Logo

দুই মুখ নিয়ে জন্মানো এডওয়ার্ড মর্দ্রেক: মিথ নাকি বাস্তবতা?

মুখটি নাকি কান্না করত, হাসত, আর গভীর রাতে ফিসফিস করে কথা বলে এডওয়ার্ডকে নির্ঘুম রাখত।

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাফ্লো ডেস্ক

ঢাকা: মানব ইতিহাসে এমন অনেক গল্প ছড়িয়ে রয়েছে, যেগুলো বাস্তবতা ও কল্পনার সীমানা মুছে দেয়। তেমনই এক রহস্যের নাম—এডওয়ার্ড মর্দ্রেক। বলা হয়, এই ব্যক্তির মাথার পেছনে ছিল আরেকটি মুখ—নিশ্চুপ, কিন্তু জীবন্ত। মুখটি নাকি কান্না করত, হাসত, আর গভীর রাতে ফিসফিস করে কথা বলে এডওয়ার্ডকে নির্ঘুম রাখত। প্রশ্ন হচ্ছে—এটা কি শুধুই এক ভয়ের গল্প, নাকি সত্যের ছায়া লুকিয়ে আছে এর পেছনে?

১৮৯৫ সালে Boston Post পত্রিকায় প্রথম উঠে আসে এডওয়ার্ড মর্দ্রেকের নাম, একটি প্রবন্ধে। সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয় চিকিৎসক থমাস হ্যাল বার্জার ও জর্জ এম. গাউল্ড রচিত “Anomalies and Curiosities of Medicine” বইটিকে। সেখানে বলা হয়, এডওয়ার্ড ছিলেন এক ব্রিটিশ অভিজাত, যার মাথার পেছনে ছিল একটি বিকৃত মুখ। যদিও সেই মুখ কথা বলত না বা কিছু খেত না, তবে নাকি তা ছিল অনুভূতিপ্রবণ—হাসি, কান্না, এমনকি এডওয়ার্ডের সাথে “মানসিক” যোগাযোগও করত।

বলা হয়, এই মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এডওয়ার্ড শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন একটি বিরল জেনেটিক ত্রুটির নাম ডিপ্রোসোপাস (Diprosopus), যেখানে ভ্রূণের মুখমণ্ডলের গঠন বিভ্রান্তিকরভাবে দ্বিগুণ হয়ে যায়। তবে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সচরাচর দীর্ঘজীবী হন না এবং অতিরিক্ত মুখ সাধারণত সচল বা \সচেতন\ হয় না।

এডওয়ার্ড মর্দ্রেকের অতিরিক্ত মুখকে ঘিরে যে চেতনাসম্পন্ন কার্যকলাপের বর্ণনা পাওয়া যায় (যেমন—ফিসফিস করে কথা বলা), তা একেবারেই অবৈজ্ঞানিক এবং এর কোনো প্রমাণিক ভিত্তি নেই। চিকিৎসা জগতে এমন কোনো ঘটনার সত্যতা আজও প্রমাণিত হয়নি।

মানুষের শরীরের অস্বাভাবিকতা নিয়ে কাহিনিগুলো সবসময়ই মনোযোগ আকর্ষণ করে, বিশেষত যদি সেটি মিশে যায় হররের উপাদানে। এডওয়ার্ড মর্দ্রেকের গল্পটি জনপ্রিয় হয়েছে “বডি হরর” ঘরানার অন্যতম রহস্য হিসেবে। আধুনিক সময়ে ইন্টারনেট, ইউটিউব এবং টিভি শোগুলো এই কাহিনীকে আরও চিত্তাকর্ষক করে উপস্থাপন করেছে।

বিশেষ করে হররপ্রেমীদের কাছে এটি পরিণত হয়েছে এক ক্রিপিপাস্তা কিংবদন্তিতে।

আজকের বিজ্ঞান ও ইতিহাসের আলোকে বিচার করলে, এডওয়ার্ড মর্দ্রেকের গল্পটি নিঃসন্দেহে একটি কল্পনাপ্রসূত কিংবদন্তি। তবে এই কাহিনী প্রমাণ করে, মানুষের কল্পনা কতটা শক্তিশালী, এবং ভয়ের প্রতি আমাদের আকর্ষণ কতটা গভীর।

এডওয়ার্ড মর্দ্রেক—তিনি হয়তো বাস্তবে ছিলেন না। কিন্তু তার গল্প, আজও অন্ধকার ঘরের এক কোণে নিঃশব্দে ফিসফিস করে চলে।

বাংলাফ্লো/আফি

Related Posts শিক্ষা

Leave a Comment

Comments 0