই প্রতিকৃতি শুধু একটি শিল্পকর্ম নয়—এটি একটি প্রতীক, যা অন্যায় ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অবস্থানের বার্তা দেয়।
তিনি বলেন, আমরা একটি বড় দায়িত্ব পালন করছি। বাধা এসেছে, ষড়যন্ত্রও হয়েছে। তবে আমরা মানবিক শক্তি, শ্রম ও আস্থাকে হাতিয়ার করেই এগিয়ে যাব। এই উদ্যোগে সবার সহযোগিতা চাই।
এর আগে, শনিবার (১২ এপ্রিল) রাতে তিনি চারুকলার প্রাঙ্গণে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন উপাচার্য।
তিনি বলেন, আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সেখানে বাধা এসেছে। এ ধরনের কাজে বাধা আসেই, ষড়যন্ত্র থাকে। তবে মানুষের পরিশ্রম আর আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাবো, শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে। এ কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা এখন একটি জাতীয় দায়িত্ব পালন করছি এবং চাই সবাই আমাদের পাশে থাকুক।
চারুকলায় ইতোমধ্যেই প্রতিকৃতিটি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ পৌঁছে গেছে। শিল্পীরা দ্রুততম সময়ে কাঙ্ক্ষিত মোটিফটি তৈরি করার চেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন। ককশিট দিয়ে প্রতিকৃতি গড়ে তোলা সম্ভব কি-না, সে বিষয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, এক মাস ধরে তৈরি করা প্রতিকৃতি তো একদিনে বানানো সম্ভব নয়। তবে শিল্পীরা কীভাবে, কতটা করতে পারেন, তা সময়ই বলে দেবে। আমরা বিষয়টি সম্পূর্ণ শিল্পীদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। তারা দফায় দফায় বসছেন, পরিকল্পনা করছেন। তারাই সবচেয়ে ভালো জানেন কী করবেন।
এর আগে রাত সাড়ে ৯টার দিকে চারুকলায় শোভাযাত্রার অগ্রগতি দেখতে আসেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি বলেন, এই আয়োজনে যারা জড়িত, তাদের সবাইকে স্যালুট জানাই। গত এক মাস তারা নিরলসভাবে কাজ করেছে। ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ ধ্বংস করে শিল্পীদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করা হলেও আমি এসে দেখেছি—তাদের স্পিরিট দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আশা করছি, দেশবাসী এক অসাধারণ শোভাযাত্রা প্রত্যক্ষ করবে। সবাইকে আহ্বান জানাই, এই আয়োজনে অংশ নিতে।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ থেকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য তৈরি করা ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে যায়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাফ্লো/এসবি
Comments 0