বিশেষ প্রতিনিধি: বছরের শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দাবি ওঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছাত্রসংগঠন নির্বাচনের ব্যাপারে একমত হলেও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে তাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ ও ছাত্রশিবিরসহ কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের দাবি, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন দিতে হবে। রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য তারা সময় বেঁধে দিয়ে এরইমধ্যে দুই দফায় আল্টিমেটামও দিয়েছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশও। আর ছাত্রদল, ছাত্র ফেডারেশনেসহ অন্য কয়েকটি ছাত্রসংগঠন বলছে, নির্বাচন দিতে হবে। তবে তার আগে ডাকসুর বর্তমান ‘অগণতান্ত্রিক’ গঠনতন্ত্র সংস্কার করে তারপর নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে গত ১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেয় স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ, ছাত্রশিবিরসহ চারটি ছাত্র সংগঠন। সেদিন তারা এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ‘দুই কার্যদিবস’ সময়ও বেঁধে দেন। পরের দিন সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা চলাকালে বাইরে একই দাবিতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীদের একটি দল স্লোগান দিতে থাকে। অপরদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে এখনই ডাকসু না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সামনে শুরুতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবং পরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেটে আওয়ামীপন্থিদের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে এবং দ্রুত ডাকসু নিশ্চিতের দাবিতে স্লোগান দেয়। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও সিন্ডিকেটে আওয়ামীপন্থিদের রাখা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সিনেটের সামনে আসেন। ডাকসু নিয়ে সিন্ডিকেটে যেন কোনও আলোচনা না হয়, সে বিষয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় সূর্য সেন হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক আবিদুর রহমান মিশু উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রদল এখনও রাজনীতি শুরুই করতে পারেনি। সেদিন একদিকে কিছু শিক্ষার্থী ডাকসু চেয়ে স্লোগান দেয়। অন্যদিকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এখনই ডাকসুর বিষয়ে আলোচনা না করার দাবি তোলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান সিন্ডিকেটে আওয়ামীপন্থিদের প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজকের সিন্ডিকেটে আওয়ামীপন্থিদের রাখা হয়নি। নিয়ম মেনে সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামীপন্থিদের অনেককেই বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অগ্রগতির জন্য সিন্ডিকেট সভা করতে হচ্ছে বলে তিনি শিক্ষার্থীদের সহায়তা কামনা করেন। শাখা সভাপতি সাহস চন্দ্র রায় গণেশ ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভাকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সিন্ডিকেট সদস্যদের অংশগ্রহণ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ জানানোর পর থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নানান প্রোফাইল, পেজ ও গ্রুপে বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও মনগড়া তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে বলে পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও মনগড়া সংবাদ প্রচারের বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ডাকসু বিষয়ে ছাত্রদলের অবস্থান নিয়ে কাউকে বিভ্রান্ত না হতে এবং সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সঠিক তথ্য যাচাই করে প্রচার করতে আহ্বান জানাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের আহ্বায়ক সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা চাই, অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু বন্ধ থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছিল। বর্তমানে ডাকসুর গঠনতান্ত্রিক যে কাঠামো, সেটিকে ‘মোটেই গণতান্ত্রিক নয়’ বলে মনে করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ‘এই কাঠামোর মধ্যে নির্বাচন হলে প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্র মাথাচাড়া দেবে। তাই গঠনতন্ত্রের সংস্কার হওয়া জরুরি। সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে কার্যকর আলাপ-আলোচনা শুরু করা দরকার। তারপর আসবে ডাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার কথা। ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, ‘আমরা গণঅভ্যুত্থান করেছি গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার লক্ষ্যে। আর সেজন্য প্রয়োজন আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার, তারপর নির্বাচন। দেশ সংস্কারের কথা বললে আগে আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার। সেখানে ছাত্র সংসদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানে আমাদের বিদ্যমান ডাকসুর গঠনতন্ত্রও সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে।’